জামায়াত-শিবিরের টার্গেট ২০২৮

জামায়াত-শিবির ২০২৮ সালকে টার্গেট করে এক মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ওই সালে ছাত্রশিবিরের বয়স হবে ৫০ বছর। তাই ৫০ বছর পূর্তি সামনে রেখেই তাদের এই মহাপরিকল্পনা বলে জানা গেছে।

 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির আপাতত বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে থাকবে না। তারা কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও করবে না। কারণ, তারা মনে করছে, ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরই মুখ্য ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তাদের ঘাড়ের ওপর ভর করেই চলে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন-সংগ্রাম। তবে বিএনপি যদি কখনো সরকার পতনের আন্দোলনে নামে, তাহলে তার গতিপ্রকৃতি দেখে, শুনে এবং বুঝে সেই আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দেবে জামায়াত-শিবির। এজন্য অযথা প্রাণ ঝরাবে না তারা।

 

সম্প্রতি জামায়াতের মজলিসে শুরার এক সভায় এ ধরনের কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে দলের অনেক নেতাই মন্তব্য করেছেন, ‘ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও আওয়ামী লীগের মতো হরিলুটে ব্যস্ত থাকবে। সুতরাং এই মুহূর্তে জামায়াত-শিবিরের ক্ষমতার দরকার নেই। তাদের দরকার শুধু দলে নেতা-কর্মী তৈরির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।’

 

সে লক্ষ্যে দেশের সব সেক্টরে জামায়াত-শিবিরের লোক ঢোকানোর মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। শিবিরের ৫০ বছর পূর্তি বা রজতজয়ন্তী পালনের আগেই তাদের অবস্থান দৃঢ় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দলটির নেতাদের ধারণা, এ সময়ের মধ্যে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবেন তারা। বিশেষ করে, সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনিক ক্যাডারে জামায়াত-শিবির সমর্থকদের ঢোকানের ব্যাপারে বেশি তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি।

 

নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা সম্প্রতি রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ‘২০২৮ সালের মধ্যে ডাক্তার, পুলিশ, বিজিবি, শিক্ষক, সরকারি আমলা, আইনজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব সেক্টরে বেশিরভাগ লোকই থাকবে জামায়াত-শিবিরের। এসব স্থানে শক্ত অবস্থান তৈরির পর দেশে একটা বিপ্লব ঘটানো হবে।’

 

ওই নেতার মতে, মিশরে ব্রাদারহুডের ৯০ শতাংশ সমর্থক থাকার পরও সেনাবাহিনীতে লোক না থাকার কারণে মুরসি সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা মনে করি, এটা আমাদের জন্য বড় সংকেত এবং শিক্ষা। তাই আমরা চাই, সেনাবাহিনীতে আমাদের সমর্থকদের আধিপত্য কায়েম করতে।’

 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যা করে করুক, তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। আমাদের কাজে বাধা না দিলেই হলো। প্রয়োজনে তারা যুগ যুগ ক্ষমতায় থাক। শুধু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অবৈধভাবে ফাঁসি না দিলেই হলো।’

 

পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চাওয়া হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিলে কী করবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়া হলে আবার আগের মতো পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামব আমরা। তবে এ মেসেজ আমরা ইতিমধ্যেই সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি।’

 

সরকারের সঙ্গে আঁতাত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ওই নেতা আরো বলেন, ‘আমরা আঁতাত করলে জামায়াতের তরুণ নেতা ড. মাসুদকে  বিনা দোষে গ্রেফতার হতে হতো না। আবার রিমান্ডের নামে তার হাত-পায়ের নখও তুলে নিত না পুলিশ। তা ছাড়া, জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। শত শত নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এত সবের পরও আপনারা কী করে ভাবেন, আমরা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা বা আঁতাত করেছি? আমাদের সঙ্গে সরকারের কোনো আঁতাত হয়নি, আর হবেও না।’

 

জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি হচ্ছে না- এটা কি আঁতাতের কারণে নয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই প্রভাবশালী জামায়াত নেতা আরো বলেন, ‘এটা সবাই জানে, সরকার কেন ফাঁসি দিচ্ছে না। কারণ, দেশের মানুষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে নেয়নি। তার প্রমাণ উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে পাওয়া গেছে। তা ছাড়া জামায়াতের সফলতায় সরকার ভয়ে আছে, না জানি কী হয়? সেই সঙ্গে সরকারের ওপর বাইরের প্রচণ্ড চাপও আছে। যে কারণে জামায়াত নেতাদের ব্যাপারে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সরকার।’

 

মজলিসে শুরার বিশেষ বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জামায়াত নেতা বলেন, ‘আগামী মার্চের মধ্যে দেশে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য বিএনপি নেতাদের কথার আন্দোলনের চেয়ে মাঠের আন্দোলনে বেশি ভূমিকা রাখা দরকার। তা হলেই হয়তো দেশে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে।’

 

এ বিষয়ে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘জামায়াত-শিবির সব সময় পজিটিভ রাজনীতি করে। কোনো প্রকার সহিংসতা জামায়াত বিশ্বাস করে না, তা সমর্থনও করে না। আমরা ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য আন্দোলন করি। জোট আমলে আমাদের দুজন মন্ত্রী ছিলেন। তারা দুর্নীতি করেছেন- এমন কথা চরম শত্রুও বলতে পারবে না। দেশের ইতিহাসে এটা বিরল, যা অতীতের সব ভালো রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। কারণ, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা সব সময় উত্তম চরিত্র গঠনের মধ্য দিয়ে যুবসমাজকে রক্ষার আন্দোলন করছে। তারা লেজুড়বৃত্তি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।’

 

জামায়াতের এই নেতার কথার সত্যতা খুঁজতে কথা হয় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট কবির আহমেদ কোরেশীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গোটা আদালত চত্বরে এখন জামায়াত-সমর্থক আইনজীবীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। ২০২৮ সাল যদি তাদের টার্গেট হয়ে থাকে, তবে এই অঙ্গনে ৯০ শতাংশ না হলেও ৭০ শতাংশ আইনজীবীই হবে তাদের। কারণ, জামায়াত টার্গেট নিয়ে কাজ করে। তাদের মতো অন্য কোনো দল টার্গেট নিয়ে এগোয় না। তবে এই দেশে তাদের হাতে ক্ষমতা আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

– See more at: http://www.risingbd.com/detailsnews.php?nssl=256076e2c265c8190bb498e3ed500ae6#sthash.wp3tX4SX.dpuf



মন্তব্য চালু নেই