টেস্টে বাংলাদেশ অভিজ্ঞ কবে হবে?

বাংলাদেশ ৯০৩ : ইংল্যান্ড ৩৩২। গত ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে কিন্তু অভিজ্ঞতায় দুই দলের পার্থক্য ছিল এমনই।
সাত অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মাশরাফি বিন মুর্তজা (১৬৬), মুশফিকুর রহিম (১৬৪), সাকিব আল হাসান (১৬৩), তামিম ইকবাল (১৫৯), ইমরুল কায়েস (৬২), মাহমুদউল্লাহ (১৩১), নাসির হোসেন (৫৮) সম্মিলিতভাবে খেলেছেন ৯০৩ ওয়ানডে। জস বাটলার, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম প্লাঙ্কেট, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ ও মঈন আলী— ইংল্যান্ডের সাত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ৩৩২ ওয়ানডে।
বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সবচেয়ে অভিজ্ঞ দলগুলোর একটি। পরিসংখ্যান দেখুন, গত জানুয়ারিতে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা ভারতীয় দলের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ছিল ৯৪২ ওয়ানডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলা পাকিস্তান দলের সেটি ৫২৫। ক্যারিবীয়দের অবশ্য ৬৮৬। নিজেদের সর্বশেষ ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ৮৩০, অস্ট্রেলিয়ার ৫০৫, শ্রীলঙ্কার ৫১২। নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে গত জানুয়ারিতে। তখন কিউইদের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ছিল ৭৬৬ ম্যাচ।
সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল তো বাংলাদেশই। দেশের মাটিতে বাংলাদেশের টানা ছয়টি সিরিজ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মূলত অভিজ্ঞতাই। মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মুহূর্তেই ম্যাচের ছবি বদলে দিতেন। সঙ্গে তারুণ্যও ছিল। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের বেশ ভালো ভারসাম্যপূর্ণ মিশেলেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলটি। কিন্তু টেস্টে?
অভিজ্ঞতার বিচারে ক্রিকেটের বড় দৈর্ঘ্যে বাংলাদেশ পড়ে আছে পেছনের সারিতে। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে ১৬ বছর। এই সময়ে কোনো খেলোয়াড় দূরে থাক, বাংলাদেশ দলই তো ১০০ ম্যাচ খেলেনি। অভিজ্ঞতার বিচারে তাই ইংল্যান্ডের চেয়ে ঢের পিছিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ সাত খেলোয়াড় মুশফিক, তামিম, সাকিব, ইমরুল, মুমিনুল ও নাসিরের সম্মিলিত টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ২১৭ ম্যাচ। ইংল্যান্ডের টেস্ট স্কোয়াডে থাকা অ্যালিস্টার কুক, বেয়ারস্টো, মঈন, ব্যালান্স, স্টুয়ার্ট ব্রড, জো রুট ও ওকসের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা সেখানে ৩৬৯ ম্যাচ। অথচ ইংল্যান্ডের টেস্ট দলটাও মোটের ওপর বেশ নতুনই।
তবুও কেন এত পার্থক্য হয়ে যায়? উত্তরটা মিলবে এখানে—
সাকিব আর কুকের আন্তর্জাতিক অভিষেক প্রায়ই কাছাকাছি সময়ে। দুজনই আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রেখেছেন ২০০৬ সালে। এই ১০ বছরে কুক খেলেছেন ১৩৩ টেস্ট, সাকিব সেখানে ৪২টি! এমনকি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে টেস্ট অভিষেক হওয়া জো রুটও সাকিবের চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন, ৪৬টি। তামিম প্রায়ই আফসোস করেন, অন্য দলের মতো সুযোগ পেলে এত দিন ৮০-৯০ টেস্ট খেলে ফেলতেন। তাঁর রানটাও হতো দ্বিগুণ!
এমনও হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় দুর্দান্ত ফর্মে থেকে কোনো সিরিজ শেষ করলেন। পরের টেস্ট সিরিজটা খেলতে খেলতে ফর্মই চলে গেল তাঁর। তামিমই যেমন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে টানা সেঞ্চুরির সেই সিরিজটার ১৪ মাস পর খেলেছেন আরেক টেস্ট সিরিজ! এ বছর এখনো টেস্টই খেলেনি বাংলাদেশ। বছরের শেষ দিকে এসে দুটি টেস্ট খেলছে। ২০১২ সালেও এমন মাত্র দুটি টেস্ট খেলছিল বাংলাদেশ পুরো বছরে! অন্য দলগুলো এক সিরিজেই খেলে ৩ থেকে ৫টি টেস্ট!
দলীয় অভিজ্ঞতায় টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে। ভারত সর্বশেষ যে টেস্টটি খেলেছে, সেখানে তাদের একাদশের মোট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ৩৫২টি। পাকিস্তানের ৩৫৩টি, শ্রীলঙ্কা ২৯০, অস্ট্রেলিয়া ২৭৮, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড ৩৪৪টি। সাকিব-মুশফিকরা ১০-১১ বছর ধরে টেস্ট খেলছেন। তামিম-ইমরুল-মাহমুদউল্লাহরা ৮ বছর ধরে। তবু বাংলাদেশের সর্বশেষ ১৪ জনের টেস্ট স্কোয়াড দিয়েছে, তার মোট ম্যাচ খেলার সংখ্যা ২২৭টি। এই স্কোয়াডের আটজনই দশটির কম টেস্ট খেলেছেন। চারজন টেস্টই খেলেননি। একটা স্কোয়াডের আটজনের মোট ম্যাচ সংখ্যা কিনা ২৮টি!
বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে গত বছরের জুলাইয়ে। অথচ এই সময়ে ইংল্যান্ড খেলে ফেলেছে ১৬ টেস্ট। এখন পর্যন্ত যা সূচি, তাতে আগামী বছরও বাংলাদেশের তিনটির বেশি টেস্ট খেলার সম্ভাবনা খুবই কম।
ওয়ানডেতে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকাটা যেমন বাংলাদেশের বিরাট কাজে দেয়, টেস্টে সেটিই আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এর জন্য বেশি করে ম্যাচ তো খেলতে হবে। না খেললে অভিজ্ঞতা বাড়বে কী করে?
মন্তব্য চালু নেই