ঢাকার নেতারা খালেদা জিয়ার জন্য ‘বোঝা’
তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরকেই ‘খালেদা জিয়ার সম্পদ’ হিসেবে উল্লেখ করে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘আন্দোলনে আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা নিরাপদে ছিলাম। অথচ তৃণমূলের নেতারা জীবন বাজি রেখে মাঠে ছিল। তাই আমরা দলের জন্য বোঝা। আর সে বোঝা বেগম খালেদা জিয়াকে বহন করতে হচ্ছে। এটাও তার জন্য একটা ট্রাজেডি।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে জাসাস ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এ কথা বলেন তিনি। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও সমন জারির প্রতিবাদে এ সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির বিগত দু’টি আন্দোলনের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা বাদে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ও গতি-প্রকৃতি কোনোটারই কমতি ছিল না। পাকিস্তান-বাংলাদেশের ইতিহাসে গ্রামের হাট-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ ও বাজার পর্যন্ত এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। হয়তো আমাদের প্রক্রিয়াগত কোনো ত্রুটি ছিল, হয়তো আমাদের চিন্তা-ভাবনা-চেতনায় মস্তিষ্কগত কোনো জটিলতা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে সারা দেশে নেতাকর্মীদের অভাব হয়নি, তবে ব্যতিক্রম ছিল রাজধানী ঢাকা। আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা নিরাপদে ছিলাম। আর সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীরা বুক চিতিয়ে দিয়ে আন্দোলন করেছেন। তৃণমূলের নেতারা সেটা প্রমাণও করেছেন। সুতরাং তারাই তো বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ। আমরা কিছু লোক আছি, যারা দলের জন্য বোঝা। সে বোঝা বেগম খালেদা জিয়াকে বহন করতে হচ্ছে। এটাও তার (খালেদা জিয়া) জন্য একটা ট্রাজেডি। সেই দিক বিবেচনা করেই কথা বললে সেটা আমাদের জন্যও ভালো হবে।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহতে আন্দোলনে নামে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে আবারো আন্দোলনে নামে বিএনপি। টানা ৯২ দিন চলার পর অবরোধ কর্মসূচি শিথিল হয়ে যায়। আন্দোলন চলাকালীন গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া।
উভয় আন্দোলন সফলে বিএনপির সারা দেশের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নামেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকা ছিল এর ব্যতিক্রম। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের সঙ্গে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও নগর শাখার নেতাদের চরম নিষ্ক্রিয়তায় ব্যর্থ হয় আন্দোলন। আন্দোলনের পূর্বে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আন্দোলনের হুঙ্কার দিলেও আন্দোলনে ছিলেন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়।
বিএনপির ১১টি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই পুরো আন্দোলনজুড়ে রাজপথে কম-বেশি সক্রিয় ছিল। এর বাইরে ঢাকা মহানগর বিএনপির ব্যানারে স্বেচ্ছাসেবক দলকে ৩ থেকে ৪টি ঝটিকা মিছিল করতে দেখা গেলেও বাকি সংগঠনগুলো ঢাকার রাজপথে ছিল পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে এসব মিছিল হয়। এতে সংগঠনটির যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও বর্তমান দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চুও উপস্থিত ছিলেন। তবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও নগরের অন্য কোনো শীর্ষ নেতাকেই ঢাকার রাজপথে দেখা যায়নি।
আন্দোলন চলাকালীন যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কারাগারে থাকলেও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের (উত্তর-দক্ষিণ) শীর্ষ কোনো নেতাকেই রাজপথে দেখা যায়নি। সংগঠনটির ব্যানারে সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি মিছিলের খবর শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে ছিলেন। অবরুদ্ধ অবস্থার প্রথম কয়েকদিন সংগঠনটির কয়েকজন নেত্রীকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় ও নগরের অন্য কেউ আর রাজপথে নামেননি।
কৃষক দলের সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (একইসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব) ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু কারাগারে থাকলেও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও নগরের অন্য কোনো নেতাকেই তখন রাজপথে দেখা যায়নি।
এছাড়া জাসাস, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ওলামা দল ও মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদেরও কেউ রাজপথে নামেননি।
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের (বর্তমানে এরা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে না থাকলেও ভবিষ্যৎ কমিটিতে নেতৃত্ব প্রত্যাশী) মধ্যে শহীদুল ইসলাম বাবুল, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সরদার আমিরুল ইসলাম, হায়দার আলী লেলিন, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, শেখ মোহাম্মদ শামীম, দুলাল হোসেন, আব্দুল মতিন, জাকির হোসেন (সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক)-সহ কয়েকজনকে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় দেখা গেলেও বেশিরভাগ নেতাই ছিলেন নিষ্ক্রিয়।
জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, ‘বিএনপির বিগত আন্দোলনে আমরা রাজপথ থেকে সরে যাইনি। তবে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলন সফলতা পাচ্ছে না। সেজন্য সামনের আন্দোলনে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে। আমরা পেছন থেকে সরে যাবো না।’
গত ২০ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক আলোচনা সভায় সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে শরিক হননি, সেইসব বেঈমান-বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করতে হবে। এসব নেতা তখন আরাম-আয়েশে থাকায় আন্দোলন সফল হয়নি।’
আন্দোলন সফলে জীবন বাজি রেখে তখন যারা রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তাদেরকে সামনে এনে যথাযথ মূল্যায়নের আশা বাচ্চুর।
মন্তব্য চালু নেই