জীবিকার তাগিতে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে ভ্যানের প্যাডেলে পা রাখতে হয় সখিনাকে

চলে গেল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতি বছর নারী দিবস আসে, নারী দিবস যায়, সভা সেমিনার মানব বন্ধন হয়, তবে ভ্যাগের চাকা ঘোরে না নারী ভ্যান চালক সখিনার। খেয়ে পরে বাঁচতে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে ভ্যানের প্যাডেলে প্রতিদিন পা রাখতে হয় তাকে।

আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে আছে এমন অনেক সংগ্রামী নারী। প্রতিবন্ধী মেয়েকে পুজি করে ভ্যান চালিয়ে এ দোকান থেকে ও দোকান, এ রাস্তা থেকে ও রাস্তা, এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি ঘুরে প্রাপ্ত সাহায্যের টাকায় ও ভ্যানে যাত্রী বাহন করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বন্যাগাড়ী গ্রামের সখিনা খাতুন (৪৫)।

সখিনা ঐ গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। উপজেলার বন্যাগাড়ী গ্রামের মৃত আহামের মেয়ে সখিনার বিয়ে হয় একই গ্রামের নুরুল ইসলামের সাথে। তাদের সংসার ভালোই চলছিল। পরিবারে জন্ম নেয় ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। মেয়েটি জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। প্রায় ১২ বছর আগে নুরুল ইসলাম মারা গেলে সংসারের হাল ধরতে হয় সখিনাকে।

সখিনার বাবার দেওয়া একটি পৌত্রিক ভিটায় ঝুপরি ঘর উঠানো রয়েছে। এই ঝুপরীতেই রাতের বেলায় তাদের নিদ্রাটুকুু চলে। নিজের পরিবারের তিন জনের ভরণপোষণ, খাবার ও সংসারের খরচ চালাতে কাক ডাকা ভোর বেলায় মেয়েকে নিয়ে ভ্যানের প্যাডেল মেরে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়তে হয় সখিনাকে।

ঝড়, বৃষ্টি, রোদেলা দুপুর, রাত বিরাত উপেক্ষা করে উপজেলার সড়ক গুলোতে ভ্যান চালিয়ে জীবিকার সন্ধান করেন তিনি। উপার্জন করেন কিছু নগদ অর্থ, যা দিয়ে চলে তাদের সংসার। সখিনার ছেলে অন্যের বাড়ীতে শ্রম বিক্রয় করে। সখিনা জানান, ছেলের বাবা মারা যাবার পর সংসারের হাল আমাকেই ধরতে হয়েছে। মানুষের বাড়ী বাড়ী কাজ করতাম। সময় মত কাজ পাওয়া যায় না।

এজন্য ঋণে ভ্যান গাড়ী তুলে নিয়েছি। রাস্তায় বের হলেই ভাড়া মেলে, মেলে টাকা। মানুষ কিছু সাহায্যও করে। এতেই দু‘বেলা খাবার যোগারের চেষ্টা করছি। তবে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে করুন অবস্থায় জীবন যাপন করছি। এ যুদ্ধ যে আর কতদিন করতে হবে জানি না।

৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল হাকিম জানান, সখিনার স্বামী মারা যাবার পর ছেলে ও প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অকুল পাথারে পরে সে। বাবার দেওয়া একটু জায়গায়াতে ছাপড়া তুলে থাকে এবং ভ্যান চালিয়ে জীবন যাপন করছে।

মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, বন্যাগাড়ী গ্রামের সখিনা প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে করুন জীবন পার করছে। প্রতিবন্ধী মেয়েটির নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডও করে দেওয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই