জেনে নিন, জুমার দিনের ফযীলত ও নামাজে মনোযোগী না থাকার কারণগুলো !

ইসলামী শরীয়তের বিধানে জুমার দিনের মাহাত্ম্য সীমাহীন। এই দিন মানব জাতির আদি পিতা- হযরত আদম (আঃ) এর দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয়েছিল বলেই দিনটির নাম জুমা রাখা হয়েছে। জুমার দিনকে আল্লাহ্পাক সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন। হাদীস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী এই বরকতময় দিনটি আল্লাহ্পাক বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মদীকে (সঃ) দান করেছেন।

নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই পবিত্র দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (মুসলিম শরীফ)

জুমার সমগ্র দিনটিই অপেক্ষারঃ

হাদীস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ্পাক জুমা দিবসের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত লুকিয়ে রেখেছেন, যে সময়টাতে দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) বলেন, জুমার সমগ্র দিবসটির মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত লুকিয়ে আছে যে সময়টাতে কোন বান্দা যদি নামাযরত থাকে বা- তাসবীহ্-তাহলীল কিংবা দোয়ায় মশগুল থাকে তবে আল্লাহ্পাক তাঁর আকুতি অবশ্যই কবুল করে থাকেন।

এই হাদীসের মর্ম অনুযায়ী বুঝা যায় যে, জুমার দিন সবটুকুই অপেক্ষার। আল্লাহ্র নিকট দোয়া কবুল করানোর জন্য দিনভরই প্রস্ত্ততি থাকতে হবে।

সালাত আরবী শব্দ, বাংলায় নামাজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো নামাজ। নামাজ বান্দাকে আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে সাহায্য করে। নামাজের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা আসে। নামাজ বান্দাকে সুন্দর পথ দেখায়। নামাজের মাধ্যমে শারীরিক কসরত হয়। সুস্থ থাকতে বান্দাকে সাহায্য করে।

হাদীসে বলা হয়েছে, বান্দা যখন সিজদায় যায় তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় হয়। কোরআনে প্রায় ৮২বার আল্লাহ নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন। হাদীসে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অনেক তাগিদ দিয়েছেন নামাজ আদায়ের ব্যাপারে।

নামাজ হলো এমন এক ইবাদত যা মুসলিম ও অমুসলিম এর মাঝে পার্থক্য করে দেয়। নামাজ মানুষকে সব প্রকার পাপ কর্ম থেকে দূরে রাখে। নামাজেই কেবলমাত্র মানুষের অন্তরকে শান্তি দিতে পারে।

কিন্তু নামাজ আদায় করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেরই মনোযোগ থাকে না। কল্পনার জগতে মানুষ বড়ই বেপরোয়া। নামাজে ইচ্ছা করেও ধরে রাখতে পারে না মনোযোগ।

নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকলে বান্দা বিপথগামী হয়ে পড়ে। নিজেকে সংশোধনী থেকে বিরত রাখে। শয়তান বান্দাকে সে পথেই ধাবিত করতে থাকে।

eid-mubarak-namaz

নামাজে যতসব কল্পনা। অনেক কঠিন বিষয়ের সমাধান খুব সহজে চলে আসে নামাজে দাঁড়ালে। অনেক জটিল হিসাব খুব সহজে মিলে যায়। কেন সালাত (নামাজে) মন থাকে না তার বাস্তবসম্মত কিছু কারণ তুলে ধরা হলো। এসবের কারণ হতে পারে নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক বিষয়ে।

১. সালাতকে নিছক ধর্মীয় অনুষ্ঠান মনে করা : কেবলমাত্র কিছু মুখস্ত সুরা, দোয়া, মন্ত্রের মত পাঠ করা। তারপর রুকু করা, সিজদাহ করা- এভাবে নামাজ শেষ করা। পুরো বিষয়টি কেমন যেন একটা যান্ত্রিকতা ও অনুষ্ঠানিকতা। সালাতের সাথে অন্তরের একটা যে যোগসাজশ আছে তা অনেকেরই উপলব্ধি হয় না।

২. সালাতকে যথাযথ মূল্যানয় না করা : দৈনন্দিন আর পাঁচটা কাজের মত মনে করা। অথচ দুনিয়া আখেরাতে কামিয়াবির একমাত্র উপাই।

৩. পাপ কাজে ডুবে থাকা : নিয়মিত সালাত আদায় করা সত্ত্বেও অনেক মুসল্লি আছেন যারা প্রকাশ্য ও নিয়মিত পাপে ডুবে থাকেন। মানুষ স্বভাবত যেসব করে তা তার সব সময় মনে থাকে। নামাজে সিনেমার কোনো অংশ মনে আশাটা অসম্ভব নয়। অনেকে আবার নাটক, সিনেমার, মাঝে মাঝে বিরতি বা অ্যাড দেয়ার সময় খুব তাড়াতাড়ি করে নামাজ সেরে ফেলেন।

৪. অর্থ না বোঝা : সালাত যেহেতু পুরোটাই আরবি ভাষায় তাই এর অর্থ আমরা সহজেই বুঝি না। অর্থ না বোঝার ফলে আমাদের মুখস্ত সুরাগুলো মুখে বলতে থাকি কিন্তু অলস অন্তর অন্য চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। আর যদি বোঝা যেত তাহলে অন্তর সেটা নিয়ে ভাবতো।

৫. আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার বেশি মূল্যায়ন করা : আজকাল সবাই সাথে সাথে ফিড ব্যাক পাওয়ার চিন্তা বেশি করে। নামাজের ওয়াক্তে অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে নামাজকে ভুলে। বিশেষ করে উপার্জনের ব্যাপারে ইসলামের তোয়াক্কা না করা।

৬. সালাতের হুকুম আহকাম ঠিকভাবে অনুসরণ না করা। রাসুলে কারীম (সা.) যেভাবে নামাজের নিয়ম দেখিয়েছেন তা সঠিকভাবে না মানা।

৭. শয়তানের ধোঁকা : যেহেতু সালাত সবচেয়ে বড় ইবাদত তাই এতে শয়তানের ধোঁকাও বেশি। শয়তান তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বান্দার সালাত নষ্টের কাজে নেমে পড়ে। কিছু শয়তানের এ ব্যাপারে কাজ ভাগ করে দেয়া থাকে। সালাতে এদিক ওদিক তাকানো এটাও শয়তানের প্রভাবের ফল।

৮. নিয়মিত কোরআন-হাদীস পাঠ না করা। কোরআন-হাদিস নিয়মিত পাঠ না করলে শয়তান বান্দাকে অন্যদিকে ধাবিত করে।



মন্তব্য চালু নেই