ডিসিসি দখলে মাঠে নামছেন মন্ত্রীরা
আসন্ন ঢাকার বিভিক্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এমনকি এলক্ষ্য অর্জনে আচরণবিধির তোয়াক্কা করবে না তারা। ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে ১৫ টিম গঠন করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা ও এলাকাভিত্তিক জাতীয় সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে টিমগুলো গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সরকারের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও। দলীয় সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী,জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণায় এমপি-মন্ত্রীসহ কোনো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি অংশ নিতে পারেন না। এমনকি নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের কোনো অনুষ্ঠানেও তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। আচরণবিধি অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে- প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বোঝানো হয়েছে।
ঢাকা দক্র মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রার্থীকে কোনো সভায় পরিচয় করিয়ে দেয়া ছাড়াও কোনো প্রকার সমর্থন দিতে পারবেন না। অথবা ভোটাররা প্রভাবিত হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকার দু’টি এবং চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচন। ঢাকা উত্তরে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ব্যবসায়ী নেতা আসিনুল হক। আর দক্ষিণে আছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন। তবে বেশকিছু ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাই করা হলেও এখনো অনেক ওয়ার্ড বাকি। সেগুলোর কাজ এখন পুরোদমে চলছে।
আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, নির্বাচনে যাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদেরই সমর্থন দেবে দল। আর সে জন্য নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে। কাউন্সিলর পদে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটি করছে মহানগর কমিটি। অবশ্য নারী কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনিকে। তিনি ইতোমধ্যে নারী নেত্রীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুহ আলম লেনিন বলেন, ‘কাউন্সিলার পদে প্রার্থী নির্বাচনের কাজ এগিয়ে চলছে। সেই দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে দলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি টিমও গঠন করা হয়েছে। ওই টিমগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে তারা কাজ করবে।’
এদিকে ১৫ টিমের মধ্যে ঢাকা-৪, ৫, ৮, ৯ আসনের সমন্বয়ক করা হয়েছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। ঢাকা-১০, ১৩ আসনের সমন্বয়ক করা হয়েছে আরেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ঢাকা-১৪, ১৫, ১৬ আসনের সমন্বয়ক করা হয়েছে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। ঢাকা-১১, ১৭ আসনের সমন্বয়ক করা হয়েছে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। ঢাকা-৬, ৭, ১২, ১৮ আসনের সমন্বয়ক করা হয়েছে যথাক্রমে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহরা খাতুনকে।
এছাড়া অনেক সদস্য একাদিক টিমে রয়েছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
ঢাকা-৪ আসনে অন্য সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মির্জা আজম।
ঢাকা-৫ আসনের অন্য সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আব্দুর রহমান, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, হাবিবুর রহমান মোল্ল।
ঢাকা-৬ আসনে– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, মৃণাল কান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দী, নরুল মজিদ হুমায়ুন।
ঢাকা-৭ আসনের অন্য সদস্যরা হলেন– আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন।
ঢাকা-৮ আসনে– আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খাদ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, আখতারউজ্জামান, স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
ঢাকা-৯ আসনের সদস্যরা হলেন– আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, এবি তাজুল ইসলাম, আ ম উবায়ুদল মোকতাদির চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, সাবের হোসেন চৌধুরী।
ঢাকা-১০ আসনে সিমিম হোসেন রিমি, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা-১১ আসনের সদস্যরা হলেন– রহমত উল্লাহ, একেএম এনামুল হক শামীম, টিপু মুন্সি।
ঢাকা-১২ আসনের সদস্যরা হলেন– অ্যাডভোকেট আফজাল আহমেদ, অসীম কুমার উকিল, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জান খান কামাল। ঢাকা-১৩ আসনে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো. আব্দুছ ছাত্তার, এসএম কামাল হোসেন। ঢাকা-১৪ আসনে– আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আসলামুল হক আসলাম।
ঢাকা-১৫ আসনের সদস্যরা হলেন– আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ ড. দীপু মনি, আবদুস সোবহান গোলাপ, কামাল আহমেদ মজুমদার। ঢাকা-১৬ আসনে– আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। ঢাকা-১৭ আসনে– একেএম রহমত উল্লাহ, টিপু মুন্সী। এবং ঢাকা-১৬ আসনে রয়েছেন– ডা. দীপু মনি, আখতারুজ্জামান। এসব টিমের সঙ্গে কাজ করবেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরাও।
মন্তব্য চালু নেই