ফেসবুকে ছাত্রলীগের গুঞ্জন ॥ রক্ষক যখন ভক্ষক
টাকার বিনিময়ে জবির হল লিজ দেয়ার অভিযোগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখলে থাকা হল উদ্ধারে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন এবার তাদের বিরুদ্ধেই হল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এমপি কাজী ফিরোজ রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জবি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ফেসবুকে লিখেছেন, দলীয় কর্মীর পরিবারের কাছে টাকার বিনিময়ে হল লিজ দিয়েছেন এমপি ফিরোজ রশিদ। জবি ছাত্রলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে চলছে ব্যাপক সাইবার যুদ্ধ।
এ বিষয়ে ফিরোজ রশিদ বলেন, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম নবির পরিবার খুবই অসহায়। তারা তিরিশ বছরের বেশী বছর ধরে নজরুল ইসলাম হলে বসবাস করছিলেন। গত বছর তাদের নামে লিজ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে লিজ দেয়া হয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে পুনরায় হলটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছে লিজ দেয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে লিজ দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ধান্দাবাজ ছাত্রলীগ নেতারা চাঁদাবাজি করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। এসব মিথ্যা।
৯ এপ্রিল জবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হিমেল তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘(রক্ষক যখন ভক্ষক) জবির হল উদ্ধারের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি। তিনি সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলটি তার জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম নবীকে লীজ প্রদান করেছেন।’
১০ এপ্রিল জবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সুকান্ত ব্রক্ষ্ম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফিরোজ রশীদর জগন্নাথের বিরুদ্দে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। হল উদ্ধার আন্দোলনের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলটি তিনি ইজারা দিয়েছেন। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের ইঙ্গিত করে তিনি আরো লিখেছেন, পকেট ভারি করে যারা সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ইজারা ষড়যন্ত্র করেছে তারা এখন না জানার ভান করছে।’
হল বেদখলে যাওয়ায় জবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে ৯ এপ্রিল জবি ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রক্ত, ঘাম ঝরিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল জগন্নাথের ছাত্র ছাত্রীরা উদ্ধার করল, আর ভার্সিটি প্রশাসন হলটি কোন এক পরিবারের কাছে লিজ দিল। এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কী হতে পারে?’
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজে নজরুল ইসলাম হল এখন বড় ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। কেউ লিখেছেন, এমপি ফিরোজ ও জবি ছাত্রলীগ বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে হলটি ইজারা দিয়েছেন। কেউ আবার জবি প্রশাসনকে দায়ি করেছেন।
তবে হল উদ্ধার প্রক্রিয়ায় এমপি ফিরোজ রশিদই বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জানা গেছে। গত বছর ১২ এপ্রিল জবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হল উদ্ধার আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন জবি শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদ সহ অসংখ্যা শিক্ষার্থী। কাঁদানি গ্যাস ও লাঠিচার্জের শিকার হয়েছেন আরো অনেকে। আন্দোলন যখন তিব্র থেকে তিব্রতর হয় তখন আন্দোলনকারীদের পাশে দাড়ান ফিরোজ রশিদ এমপি। গত বছর ৩ মার্চ ফিরোজ রশিদকে আহবায়ক করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত বছর ১ এপ্রিল ওই কমিটির এক সভায় নজরুল ইসলাম হলটি জবিকে লিজ দেয়া হয়। তার এক বছর পর এমপি ফিরোজ রশিদের বিরুদ্ধেই টাকার বিনিময়ে হল লিজ দেয়ার অভিযোগ ওঠায় হতবাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। টাকার বিনিময়ে হল লিজ দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তার মনে হয়না।
জবি ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ভোরের পাতাকে বলেন, সরকারের উচ্চমহল থেকে হলটি গোলাম নবি নামের এক ব্যক্তিকে লিজ দেয়া হয়েছে। এর ফলে আমরা আর মালিকানা দাবি করতে পারিনা।
মন্তব্য চালু নেই