জীবন দিয়ে এনজিওর ঋণ শোধ করলেন কৃষক রসুল

প্রান্তিক কৃষক গোলাম রসুল মোল্যা (৬৮) দুটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে নমিনি হয়ে স্ত্রী জামিলা বেগমের নামে ঋণ নিয়েছিলেন। দেনা শোধ করতে সব টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না।

এনজিও কর্মীদের চাপ আর গালমন্দের কারণে বাড়ির পাশে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। মাগুরার মহম্মদপুরের পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের মণ্ডলগাতি গ্রামে বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এনজিওর নিয়মানুযায়ী স্বামীর মৃত্যু হলে মওকুফ হয় স্ত্রীর ঋণ। তাই জীবন দিয়ে হলেও ঋণ শোধ করে গেলেন স্বামী। এটাই স্ত্রী জামিলা বেগমের সান্ত্বনা।

জামিলা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মণ্ডলগাতি গ্রামের প্রান্তিক কৃষক গোলাম রসুল মোল্যা। অভাবের সঙ্গে সংগ্রাম করেই জীবনের ৬৮ বছর পার করেছেন। টানাটানির সংসারে দুটি ছেলে মোহাম্মদ ও মিন্টু। তারা দরজি ও নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাদের পৃথক সংসার।

রসুল মোল্যা ধারদেনা মেটাতে স্ত্রী জামিলার নামে বেসরকারি সংস্থা রোভার নহাটা শাখা থেকে ১৬ হাজার ও গ্রামীণ ব্যাংকের পলাশবাড়িয়া শাখা থেকে ১৮ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন।

এনজিওর নিয়মানুযায়ী ঋণ প্রদান করা হয় নারী সদস্যদের নামে। আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার নিতে হয় পুরুষ সদস্য অর্থাৎ স্বামীর। দুটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে তাকে প্রায় দেড় হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। সংসারে উপার্জন না থাকায় কয়েকটি কিস্তি খেলাপি হয়ে পড়ায় তার ওপর এনজিওর চাপ বাড়তে থাকে।

বুধবার এনজিও রোভার মাঠকর্মী মো. মঞ্জুর কিস্তি আদায়ের জন্য কয়েক দফা রসুলের বাড়ি আসেন। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আবার বাড়িতে এসে ঋণের কিস্তির জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে তিনি তাকে গালমন্দ করেন এবং বাড়ির জমি বিক্রির কথা বলে চলে যান।

রাত পৌনে ৯টার দিকে গোলাম রসুল বাড়ির পেছনে আমগাছের ডালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে পরিবারের লোকজন পুলিশকে খবর দেন।
রসুলের স্ত্রী জামিলা বেগম বলেন, ‘এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তিনি আত্মহত্যা করেন।’

মহম্মদপুর থানার এএসআই আনোয়ার জানান, ঋণের জালে জড়িয়ে দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যা করেন গোলাম রসুল।

রোভা এনজিওর নহাটা শাখার ব্যবস্থাপক জয়দেব বিশ্বাস বলেন, ‘তার ঋণ ছিল, তবে চাপ দেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। নিয়মানুযায়ী তার বকেয়া টাকা মওকুফ করা হবে। সংস্থা থেকে তার পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই