জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে সরকার নীরব কেন?
মার্কিন সরকারের ডকুমেন্টে উল্লিখিত সজিব ওয়াজেদ জয় ও ৩০০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা) সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে সরকার কেন টু শব্দটিও করছে না? শনিবার (২৩ এপ্রিল) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তুলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জনগণ জানতে চায় যে, সন্দেহজনক এই লেনদেনের ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উৎস কী, এই বিপুল অর্থের প্রকৃত মালিক কে? কোনো বিশেষ ব্যক্তি, না বাংলাদেশের জনগণ? আমরা আশা করি, সরকার জনগণের এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেয়ার জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
সম্মেলনে আরো বলেন, ‘পেশকৃত মার্কিন সরকারের রিপোর্টে সজিব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ কিংবা দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ আদালত গ্রহণ না করা সত্ত্বেও শুধু তার ফেসবুকে দেয়া একটা পোস্ট’র ভিত্তিতে ঢাকায় পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশ এফআইআর হলো, গোপনে তদন্ত হল, মামলা হল এবং বয়োবৃদ্ধ ও ভাল মানুষ বলে সুপরিচিত সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচার হওয়া মামলার অভিযোগপত্র, আদালতে জমা দেয়া সরকারের লিখিত রিপোর্ট, অভিযুক্ত কিংবা সাক্ষীদের কোনো জবানবন্দি, মামলার রায় এমনকি ঢাকার রমনা থানায় দায়েরকৃত এফআইআর কিংবা পল্টন থানায় দায়েরকৃত মামলার কোথাও সাংবাদিক শফিক রেহমান, বন্দি সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কিংবা বিএনপি’র কোনো নেতার নামোল্লেখ নেই। অথচ শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে, মাহমুদুর রহমানকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হল। একই কাল্পনিক অভিযোগে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি’র ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে অযথা অভিযোগ করে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকগুলোর যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে তারও কোনো বিচার হচ্ছে না। এই দুই বিষয়ের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না- এটা জানার অধিকার অবশ্যই জনগণের আছে। আর তাই জনগণ এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত চায়।’
ফখরুল বলেন, ‘সরকার দেশের, সরকার হওয়ার কথা জনগণের। সেই জনগণের সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে গুটি কতক মানুষকে অন্যায়ভাবে সম্পদের মালিক হতে দেয়ার অধিকার কোনো সরকারের থাকতে পারে না। নির্বিঘ্নে এসব লুটপাট চলতে দেয়ার ফলে আজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পর্যন্ত চুরি করা হয়েছে। এটা বন্ধ করা না গেলে আমাদের প্রিয় দেশটা ফতুর হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন,‘ আমরা তাই মিথ্যা অভিযোগে আটক সাংবাদিক শফিক রেহমানের মুক্তি ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানোর চক্রান্ত বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কাল্পলিক এবং মার্কিন আদালতে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত অভিযোগে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা থেকে বিরত থাকার জন্য সরকার ও সরকারি দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে এ ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের অন্যায়ভাবে বিব্রত ও ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে যে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সব শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় পুনরায় উল্লেখ করতে চাই যে, বিএনপি একটি জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দল হিসেবে অপহরণ কিংবা হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বরং বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের আমলেই বিএনপি এবং এর অঙ্গদল ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন। যার কোনো বিচার আজও হয়নি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আজ হোক কাল হোক এসব রাজনৈতিক অপহরণ ও হত্যার বিচার হবেই।’
মন্তব্য চালু নেই