জার্মানরা আবিষ্কার করলো কৃত্রিম সূর্য

মানুষের প্রয়োজনে বিজ্ঞানীরা কত কিছুই না উদ্ভাবন করেছেন। উদ্ভাবনের তালিকায় কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে প্রাণীর ক্লোন পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে। এছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য রোবট থেকে শুরু করে কৃত্রিম মেঘ তৈরির কথাও শোনা গেছে।

এবার জার্মানির বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকৃতির কৃত্রিম সূর্য। কিন্তু কি কাজে লাগবে বিপুল পরিমাণে তাপ উৎপাদনকারী এই কৃত্রিম নক্ষত্র?

সূর্যের উপস্থিতি প্রাণী জগতের জন্য অনেক জরুরী। কিন্তু সব দিন একইভাবে পৃথিবীতে সূর্য আলো ও তাপ ছড়ায় না। যে কারণে অনেক সময়ই বাধাগ্রস্ত হতে পারে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড।

যখন পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকে না, তখন সোলার প্যানেল বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকাজ কিভাবে চলবে? যেহেতু সোলার প্যানেলের মূল খাবার আসে সূর্যের আলো থেকে, ফলে পৃথিবীর যেসব দেশে প্রায়ই সূর্যের দেখা মেলে না, তারা রীতিমত বিপদে পড়েন।

সেই সংকটের জবাব খুঁজতে গিয়ে জার্মানির বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কৃত্রিম এক সূর্য, যাকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কৃত্রিম সূর্য। বিজ্ঞানীদের এই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. কাই উইগহার্ট, যিনি জার্মানির ইন্সটিটিউট অব সোলার রিসার্চ এর প্রধান।

তিনি বলছেন, ”এই সূর্যের মাধ্যমে আমরা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কৃত্রিম আলো পাবো, যা খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে পশ্চিম জার্মানির মত জায়গায়, যেখানে প্রতিদিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না এবং আবহাওয়াও খুব একটা ভালো নয়।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেখানে প্রতিদিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না এবং আবহাওয়াও খুব একটা ভালো নয়, সেখানে এই সূর্যের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কৃত্রিম আলো পাওয়া যাবে
কিন্তু কিভাবে কাজ করে এই কৃত্রিম সূর্য?

১৪৯টি ফিল্ম প্রজেকশন লাইট একত্রিত করে আলো প্রক্ষেপণ করা হয়। আর সেই সম্মিলিত আলো প্রতিদিন সূর্যের যে রশ্মি পৃথিবীতে আলো ছড়ায় তার তেকে দশ হাজার গুন বেশি শক্তিশালী। এই আলোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আগামী দিনের সোলার বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারছেন।

ড. কাই এটিকে এখনো একটি নিরীক্ষা বলেই অভিহিত করছেন। তিনি বলছেন, ”এটা আমাদের প্রথম নিরীক্ষাগুলোর একটি, যেটি খুবই সাধারণ আর প্রথাগত। একে আপনি একটি সোলার হাইড্রোজেন রিঅ্যাক্টর বলতে পারেন। এই রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে সৌরশক্তি ব্যবহার করে আমরা পানিকে ভাগ করে ফেলার প্রক্রিয়া তৈরি করছি।

এর ফলে আমরা শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারব এবং সেটিকে সামনের দিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। নির্দিষ্ট কোন একটি দিকে আলো প্রক্ষেপণ করলে, সেটি কোন এলাকাকে প্রায় ৩০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করে তুলতে পারবে। যা যেকোনো জ্বলন প্রক্রিয়ার চেয়ে বেশি।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু হাইড্রোজেন পুড়লে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় না, তাই ভবিষ্যতে হাইড্রোজেনকেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত হবে।বিজ্ঞানীদের বানানো এই কৃত্রিম সূর্যটির যে বিশাল এক যন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে, তার উচ্চতা তিনতলা একটি ভবনের সমান। সেখানে ১৪০ জেনন শর্ট আর্ক ল্যাম্প জ্বলছে।

এ প্রচণ্ড তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগেই সোলার রেডিয়েশন ব্যবহার করে হাইড্রোজেন তৈরি করা পদ্ধতি উদ্ভাবনা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম সূর্যের মাধ্যমে যে পরিমাণে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা সম্ভব, তা কেবল জ্বালানি হিসেবে নয়, ব্যবহার করা যাবে শিল্প খাতেও।-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই