ঢাকা মহানগর আ.লীগে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে মহাগুঞ্জন। কে হচ্ছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর এবং দক্ষিণে নৌকার মাঝি ? ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ পার হলেও এ পদে কাউকে এখনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

মঙ্গলবার এম এ আজিজের স্মরণ সভার দিকে তাকিয়ে আছেন নেতারা। কারণ, প্রয়াত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজের স্মরণে রাজধানীতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন দিক নির্দেশনার ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন নেতারা।

তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৮ মার্চ। সে কারণে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই দলের গুরুপ্তপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি যে কোন সময় ঘোষণা হতে পারে। এজন্য আজ এই স্মরণ সভামঞ্চে দলীয় সভানেত্রী সংশ্লিষ্ট নেতাদের কোন চূড়ান্ত নির্দেশনা দিতে পারেন।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিন বছর আগে ওই সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমানে ২০০৩ সালের সম্মেলনে গঠিত কমিটি দিয়ে চলছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। ওই বছর জুনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও পরের বছর ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালের নভেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন মোহাম্মদ হানিফ। তার মৃত্যুর পর এক নম্বর সহসভাপতি ওমর আলী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পান ৬ নম্বর সহসভাপতি এমএ আজিজ। সেই থেকে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

গতবছর এপ্রিলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খানকে সবার সঙ্গে কথা বলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পৃথক দুই কমিটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ফারুক খান উত্তরে একেএম রহমতউল্লাহ ও সাদেক খানকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে খসড়া কমিটি প্রস্তাব করেন। দক্ষিণের জন্য ড. আবদুর রাজ্জাক সভাপতি হিসেবে এমএ আজিজ ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করে কমিটি চূড়ান্ত করে সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেন। এ সংবাদ জানাজানি হলে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মহানগর নেতাদের সংগঠিত করে প্রস্তাবিত খসড়া কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেন। মন্ত্রিপাড়ায় মায়ার সরকারি বাসভবনে এমএ আজিজ, মুকুল চৌধুরী, আওলাদ হোসেন ও এমপি আসলামুল হক আসলামকে নিয়ে মিটিং করেন তিনি। সেখানে অভিযোগ করা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত দু’নেতা বিপুল অর্থের বিনিময়ে প্রভাবিত হয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের খসড়া কমিটি প্রস্তাব করেছেন। তারা খসড়া এ দু’কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ওই দিনই বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে তার মন্ত্রিপাড়ার সরকারি বাসভবনে গিয়ে অবহিত করেন। একই সঙ্গে তারা বলেন, উত্তরে সভাপতি হিসেবে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এমপি আসলামুল হক আসলামকে মনোনীত করা যেতে পারে। আর দক্ষিণে এমএ আজিজকে সভাপতি এবং আওলাদ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব করেন তারা।

সেই থেকে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে অচলাবস্থা চলছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা শাহে আলম মুরাদের বিরুদ্ধে রাজধানীতে ‘ডিজনি ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এটি জামায়াতের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বাধীন মাকান গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শাহে আলম মুরাদ জামায়াতের এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। এ অবস্থায় ২৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এমএ আজিজের স্থলে মেয়র সাঈদ খোকন ও নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছে সংসদ সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদারের নাম। তবে আলোচনা যাই হোক বিষয়টি পুরোপুরি দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তদবিরে রয়েছেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং আসলামুল হক আসলাম। তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন একেএম রহমতউল্লাহ ও সাদেক খানও।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কাকে দায়িত্ব দেয়া হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই দলের সভানেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই