টিভি রিমোট নিয়ে ঝগড়া করেছি: কোয়েল মল্লিক
বিরক্ত তাঁকে নিয়ে গুজবে। তার মাঝেই দেড় বছর পর আবার টলিউডে কোয়েল মল্লিক। শোনা গিয়েছিল তিনি নাকি ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ে ব্যস্ত! এ বার নাকি প্রোডাকশন আর সংসার নিয়ে থাকবেন।
গুজবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ১৬ তলার তিরুমণি অ্যাপার্টমেন্টে ‘পত্রিকা’র মুখোমুখি। পিচ রঙা গাউন। খোলা কাঁধ। মনে পড়ল, ‘‘তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস/ আমি বেঁচে আছি তোমার ভালবাসায়…’’
দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ গুছিয়েই মাঠে নামছেন কোয়েল মল্লিক। কামব্যাক কথাটায় বেজায় আপত্তি। পিচ রঙা ঠোঁটে হালকা হাসি নিয়ে বললেন, “এই দে়ড় বছর ফুর্তিতে ট্রাভেল করেছি। রানের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। এসি আর টিভি রিমোট নিয়ে ঝগড়া করেছি। তার আনন্দই আলাদা…আমি ভীষণ খুশি। এ বার কাজে ফিরছি।”
শেষটা খুব মিঠে
তাঁর নতুন পরিচালকের নাম কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়! নামটা বলতেই বললেন, ‘‘এ রকম এক জন সেনসেটিভ পরিচালকের সঙ্গে কাজ করব ভেবেই খুব এক্সাইটেড লাগছে। কৌশিকদা মানেই পাহাড়! সেই পাহাড়ের বাঁক ধরেই নামবে নানা মনের মেঘ স্টেশন।’’
এ বার অন্য ধারার ছবি?
প্রশ্নটা শুনতেই বেশ ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘‘আমার কাছে সেটাই কমার্শিয়াল ছবি যা ভাল ব্যবসা এনে দেয়। নাচ-গানের ছবি মানেই কমার্শিয়াল ছবি, সেটা আমি মানি না। তবে কৌশিকদার এই গল্পটা শুনে খুব ভাল লেগেছিল। বিশেষ করে শেষটা এত মিঠে যে, দর্শক হল থেকে বেরিয়ে ছবিটা ভুলতে পারবে না আমি নিশ্চিত।’’
ইলিশ পোস্ত না মিষ্টি
তাঁর খেলার মাঠে এ বার দেব বা জিৎ নেই। আছেন আবীর চট্টোপাধ্যায় আর ঋত্বিক চক্রবর্তী। সঙ্গে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, বরুণ চন্দের মতো জাত অভিনেতা।
আবীরের ‘ব্যোমকেশ’ আর ঋত্বিক চক্রবর্তীর ‘শব্দ’ নিয়ে তিনি উত্তেজিত। বললেন, ‘‘ওদের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। কিন্তু জিৎ আর দেবের সঙ্গে মারামারিটা মিস করব। আরে ওরা যে ভাবে চ়়ড়, থাপ্পড় মারে, মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিতে হয় আমি অন্য জেন্ডারের।’’থেকে থেকেই হাসিতে ঝলমল করছেন তিনি। সেলফি তুলতে ভালবাসেন
না। মধ্যরাতের শ্যুটিংয়েও মায়ের সঙ্গে ফোনে রানে-র পছন্দের মেনু ঠিক করেন।
মা যদি বলেন “ইলিশ মাছ পাঠাব তো?” শ্যুটের মধ্যেই মেয়ে বলে ওঠেন, “পোস্ত আর রানের ফেভারিট মিষ্টিটাও দিও।”
চোখে জল নিয়ে রানেকে টেক্সট
তার ষোলো তলার আকাশদেখা কাচ-ঘেরা সুসজ্জিত ড্রইংরুম দেখলে মনে হবে না এটা টালিগঞ্জের জনপ্রিয় নায়িকার বাড়ি। বরং বনেদি পঞ্জাবি ঘরানার ঐতিহ্যই ছড়িয়ে আছে বাড়ির আনাচে কানাচে — “আমি আসলে আউট অফ দ্য বক্স জানেন! স্টারডমের মধ্যে বড় হয়েছি তো, আলাদা করে ‘আমি কেউ’ সেই অনুযায়ী নিজের হাঁটাচলা বদলাব এমন মনে হয়নি কখনও।”
শুধুই ছবি করে যাব। বই প়ড়ব না। ইচ্ছেমতো বেড়াতে যাব না — এমন জীবনে কোনও দিনই পা বাড়াতে চাননি তিনি।
গল্প করতে করতে রীতিমতো লাফিয়ে উঠে বললেন, “জানেন একটা সময় যখনই টেনশন হতো, কোনও কিছু ভাল লাগত না, তখন আনন্দবাজারের ম্যাট্রিমনি কলামটা দেখতাম। ভাবতাম বিয়ে করলেই বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে। সবই মিলত। কিন্তু গোলমালটা হতো, বয়স নিয়ে। আমি তখন ক্লাস এইট। ফলে বয়সটা বি়জ্ঞাপনের সঙ্গে মিলত না…।’’
হাঁটু মুড়ে গুছিয়ে আড্ডা দিতে বসেছেন। কে বলবে ক্যামেরার শাটার অন হতেই দেহভঙ্গিমায়, চাহনিতে মুহূর্তেই তিনি গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের তারা হয়ে জ্বলে উঠবেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে আড়ি পাতলেই শোনা যায় সোনার চামচ মুখে জন্মেছেন তিনি! এক দিকে বাবা রঞ্জিত মল্লিক অন্য দিকে নিশপাল সিংহ রানের মতো প্রোডিউসর স্বামী…!
ইঙ্গিতটা চট করে বুঝে ফেলেই বললেন, ‘‘সত্যি আমায় স্ট্রাগল করতে হয়নি। অন্য নায়িকাদের যাদের ডিরেক্টর-প্রোডিউসরদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হয়, কমার্শিয়াল ছবির জন্য অভিনয় করে, নাচ-গান করে দেখাতে হয়, তাদেরকে আমি কুর্নিশ জানাই।’’
যদিও তাঁর জীবনেও এসেছে মন খারাপের দিন। নায়িকা হিসেবে শুরুর দিকে এক বার হঠাৎ চোখ ভর্তি জল নিয়ে রানেকে টেক্সট করেছিলেন— ‘‘আমি ইন্ডাস্ট্রির জন্য মিসফিট!’’
আজও মনে আছে রানে সে দিন লিখেছিল, ‘ইউ আর মিস! ফিট!
জীবনের এমন কতকগুলো সময় এসেছে যেখানে নায়িকা হিসেবে একটা না একটা ‘হিট’ ছবি চাই-ই। আর এমন অতর্কিত সময়গুলোতেই কিন্তু পাশে পেয়েছেন নিশপাল সিংহ রানেকে। আর সুরিন্দর ফিল্মস্-কে।
‘মন মানে না’, ‘পাগলু’-র মতো একের পর এক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের।
গুজব গুজব এবং গুজব
সেই কোন কালে বাবা (রঞ্জিত মল্লিক) শিখিয়েছিলেন একজন নায়িকার পিছনে প্রো়ডিউসর টাকা ঢালে, ডিরেক্টর স্বপ্ন দেখে, মানুষ তাদের রোজগারের টাকা থেকে ছবি দেখতে যায়— এই টিউটোরিয়ালে বড় হয়েছেন তিনি। মনেপ্রাণে তাই-ই বিশ্বাস করেন। আর সেই মতো কাজ বেছে নেওয়া তাঁর পছন্দ। কাজ আর পরিবারে সময় ভাগাভাগিটাও বাবার শেখানো।
“কাজের সময় সব সুইচ অফ করে দিই। আবার পরিবারের সঙ্গে কাটালে স্টারডমটাকে বাড়ির বাইরে রেখে আসি।”
বাবার এই বাধ্য কন্যাটি সদ্য বাবাকে নিয়ে পড়েছিলেন ঘোর চিন্তায় — ‘‘ইউকে থেকে ফিরেছি। হঠাৎ বাবাকে নিয়ে সাংঘাতিক একটা গুজব। এ দিকে বাবা-মা তখন নিউইয়র্কে আইসক্রিম খাচ্ছে। মজা করছে। ওই সময় কারা রটিয়ে দিল, বাবা আর নেই! ভাবুন একবার! থেকে থেকে মিডিয়া হাউসের ফোন। লালবাজার থেকে পুলিশ বাড়ি অবধি চলে এসেছিল খবর যাচাই করতে।’’ শুধু কি বাবা? গুজব তো রানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক না থাকা নিয়েও!
শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ।
তার পর বললেন, ‘‘হ্যাঁ, জোর করে নানান কথা বলে সম্পর্কটা যদি শেষ করানো যেত! সে চেষ্টাও ছিল। যাকগে, যারা রটিয়েছে তাদের মানসিকতার কথা ভেবে করুণা হয়। তবে কিছু সাইটের পেজ ভিউ তখন বেড়েছিল।’’
মনে করেন পৃথিবীটা এমন অনেক শব্দে ভরা, যার অধিকাংশ কানে না তুললেও চলে। বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘‘দেখবেন, আপনার ‘ইনটিউশন’ যদি স্ট্রং হয়, তবে ওপরওয়ালা সারাক্ষণ আপনাকে পজিটিভ কিছু ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাকে সেটা ধরে এগোতে হবে,’’ একটানা বলে থামলেন।
চোখের পর্দায় হঠাৎ মনে হল তিনি যেন পি এল ট্রাভার্সের মেরি পপিনস, যার ম্যাজিক বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়েছে চুনী-পান্নার মতো সব মুহূর্ত! যে মুহূর্তগুলি জীবনের স্ক্রিপ্ট লিখে যায়!-আনন্দবাজার
মন্তব্য চালু নেই