বৃষ্টিতে ভেসে গেল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ওয়ানডে
বৃষ্টির বাগড়ায় বাংলাদেশ আর নামতে পারল না ব্যাট করতে। বৃষ্টির দাপটে ডাম্বুলার দ্বিতীয় ওয়ানডে তাই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন ম্যাচ রেফারি। প্রথম ওয়ানডে জেতায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকল ১-০ ব্যবধানে।
স্থানীয় সময় রাত ৮-৪৫ মিনিটে ম্যাচ রেফারি মাঠ থেকেই ঘোষণা দেন ম্যাচ পরিত্যক্তের। এর আগে স্থানীয় সময় সাড়ে ৮টার দিকে একবার ১০ মিনিটের জন্য বৃষ্টি কমেছিল। কিন্তু পরে আবার বাড়ে বৃষ্টির তীব্রতা। সব মিলিয়ে ঘন্টা খানিকের বৃষ্টিতে ভেসে গেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ওয়ানডে।
ডাম্বুলার ম্যাচটির সমীকরণ ছিল এমন-জিতলে বাংলাদেশের সিরিজ নিশ্চিত, তাই শ্রীলঙ্কার জন্য ম্যাচটি ছিল সিরিজ বাঁচানোর। গুরুত্বপূর্ণ সেই ম্যাচে শুরুটা দারুণ হয়েছে স্বাগতিকদের। বাংলাদেশের বোলারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে স্কোরে জমা করেছে ৩১১ রান। এই মাঠেই প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সুযোগ পেয়ে সফরকারীরা বড় স্কোর গড়ে জিতে নেয় ম্যাচ। দ্বিতীয় ম্যাচে টস জেতা শ্রীলঙ্কা আর ভুল করেনি, ব্যাট নিয়ে গড়েছে বড় সংগ্রহ। কুশল মেন্ডিসের সেঞ্চুরির সঙ্গে উপুল থারাঙ্গার হাফসেঞ্চুরিতে ৪৯.৫ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করেছে ৩১১ রান।
স্বাগতিকরা অলআউট হয়েছে আসলে তাসকিন আহমেদের জাদুকরী বোলিংয়ে। ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করেছেন যে বাংলাদেশি পেসার। ৫০তম ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। তৃতীয় বলে আসেলা গুনারত্নেকে ফিরিয়ে শুরু তাসকিনে হ্যাটট্রিক মিশন। চতুর্থ বলে সুরঙ্গা লাকমালকে ফেরানোর পর পঞ্চম বলে নুয়ান প্রদীপকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিক আনন্দে মাতেন তাসকিন। তাতে ১ বল আগেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
সব মিলিয়ে তাসকিনের শিকার ৪ উইকেট। হ্যাটট্রিকের পরও তার প্রথম উইকেটটির গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। ফিরিয়েছিলেন যে সেঞ্চুরি পূরণ করা কুশল মেন্ডিসকে। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের জন্য, সেঞ্চুরি করে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন মেন্ডিস। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ দলে স্বস্তি ফেরান তাসকিন। ১০২ রান করে আউট হয়ে যান তাসকিনের বলে। বাংলাদেশি পেসারের ডেলিভারিতে জোরে ব্যাট চালিয়েছিলেন কুশল, উড়ে আসা বল এসে আঘাত করে তাসকিনের কাঁধে। এরপর বাতাসে ভাসা বলটি খানিকটা দৌড়ে নিজেই তালুবন্দি করেন তাসকিন।
ক্রিজে এসেই খেলছিলেন সেট ব্যাটসম্যানের মতো, সেটও হয়ে গিয়েছিলেন মিলিন্দা সিরিবর্ধনে। যদিও খুব বেশি ভয় ছাড়ানোর আগেই তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর ক্রিজে আসা থিসারা পেরারাও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ, তাকে রানআউট করেছেন মুশফিক।
তার আগে একটু একটু করে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন দিনেশ চান্ডিমাল। উইকেটে সেট হয়ে বড় ইনিংস খেলার ভিত গড়া লঙ্কান এই উইকেটরক্ষককে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। মুস্তাফিজের স্লোয়ার সরাসরি আঘাত করে চান্ডিমালের প্যাডে। আম্পায়ার খানিকটা ভেবে আউট দিলেও রিভিউ নেন চান্ডিমাল। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি, ৩০ বলে ২৪ রান করে মুস্তাফিজের শিকার হয়ে ফেরেন লঙ্কান এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তিনি আউট হওয়ার আগেই অবশ্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল মেন্ডিস। খুব বেশি দূর অবশ্য যেতে পারেননি তিনি।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা শুরুটা করেছিল দুর্দান্ত। কিন্তু তৃতীয় ওভারে তারা হারায় প্রথম উইকেট। বাংলাদেশ হাসে স্বস্তির হাসি, আর চাপে পড়ে লঙ্কানরা। শেষ পর্যন্ত কুশল মেন্ডিস ও উপুল থারাঙ্গার জুটিতে সেই চাপ কাটিয়ে উঠে স্বাগতিকরা। তবে মাহমুদউল্লাহর সরাসরি থ্রোয়ে থারাঙ্গা রান আউটের পর স্বস্তি ফিরে মাশরাফিদের মনে।
প্রথম ওভারেই হতাশ হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। মাশরাফি মর্তুজার ওই ওভারে ৯ রান করে স্বাগতিকরা। কিন্তু বাংলাদেশের অধিনায়ক তার দ্বিতীয় ওভারে সেই আক্ষেপ কাটান। তৃতীয় বলে দানুশকা গুনাতিলাকাকে স্কয়ার লেগে মুশফিকুর রহিমের দারুণ এক ক্যাচ বানান বাংলাদেশি পেসার। উদযাপনে মাতে বাংলাদেশ। কিন্তু মেন্ডিস ও থারাঙ্গা সেই উদযাপন বেশিক্ষণ করতে দেননি।শতাধিক রানের জুটিতে তারা বাংলাদেশের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত থারাঙ্গাকে রান আউট করলেন মাহমুদউল্লাহ। মুস্তাফিজুর রহমানের ওভারে ভাঙে ১১১ রানের এ জুটি। ৭৬ বলে ৬৫ রান করেন থারাঙ্গা।
মন্তব্য চালু নেই