জাল সনদ ব্যবসায়ী পাচ্ছেন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়

সনদ বাণিজ্যের মূল হোতা ও চার বিতর্কিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত মালিক আবুল হোসেন আবারও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ কাজে তিনি এবার হাতিয়ার করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে।

জানাগেছে এরইমধ্যে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সম্মতি নিতে উঠে পড়ে লেগেছেন আবুল হোসেন। বিরোধী দলীয় নেতাকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব টাস্ট্রির (বিওটি) চেয়ারম্যান করে আর আবুল নিজে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি (অবৈধ শাখা), রয়েল ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সনদ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সনদ বাণিজ্যের মূল হোতা ছিলেন আবুল হোসেন। সনদ বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবুল হোসেন গাজীপুরে খাজা মাঈন উদ্দীন চিশতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন করলে সনদ বাণিজ্যের আশঙ্কায় তা নাকচ করে দেওয়া হয়। এবার তিনি বিরোধী দলীয় নেতাকে হাঁতিয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য দৌঁড়ঝাপ করছেন। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটিতে জাতীয় পার্টির এক সংসদ সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের পুত্রকেও রাখা হয়েছে। আবুলকে বিওটিতে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিলে তা সনদ বাণিজ্যের কারখানায় পরিনত হবে বলে তারা আশঙ্কায় রয়েছেন।

তারা আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে প্রথমে ইউজিসিতে আবেদন করতে হয়। পরে তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে আবুল হোসেন বিরোধী দলীয় নেতাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাতে প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছেন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সার সংক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৮ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।

এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর ইউজিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য আবেদন করেছেন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট-২ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন না করায় আপাতত ইউজিসি পরিদর্শনে যাচ্ছে না।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান প্রস্তুাবিত ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র অনুমোদনের আবেদন পত্র প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইউজিসিতে এসছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে আবুল হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় আমরা এখনও সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য কাউকেই পাঠাইনি।

জানা গেছে আবুল হোসেন নিজেকে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী পরিচয় দিলেও এটি ভুয়া। ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক দলের পরিচয় বদল করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী নবীন লীগের সভাপতি পরিচয় দিচ্ছেন।

রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিওটিতে আবুল হোসেন থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহের শিক্ষাবিদ, সুধীমহল ও শিক্ষানুরাগীরা। তাদের মতে, আবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলে সনদ বাণিজ্য হবে। যার কলঙ্ক বহন করতে হবে রওশন এরশাদকে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরার বিএনএস সেন্টারের দুটি ফ্লোরে অবৈধভাবে দারুল ইহসান এবং প্রাইম ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস খুলে ছিলেন আবুল হোসেন। একই ভবনে কেএসবি নামে একটি শিক্ষার্থী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়েরই মালিক দাবিদার ছিলেন আবুল হোসেন।

এছাড়া রয়েল ইউনিভার্সিটিও ছিল একই ভবনে, যার মালিকানাও দাবি করেছিলেন আবুল হোসেন। জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে অন্যের বিশ্ববিদ্যালয় নিজের বলে দাবি করাই এই ব্যক্তির অন্যতম কাজ বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রস্তাবিত রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে ভাল মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকতে চাই। তবে ইউজিসি কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই