তফসিলের আগেই আইন ভঙ্গের মহড়া
আইন থাকলেও তা মানছেন না ঢাকা সিটি করপোরেশন- ডিসিসি (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচনের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে তারা দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ অমান্য করতে শুরু করেছেন। প্রার্থীদের সাঁটানো এবং টাঙানো পোস্টার-ফেস্টুনে এ চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। দেয়াললিখন তেমন দৃশ্যমান না হলেও পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন ভবনের দেয়াল। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের এই চিত্র তুলে ধরা হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা বিধানে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২’ পাস করা হয়। ২০১২ সালে এ আইনটি পাস হলেও এ অবধি ‘কাগুজে আইন’ হয়েই আছে। ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন। নির্বাচনের আগেই নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিতে আইন অমান্য করে যেখানে-সেখানে পোস্টার-ফেস্টুন লাগাচ্ছেন তারা। তাতে নির্বাচনের কথা সরাসরি না বললেও হঠাৎ করে নগরবাসীর প্রতি তাদের শুভেচ্ছাবার্তা উপচে পড়ছে।
এ ধরনের তৎপরতাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, কারো বিরুদ্ধে এ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেলে, মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ অনুযায়ী বিচার করা হবে। সুবিধাভোগীর ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেলে ফৌজদারি বিধি, ১৮৯৮ অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার হবে। আইন লঙ্ঘনকারী কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ অপরাধ সংঘটন করেছে বলে ধরা হবে।
আইনে আরো বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেয়াললিখন বা পোস্টার সাঁটানোর জন্য প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা স্থান নির্ধারণ করে দিতে পারবে। নির্ধারিত স্থানে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো যাবে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে নির্ধারিত স্থানের বাইরে বিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে এবং ফি দিয়ে দেয়াললিখন বা পোস্টার সাঁটানো যাবে। আইনটির ৩ ও ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী সরকার-নির্ধারিত স্থান ছাড়া দেয়ালে লিখলে কিংবা পোস্টার লাগালে সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
কোনো ব্যক্তি ওই ধারা অনুযায়ী অপরাধ করলে কৃত অপরাধের জন্য ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করবে, অনাদায়ে অনধিক ১৫ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিজ খরচে দেয়াললিখন মুছতে এবং পোস্টার অপসারণে আদেশ দেওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ফজলুর রহমানের মন্তব্য, ‘আমাদের দেশে কিছু কাগুজে আইন আছে, যার কোনো দৃশ্যমান প্রয়োগ নেই। ডিসিসি নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য প্রার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালগুলো পোস্টারে-পোস্টারে ভরে ফেলছে। সুদৃশ্য ভবনের দেয়ালগুলোর সৌন্দর্যহানি করা হচ্ছে। এখনো তো তফসিল ঘোষণাই করা হয়নি, করলে তো গোটা রাজধানীর দেয়ালই ছেয়ে যাবে পোস্টার আর ব্যানারে!
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থীরা ২৩ লাখ ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ ১৮ লাখের বেশি ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। অন্যদিকে কাউন্সিলররা সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিলে ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসানের সম্ভাবনা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক চিঠি ও সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী তৎপরতার কাজ শুরু করে ইসি। ইতিমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়ে কাজও শুরু করেছেন তারা।
রাজধানীতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররা আগাম নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করছেন পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টাঙানো এবং সাঁটানোর মধ্য দিয়ে। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে প্রায় গোটা মহানগরী এখন ছেয়ে যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীর বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে।
রাজধানীর শ্যামলীর বাসিন্দা সুমন চন্দ্র শীল বলেন, ‘প্রার্থীদের পরিবর্তন নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতির পোস্টারগুলো দেখে মনে হচ্ছে, তারা শুরুতেই আইন অমান্য করে নগরবাসীকে মিথ্যার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। যারা তফসিল ঘোষণার আগেই এমন করে আইন অমান্য করে পোস্টারে-পোস্টারে গোটা রাজধানীর সৌন্দর্যহানি করছেন, তারা পরবর্তী সময়ে কতটুকুইবা নগরের উন্নয়ন ও সৌন্দয়বর্ধনে ভূমিকা রাখবেন?’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন যাত্রী ছাউনি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন ভবন, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন মোড়, নয়াপল্টন, গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, মতিঝিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বুয়েট ক্যাম্পাস, পুরান ঢাকা, মালিবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কাঁটাবন, বাটা সিগন্যাল, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মিরপুর গোলচত্বর, শাহবাগ এলাকার বিভিন্ন স্থাপনার দেয়াল এখন পোস্টারে ঢেকে গেছে।
মন্তব্য চালু নেই