ঢাকাকেও হারিয়ে দিল খুলনা
৮৩ রানে নেই ঢাকা ডায়নামাইটসের ৭ উইকেট। খুলনা টাইটানসের জয়টা তখন বলতে গেলে হাতের মুঠোয়। প্রথমে ব্যাট করা খুলনার ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রান যে তখনও অনেক দূরের পথ ঢাকার জন্য। অথচ সেই দুর্গমগিরি আর একটু হলে পেরিয়েই যাচ্ছিল সেক্কুগে প্রসন্নর টর্নেডো ইনিংসে। শ্রীলঙ্কান এই স্পিনার শেষ দিকে মাত্র ২২ বলে করেছেন ৫৩ রান। যদিও হার এড়াতে পারেনি ঢাকা। অনেক নাটকের পর শেষ পর্যন্ত খুলনা পেয়েছে ৯ রানের জয়। ১৯.১ ওভারে ঢাকা অলআউট হয়ে যায় ১৪৮ রানে।
নয় নম্বরে নেমে প্রসন্ন ঝড় তুললেন চট্টগ্রামে। খুলনার বোলারদের ওপর দিয়ে টর্নেডো বইয়ে দিয়ে বল উড়িয়ে মেরেছেন বাউন্ডারির বাইরে। ম্যাচটা নিয়ে এসেছিলেন ফিফটি-ফিটটি অবস্থায়। তার ঝোড়ো ইনিংসেই শেষ ওভারে ঢাকার দরকার ছিল ১০ রান। কিন্তু পারেননি, শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, নামের পাশে তখন ২২ বলে ৫৩ রান। মাত্র ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করা লঙ্কান স্পিনার তার ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন ৭ ছক্কায়।
জুনায়েদ খান ও কেভন কুপারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরুতেই খেই হারিয়ে ফেলে ঢাকা। মাত্র ৩০ রানে তারা হারায় টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যানকে। শুরুটা করেছিলেন কুপার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অলরাউন্ডারের বলে মাত্র ৪ রান করে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মেহেদী মারুফ। এর পর আঘাত হানেন জুনায়েদ খান। পাকিস্তানি পেসারের বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কুমার সাঙ্গাকারা (২)। ঢাকা সেই আঘাত সামলাতে না সামলাতেই আবার হারায় নাসির হোসেনের উইকেট। কুপারের দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন নাসির ৭ রান করে। ম্যাট কোলসও ১১ রান করে শফিউল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে গেলে আরও চাপে পড়ে সাকিব আল হাসানরা। চাপ কাটাতে মাঠে নামা অধিনায়ক সাকিবও দ্রুত ফিরে গিয়ে বিপদ বরং আরও বাড়ান। মোশাররফ হোসেনের বলে বোল্ড হন তিনি মাত্র ৮ রান করে। ডোয়াইন ব্রাভোও ব্যর্থ, ৪ রান করে তাইবুর রহমানের বলে এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ধরা পড়েন জুনায়েদের হাতে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর মিডল অর্ডারে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে তিনি খেলেন ৩৫ রানের ইনিংস। যদিও মোশাররফের বলে ভাঙে তার প্রতিরোধ। বিপর্যস্ত ঢাকার হারটা যখন সময়ের অপেক্ষায়, ঠিক তখনই প্রসন্নর ওই ঝোড়ো ইনিংস। যদিও শেষ পর্যন্ত তার ইনিংসটা আক্ষেপই হয়ে রইল ঢাকার জন্য।
অধিনায়ক হিসেবে যা যা করার দরকার, তার সবটাই করছেন মাহমুদউল্লাহ। কখনও ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন দলের প্রয়োজনে, তো কখনও আবার জাদুকরী বোলিংয়ে দলকে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে বাঁচিয়ে ছিনিয়ে আনছেন জয়। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষেই যেমন আবার ব্যাট হাতে খুলনা টাইটানসের অধিনায়ক খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। তার ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরির (৪৪ বলে ৬২) ওপর ভর দিয়েই ঢাকার বিপক্ষে ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেটে হারিয়ে ১৫৭ রানের স্কোর গড়েছে খুলনা।
চট্টগ্রামের শুরুটাও ভালো হয়নি খুলনার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন হাসানুজ্জামান (০)। ওয়ান ডাউনে নামা শুভাগত হোমকে নিয়ে সেই চাপটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার। নামজুল হোসেন শান্তর বলে ক্যাচ দেন তিনি নাসির হোসেনের হাতে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অবশ্য সেই চাপটা কাটিয়ে উঠে খুলনা শুভাগত-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। তাদের ৪৪ রানের জুটিতে গতি পায় খুলনার স্কোরে। কিন্তু দারুণ খেলতে থাকা শুভাগত (২৪) ডোয়াইন ব্রাভোর বলে বোল্ড হয়ে গেলে ভাঙে তাদের জুটি। নিকোলাস পুরানও (১৬) ফিরে যায় দ্রুত।
যদিও এক প্রান্ত আগলে রেখে আরেকটি অসাধারণ ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। স্ট্রোকের ফুলঝুরিতে ৪৪ বলে তিনি খেলেছেন ৬২ রানের কার্যকরী ইনিংস। মোহাম্মদ শহীদের বলে ব্রাভোর হাতে ধরা পড়ার আগে ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছিলেন ৪ চার ও ৪ ছ্ক্কায়। আউট হওয়ার আগে পঞ্চম উইকেট জুটিতে খুলনা অধিনায়ক ৫৭ রানের জুটি গড়েছিলেন তাইবুর রহমানের সঙ্গে। তাইবুর ২৪ বলে অপরাজিত ছিলেন ২১ রানে। ঢাকার সফল বোলার ব্রাভো ২৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।
মন্তব্য চালু নেই