নাগরিক ভাবনা : ডিসিসি নির্বাচন

আরেকটি ৫ জানুয়ারি হবে না তো?

ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন নগরবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। এই নির্বাচন নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। দীর্ঘ সাত বছর ধরে আটকে থাকা এ নির্বাচন সরকারের উদ্যোগে এখন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। তাতে নগরবাসীর মনে একটু হলেও স্বস্তি ফিরে আসার কথা। কিন্তু সেটা না হয়ে নগরবাসী যেন আরো অস্বস্তিতে পড়েছেন। অনেকের শঙ্কা, এ নির্বাচন ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা হয়ে যাবে না তো! এমনটা হলে নিছক অর্থের অপচয় হবে বলেই মনে করেন তারা।

আবার কেউ ভাবছেন বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনকে দমন করার কৌশল হিসেবে এই নির্বাচনের টোপ দেয়া হয়েছে। আদৌ নির্বাচন হবে কিনা সেটা নিয়েও অনেকে সন্দিহান। এই নির্বাচন নিয়ে ভাবনা ও আতঙ্ক কাটছেই না নগরবাসীর। ৫ জানুয়ারির মতো সহিংসতাপূর্ণ বা একতরফা হবে, নাকি বিরোধী দল অংশ নেবে সেটা দেখার অপেক্ষায় তারা। বিরোধী দল অংশ না নিলে ভোট দিতে যাবেন কিনা এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় রয়েছেন।

রাজধানীজুড়েই ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আলাপচারিতা। এমনই কথোপকথনে ব্যস্ত ছিলেন আবদুল্লাহপুর থেকে গুলিস্তানগামী বাসের যাত্রীরা। তাদের মনে নানান প্রশ্ন।

তাদের একজন খিলক্ষেতের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন। বয়স ৪৮। তিনি ডিসিসির উত্তরের ভোটার। ছোটখাটো ব্যবসার পাশাপাশি একটি পার্টটাইম জব করেন তিনি। খিলক্ষেতে নিজের একটি ছোট ফ্ল্যাট আছে। তিন কন্যার জনক তিনি। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, মেঝো মেয়ে ১০ম শ্রেণি আর ছোট মেয়ে পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে।

কথা হলো আলাউদ্দিনের সঙ্গে।

ডিসিসি নির্বাচন তো হতে যাচ্ছে, এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী হবে এ নির্বাচন দিয়ে? সব জায়গায় তো সরকারি দল দেখছি। কী লাভ যদি সব দল না আসে? মাঠে যদি প্রতিদ্বন্দ্বীই না থাকে তাহলে তো সেই খেলার প্রতি কারও কোনো আকর্ষণ থাকে না।

তার সঙ্গে সুর মেলালেন বনানীর বাসিন্দা সুমন আহমদসহ আরো দুজন। একজন বলে উঠলেন, আরে এটা বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করতে সরকার একটি কৌশল দাঁড় করিয়েছে। আলাউদ্দিন বলেন, সব দল না এলে নির্বাচন কমিশনের ভোট করার দরকার নেই। কারণ এতে অর্থের অপচয় হবে।

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি একটি উদাহরণ টেনে বলেন, সরকার এমন একসময় ডিসিসি নির্বাচন করতে যাচ্ছে যে সময় পুরো দেশজুড়ে চলছে অস্থিরতা। আগে তারা ঝগড়া থামাক। কেউ আলোচনায় বসুক বা না বসুক সেই দায় সরকারকেই নিতে হবে। একটি বাড়ির কর্তাই যদি ঘরের বিশৃঙ্খলা ঠিক করতে না পারে তো করবে কে?

উচ্ছৃঙ্খল তো সবাই। সেই উচ্ছৃঙ্খলতাকে তো সরকারকেই ঠিক করতে হবে।

ভোট দিতে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব দল না এলে ভোট দিতে যাবো কেন? আমরা চাই না ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হোক। ৫ জানুয়ারিতে আমি ভোট দিতে যাইনি। এবারও সব দল না এলে ভোট দিতে যাবো না। আগে ভোট দিতে যাওয়ার পরিবেশ ঠিক করতে হবে। ডিসিসির এ নির্বাচন অর্থনৈতিক ক্ষতির নির্বাচন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে ২০০৭ সালের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সেটা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এরপর ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে দু’ভাগ করা হয়।

২০১২ সালের শুরুতে নির্বাচন করার কথা ভাবলেও ডিসিসিকে ভেঙে দুই ভাগ করা হলে সীমানা জটিলতা দেখা দিলে আর নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সীমানা জটিলতা নিরসন করে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন করতে বলে। তবে এ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের সরব অবস্থান দেখা গেলেও বিরোধী দলের অংশগ্রহণের কোনো আলামাত পাওয়া যাচ্ছে না। আর তাই ৫ জানুয়ারির মতোই এ নির্বাচন বিতর্কিত হবে বলে অনেকে মনে করছেন।



মন্তব্য চালু নেই