ডিসিসি নিয়ে এখনও বেকায়দায় বিএনপি!

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ঢাকা নিয়ে এখনও জটিলতার মধ্যে রয়েছে বিএনপি। ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে একজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দক্ষিণে নিয়েছেন চারজন। আছেন একজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক নেতা।

তফসিল ঘোষণার ১১দিন পার হলেও এখনও কে কে প্রার্থী হবেন, বিএনপি কোন ব্যানারে নির্বাচন করবে তা চূড়ান্ত হয়নি। যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা চট্টগ্রামে মেয়র পদে এম মনজুর আলমকে সমর্থন দিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে নির্বাচন করবেন। চলমান আন্দোলনের শুরু থেকে প্রকাশ্যে আছেন মনজুর। যদিও তার বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আছে। তবে তিনি বিএনপির জন্য ‘ক্ষতিকর’ নন।

চট্টগ্রামের যখন এই অবস্থা তখন ঢাকায় মেয়র পদে যারা লড়তে চান তারা সবাই আত্মগোপনে। কমিশনার প্রার্থীদের বেশির ভাগ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুয়ায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতে নির্বাচন হবে।

এমন সময় এ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হলো যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল টানা আন্দোলনে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০ দলের উদ্যোগে গত ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী চলছে অবরোধ। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে হরতাল। তবে ইদানীং অবরোধ অব্যাহত রেখে হরতাল কমিয়ে দিচ্ছে বিএনপি জোট।

সে কারণে শুরুতে আন্দোলন বন্ধের ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে ছিল বিএনপির হাইকমান্ড।কিন্তু নির্বাচনে না গেলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে এমন চিন্তা থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে দলীয় সূত্র জানাচ্ছে।

তাছাড়া আন্দোলনে বিএনপি যে ব্যর্থ হয়েছে সেটি স্বীকার করছেন দলীয় নেতারাও। তাই দলটি আন্দোলন থেকে সরে আসার একটি পথ খুঁজছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। আর এই নির্বাচন হতে পারে একটি এক্সিট পয়েন্ট।

এদিকে ঢাকায় বিএনপিপন্থি ‘শত নাগরিক কমিটি’র ব্যানারে নির্বাচনের সম্ভাবনা বেশি। শুরু থেকে এই সংগঠনটির নেতারা বিএনপির হয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

শত নাগরিক কমিটি ছাড়াও পেশাজীবী সংগঠন আছে। বিশেষ করে সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের তৎপরতা অন্যান্য সময় বেশি চোখে পড়ত। কিন্তু সিটি নির্বাচনে সংগঠনটির নেতারা কোনো ভূমিকায় নেই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা, ঢাকার বেশিরভাগ কর্মী ঘরছাড়া। দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গেও অনেকটা যোগাযোগ নেই শীর্ষ নেতাদের। যে কারণে মাঠের কর্মীরা দলের সিদ্ধান্ত জানতে পারছেন না। অথচ এই অবস্থার মধ্যেই শত নাগরিক কমিটিকে দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে সিটি নির্বাচনে বিএনপি কতটা সুবিধা করতে পারবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে বিএনপি সমর্থিত আবদুল আউয়াল মিন্টু একাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরে মিন্টুর প্রার্থিতা অনেকটা চূড়ান্ত।

এখানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তার সংগঠন তাকে প্রার্থী করেছে।কিন্তু তিনি জেলে থাকায় শেষ পর্যন্ত কী হয় তা বলা মুশকিল।

অন্যদিকে বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরীও উত্তর থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।বিকল্প ধারার সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।মিন্টু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারলে মাহীকে বিএনপি সমর্থন দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে এমন অবস্থা হলে মান্নাকেও বিএনপি সমর্থন দিতে পারে এমন জোরালো চিন্তা আছে বলে জানা গেছে।

তবে দক্ষিণের সমস্যা আরো প্রকট। কারণ এখানে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির চার নেতা। আছেন বিএনপিপন্থি একজন শিক্ষক নেতাও। যারা মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়েছেন তার হলেন- মির্জা আব্বাস, আবদুস সালাম, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন। আর শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া। চার বিএনপি নেতাদের মধ্যে একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। বাকিরা আত্মগোপনে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে যারা মেয়র পদে লড়তে চান তাদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টু। যদিও চলমান আন্দোলনের শুরু থেকে তিনিও আছেন আত্মগোপনে।তিনি একাধিক মামলায় তিনি আসামি। তিনি ছেলে ও আইনজীবী পাঠিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে ফৌজদারি মামলায় যারা আসামি তাদের ব্যাপারে পুলিশের কড়া বক্তব্য নিয়ে চিন্তায় আছে বিএনপি। কারণ পুলিশে বলছে, ফৌজদারি মামলা আছে এমন ব্যক্তিরা প্রার্থী হলেও জামিন না নিয়ে প্রচারণা চালালে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাই শেষ পর‌্যন্ত উত্তরে মিন্টু প্রার্থী হলেও মাঠে নামতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

অন্যদিকে দক্ষিণে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস অনেকটা শক্তিশালী অবস্থানে আছেন বলে জানা যায়। কিন্তু চলমান আন্দোলনে তার কমিটি মাঠে না থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। আন্দোলনে নাশকতার মামলাসহ দুর্নীতির অভিযোগে আব্বাসের বিরুদ্ধে দুদকেও মামলা চলছে। এ অবস্থায় মির্জা আব্বাস প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হলেও মাঠে নেমে কাজ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তবে সাবেক ডেপুটি মেয়র ও বিএনপির অর্থ সম্পাদক আবদুস সালামেরও সম্ভাবনা ভালো বলে জানা গেছে। সালাম কয়েক বছর ধরে ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব থাকায় থানা ও ওয়ার্ড পর্যাদয়ের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু বিগত আন্দোলন ও চলমান আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্র ক্ষুব্ধ।

কিন্তু তিনিও আছেন আত্মগোপনে। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। আবদুস সালাম মূলত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার লোক হিসেবেই পরিচিত।

মেয়র পদে দক্ষিণে বিএনপির সবচেয়ে ভালো প্রার্থী ছিলেন খোকা। কিন্তু চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে আমেরিকায় রয়েছেন।যদিও দলের চেয়ারপারসন চাইলে তিনি এবারও মেয়র পদে লড়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর নেই।

অন্যদিকে আরেক আগ্রহী প্রার্থী নাসির উদ্দিন পিন্টু বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। পুরানো ঢাকায় পিন্টুর শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ কম বলেই জানা গেছে।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপনও মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তার একটি ক্লিন ইমেজ রয়েছে। অপরিচিতও নন তিনি। কিন্তু নগরবাসীর সঙ্গে তার যোগাযোগের মাত্রা ওই অর্থে খুব কম।তিনিও পলাতক। রিপন মির্জা আব্বাসের প্রার্থী বলেও রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন আছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন  বলেন, “প্রার্থী নিয়ে সমস্যা হবে না। পরিস্থিতি ভালো হলে জোট যাকে সমর্থন দিবে নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবে।”



মন্তব্য চালু নেই