জেনে নিন নিউমোনিয়ার ৮ টি লক্ষণ
নিউমোনিয়া শ্বসনতন্ত্রের এমন একটি রোগ যার দ্বারা শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে ৯ লক্ষ ২০ হাজার শিশু মারা যায় নিউমোনিয়ায়। যেহেতু নিউমোনিয়া জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ তাই দ্রুত শনাক্ত করতে পারলেই এর চিকিৎসায় সফল হওয়া যায়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবীর আক্রমণে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। নিউমোনিয়াকে প্রায়ই ঠান্ডা বা ফ্লু হিসেবে ভুল করা হয়। তাই নিউমোনিয়ার কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।
১। কাশি
ঘন ঘন কাশি হলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ করে। ব্যাকটেরিয়া গঠিত নিউমোনিয়া হলে সবুজ বা হলুদ শ্লেষ্মা বা কফ তৈরি করে। প্যাথোজেন যদি ফুসফুসের টিস্যুকে আক্রমণ করে তাহলে কফের বর্ণ মরিচার মত বা এতে রক্তের ফোটা দেখা যেতে পারে। প্রধানত লিগিউনেলা নিউমোনিয়ার সংক্রমণে মিউকাসের সাথে রক্ত আসতে পারে।
২। জ্বর
শিশুদের নিউমোনিয়া হলে ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে জ্বর থাকে। উচ্চমাত্রার জ্বরের সাথে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ও কাঁপার লক্ষণ ও দেখা যেতে পারে। পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে হালকা জ্বর থাকে।
৩। শ্বাসকষ্ট
নিউমোনিয়া একটি প্রদাহজনিত রোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের বায়ুথলি বা অ্যালভিওলাইগুলোকেই আক্রমণ করে জীবাণু। ফুসফুসে জীবাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে নাক ও গলার বায়ু চলাচলের পথে হানা দেয়। এর জন্য শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। শারীরিক শ্রম বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শ্বাসকষ্টও বৃদ্ধি পায়।
৪। বুকে ব্যথা
প্রদাহ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কাশিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বুকে এক ধরণের খোঁচা বা ভোঁতা ব্যথা অনুভব করেন। বুকে ব্যথা এমন পর্যায়ে যেতে পারে যে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি দিতে বা শ্বাস নিতেও কষ্ট অনুভব করে।
৫। বিভ্রান্তি
শ্বাসকষ্টের ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে বিভ্রান্তি বা চিন্তার অস্পষ্টতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে এই প্রকার লক্ষণ দেখা যায়।
৬। ঘামা
ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার জ্বর ও কাঁপুনির সাথে প্রচুর ঘাম নির্গত হতে দেখা যায়।
৭। ঠোঁট ও নখের রঙ পরিবর্তন
শ্বাসকষ্টের জন্য শরীরের কোষগুলোতেও অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে নখ ও ঠোঁটের রঙ পরিবর্তন হতে দেখা যায়। নখের গোঁড়ায় সাদা হয় এবং ঠোঁট ফ্যাকাসে বা নীলচে রঙ ধারণ করে। মারাত্মক নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে ঠোঁট, নখ এবং আঙ্গুলগুলো নীল হয়ে যায়, একে সায়ানোসিস বলে।
৮। এনার্জি কমে যায় ও অবসন্ন বোধ করে
অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে ক্লান্তি, পেশীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, সার্বিক দুর্বলতা এবং এনার্জি লেভেল কমে যাওয়ার মত সমস্যাগুলি তৈরি হয়।
যদি আপনার কাশির সাথে সাথে উপরের লক্ষণগুলোও দেখা যায় তাহলে আপনি হয়তো নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ধরে নিতে হবে। এমতাবস্থায় দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। না হলে ফুসফুসের সংক্রমণ তীব্র আঁকার ধারণ করতে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আপনার ইমিউন সিস্টেম যদি দুর্বল হয় অথবা আপনার যদি একবার এই সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
মন্তব্য চালু নেই