ডুইসবুর্গে জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির অন্যতম বাণিজ্যিক শহর ডুইসবুর্গ। জার্মানদের পাশাপাশি এ শহরের একটি বড় অংশ জুড়ে তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলমানেরা বসবাস করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন সময়ে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছেন এই তুর্কিরা। দিনে দিনে মিশে গেছে জার্মানদের সাথে। কিন্তু তারপরও কোথাও যেন একটি অদৃশ্য দেয়াল লক্ষ করা যায় সবসময়। বিশেষ করে সমাজের মূলধারার সাথে তুর্কিদের সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে রয়েছে ফারাক।
আর সেই ফারাকের এক অন্যতম কারণ ধর্মচর্চা। তুর্কিরা চান ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা। প্রয়োজনীয় মসজিদ। সেই চাওয়া থেকেই সম্ভবত জার্মান সরকার জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তৈরি করতে শুরু করেছে মসজিদ। তাই ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর ডুইসবুর্গ শহরে উদ্বোধন করা হয় জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষ হাজির হয়েছিলেন নয়নাভিরাম মসজিদটি দেখতে। হাতে লাল গোলাপ পরনে বোরখা কারো জিন্স মাথায় হিজাব। শুভেচ্ছার লাল গোলাপ দেখা গেছে বেশির ভাগ তুর্কি নারীর হাতে। আর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুটাও হয়েছিল পবিত্র আল কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সভাপতি আলী বার্দাকোগলু। ছিলেন জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ুর্গেন রুটগার্সও। তিনি জানালেন, আমাদের গণতন্ত্র এবং আমাদের দেশের জন্য কে খ্রিষ্টান, কে মুসলমান বা কে ইহুদি এটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে এবং নাগরিক হিসেবে আমাদের পরস্পরের মধ্যে যোগসূত্র কী হবে। আমাদের সংবিধান এ ক্ষেত্রে সবার জন্য সুন্দর এক পথ খুলে দিয়েছে।
ডুইসবুর্গের এ মসজিদে একসাথে নামাজ পড়তে পারবেন এক হাজার ২০০ মুসল্লি। আর শুধু পুরুষ নয়, এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবেন নারীরাও। মসজিদটির আজান দেয়ার মিনারের উচ্চতা ৩৪ মিটার। আর ভেতরে বিভিন্ন কারুকার্য দিয়ে লেখা রয়েছে আল্লাহর নাম ও পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত। এসব কারুকার্যে ব্যবহার করা হয়েছে স্বর্ণসহ বিভিন্ন দামি উপাদান। এ ছাড়া রয়েছে ঝাড়বাতি আর কারুকার্যগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ আলোকসজ্জা। সম্পূর্ণ মসজিদটি তৈরিতে সময় লেগেছে তিন বছরের মতো। খরচ হয়েছে ৭৫ লাখে ইউরো। নামাজ আদায়ের স্থানের পাশাপাশি মসজিদটিতে রয়েছে তথ্য কেন্দ্র, হলরুম, আবাসন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা।
নয়নাভিরাম এ মসজিদ দেখে কি অনুভূতি জাগছে মনে? তুর্কি তরুণ সেলিম জানালেন, এটা আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। শুধু জার্মানি নয় এটা ইউরোপেরও অন্যতম বৃহৎথ একটি মসজিদ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে বেশির ভাগ ইউরোপীয় মনে করে আমরা খারাপ। এ মসজিদ তাদের ধারণা দেবে যে, মুসলমানরা খারাপ নয়। যা আমাদের জন্য খুবই আশাপ্রদ।
জার্মানির বিভিন্ন শহরে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। কিন্তু ডুইসবুর্গের এ মসজিদ উদ্বোধনের সময় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বরং অনেক জার্মান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মসজিদের প্রতি তাদের সমর্থনই যেন প্রকাশ করলেন।
নতুন মসজিদ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত তুর্কি বংশোদ্ভূতরা। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে উপচেপড়া সেই উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন তুর্কি তরুণী ফাতমা। বললেন, এ মসজিদটি খুবই ভালো। কারণ আমি একজন মুসলমান।
ইসলাম বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা, নতুন এ মসজিদ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জার্মানদের সঠিক জ্ঞানদানে সহায়তা করবে। একইসাথে তুর্কিদের সাথে জার্মানদের বিভাজনের রেখা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে এ মসজিদ।
মন্তব্য চালু নেই