টাকা দিয়ে অপেক্ষা করছেন নিঃসন্তান দম্পতিরা
টাকা নিয়ে শিশু হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছেন নিঃসন্তান দম্পতিরা। জলপাইগুড়ির শিশু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে এ রকমই বেশ কয়েকটি দম্পতির সন্ধান পেয়েছেন সিআইডি আধিকারিকরা। হোমের কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হতেই ওই সব দম্পতির মধ্যে বেশ কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সিআইডি’র এক কর্মকর্তার কথায়, এরা প্রায় প্রত্যেকেই শিলিগুড়ির বাসিন্দা। এই দম্পতিদের কেউ এক লাখ, আবার কেউ-বা ৬০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছেন এই চন্দনা চক্রবর্তীদের। শর্ত ছিল, বাচ্চা হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা এরা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যাওয়াতে এরা এখন এগিয়ে এসেছেন। জানতে চাইছেন তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো আশা আছে কি না।
এর আগে উত্তর ২৪ পরগণার বাদুরিয়া থেকে শিশু পাচারকারীদের দলটিকে ধরার পর সিআইডি বেশ কিছু পরিবারের সন্ধান পেয়েছিল যারা ওই দলটির কাছ থেকে শিশু কিনেছিল বা তাদের হাতে পড়ে সন্তান খুইয়েছিল। সে ক্ষেত্রে এটি সিআইডি’র কাছে একটি নতুন অভিজ্ঞতাই বটে। জলপাইগুড়ির ওই হোমটি থেকে গত ১৫ বছর ধরে অসংখ্য শিশু পাচার হয়েছে। হোম কর্তৃপক্ষ কখনও হাতে হাতে টাকা নিয়েছে, কখনও আবার ক্রেতাকে বলেছে ব্যাংকে জমা করে দিতে। শিশু বিক্রির বহু টাকা এরা দেখিয়েছে ডোনেশন বা চাঁদা হিসেবে।
সিআইডি’র এক কর্মকর্তার কথায়, খরিদ্দারদের এরা দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছিল। বিদেশের ক্ষেত্রে এরা খরিদ্দারদের বলত বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা ভাগ ভাগ করে পাঠিয়ে দিতে। এটা করার পিছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিল যাতে একবারে কোনো অ্যাকাউন্টে একসঙ্গে বেশি টাকা জমা না পড়ে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হতে পারে। কিন্তু দেশের মধ্যে এরা খরিদ্দারদের উৎসাহিত করত নগদ টাকা জমা দেওয়ার জন্য। কারণ তাতে ঝামেলা কম। এই নগদ টাকা জমা দেওয়ার পর এরা খরিদ্দারদের বলত অপেক্ষা করতে। বাচ্চা জোগাড় করার পর এরা খবর দিয়ে দিত ওই দম্পতিদের। এ রকম বেশ কয়েকটি দম্পতির সন্ধান পেয়েছি আমরা, যারা টাকা দিয়ে বাচ্চা পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছিল।
এদেরকে জেরা করে আমরা জানার চেষ্টা করছি, এরা সরাসরি হোমের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, না অন্য কারও মাধ্যমে এখানে এসেছিল। অর্থাৎ, কোনো দালালচক্র এখানে সক্রিয় ছিল কি না, সেটাও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। চন্দনা চক্রবর্তীর যে ল্যাপটপটি বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি কর্মকর্তারা, সেখান থেকে তারা শিশু দত্তক দেওয়ার বেশ কয়েকটি জাল সার্টিফিকেট উদ্ধার করেছেন। ধরা না পড়লে এই সার্টিফিকেটগুলো কাজে লাগিয়েই অভিযুক্তরা আগামীদিনে শিশুদের দত্তক দিত। এক সিআইডি কর্মকর্তাদের বলেন, এই সার্টিফিকেটগুলি এতটাই সুনিপুণভাবে তৈরি যে চট করে তা জাল কি না বোঝা যাবে না।
মন্তব্য চালু নেই