জীবে দয়ার প্রতি ইসলামের গুরুত্ব

আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে নানা প্রজাতির প্রাণি সৃষ্টি করেছেন। মূলত মানুষের প্রয়োজনেই এসবের সৃষ্টি। জীববৈচিত্র্য না থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য থাকতো না, মানুষের বসবাস করাও দুরুহ হয়ে ওঠতো। আমাদের খাদ্যসহ জীবনধারণের অনেক উপকরণ আমরা প্রাণিদের কাছ থেকেই পেয়ে থাকি। বিভিন্ন জীবের অল্প অল্প ভূমিকার ফলে আমাদের পরিবেশ সমৃদ্ধ হয়। এরা আমাদের এ ধরাকে বাসযোগ্য রাখার জন্য অনবরত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমাদের প্রয়োজনের তাগিতেই প্রাণিদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।

ইসলাম জীবে দয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ কোমল, তিনি সব কাজে কোমলতা পছন্দ করেন।’ হাদিসে আছে, ‘তোমাদের সহজ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোরতা আরোপের জন্য পাঠানো হয়নি।’ দয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে রাসুল (সা.) মানুষ ও জীবজন্তুকে একই চোখে দেখেছেন। মহানবীকে (সা.) আল্লাহ পাঠিয়েছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ। জীববৈচিত্র্যও তার রহমতের আওতাধীন।

আমরা অনেকেই পশু-পাখি ভালোবাসি, আবার অনেকে এদের কষ্ট দিই। কিন্তু হাদিসে জীব-জন্তুর ওপর দয়া করার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, একবার এক ব্যক্তি পথ চলছিলেন, এ সময় খুব পানি পিপাসা পেলে তিনি রাস্তার পাশের কুয়ায় নেমে পানি পান করলেন। এরপর তিনি কুয়া থেকে উঠে দেখলেন, একটি পিপাসার্ত কুকুর হাঁপাচ্ছে আর নিজের পা চাটছে। তখন তিনি আবার কুয়ায় নেমে নিজের মোজায় পানি ভরে মোজাটি কামড়ে ধরে উপরে উঠলেন এবং কুকুরটিকে পানি পান করালেন। আল্লাহ তার এ কাজটি কবুল করলেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলে কি আমাদের সওয়াব মিলবে? তিনি বললেন, প্রত্যেক সজীব বস্তু ও প্রাণির উপকার করাতেই সওয়াব রয়েছে।

যেসব প্রাণি সরাসরি আমাদের উপকারে আসে সেগুলোর যতœআত্তি তো করতে হবেই, এমনকি মানুষের জন্য ক্ষতিকর প্রাণিও নির্বংশ করা যাবে না। কারণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সব ধরনের প্রাণির অস্তিত্ব দরকার। যেমন সাপ বাহ্যত আমাদের ক্ষতি করে। কিন্তু সাপের অস্তিত্ব পরিবেশের জন্য অনেক বড় নেয়ামক। এছাড়া শীতকালে যেসব অতিথি পাখি আমাদের দেশে আসে সেগুলো পাইকারি হারে শিকার করলেও পরিবেশের ভারসাম্য হারাবে। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই সবার উচিত জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।



মন্তব্য চালু নেই