জামাতে নামাজে যে ভুলগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে

আমরা মুসলমান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া আমাদের ওপর ফরজ। আর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলে অনেক গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। সেজন্য অনেকেই জামাতে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু জামাতে নামাজ পড়ার আগে ও পরে কতগুলো ভুল আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করে থাকি, যা কাম্য নয়। অনেক মুসলিম জানেন না, এগুলো আসলে ভুল।

নিম্নে কিছু ভুলের নমুনা প্রদান করা হলো, যাতে আমরা সাবধানতা অবলম্বন করতে পারিঃ

১. তাড়াহুড়ো করে অজু করাঃ

অজুর ফরজ চারটি। মুখমণ্ডল, হাত, উভয় পা টাখনুসহ ধুয়ে মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা। তাড়াতাড়ি অজু করতে গিয়ে অনেকেই শরীরের কোনো কোনো স্থান শুকনো রাখেন নিজের অজান্তে। অজু না হলে নামাজই হবে না। তাই অজুতে তাড়াহুড়ো না করা ভালো। তবে অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করা উচিত। হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়।’ (মুসলিম)।

২. নামাজের জন্য দৌড়ে যাওয়াঃ

অনেক মুসলি্ম জামাত ধরার জন্য দ্রুত হেঁটে বা মাঝে মাঝে দৌড় দিয়ে নামাজে দাঁড়ান। কেউ কেউ হাঁপাতেও থাকেন। এ অবস্থাতেই প্রথম রাকাত চলে যায়। এটা মহানবী (সা.) নিষেধ করেছেন। আপনি ধীর-স্থিরভাবে হেঁটে গিয়ে জামাতে দুই রাকাত পেলে সেটাই পড়বেন আর বাকিটা নিজে শেষ করবেন।

৩. কাতারে জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখাঃ

মসজিদে অনেক সময় দেখা যায়, কেউ আগে থেকেই জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছেন। অন্য কেউ সেখানে দাঁড়াতে পারেন না। আবার অনেকেই দুই পা বেশি ফাঁক করে দাঁড়ান। এটা অনুচিত। মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে স্থান রিজার্ভ রাখার নিয়ম নেই। উনি ‘হাজী সাহেব বা মুরুবি্ব’ এসব দোহাই দিয়ে সামনের কাতারে জায়গা রাখা ঠিক নয়। সবার অধিকার সমান।

৪. ফজরের সুন্নতে তাড়াহুড়ো করাঃ

ফজরের জামাতে একটা কমন দৃশ্য দেখা যায়। সেটা হলো, জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। এ সময় কয়েকজন দৌড়ে মসজিদে ঢুকলেন। তাড়াতাড়ি সুন্নতের নিয়ত করে দাঁড়ালেন। রুকু-সিজদাও দিলেন তাড়াতাড়ি। উদ্দেশ্য একটাই, যাতে ফরজ নামাজটা ইমামের সঙ্গে জামাতে ধরা যায়। এমন অযাচিত তাড়াহুড়ো করা নিষেধ। হাদিসে এ ব্যাপারে নির্দেশনা আছে, যদি কেউ ফজরের জামাতের আগে মসজিদে যেতে পারেন তাহলে সুন্নত শেষ করবেন। আর যদি দেরি হয়ে যায় বা জামাত দাঁড়িয়ে যায় দেখতে হবে সুন্নত পড়লে জামাত ধরা যাবে কি না। সুন্নত পড়তে পড়তে জামাত চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে সরাসরি ইমামের সঙ্গে জামাতে শামিল হতে হবে এবং জামাতের পর বাকি নামাজ শেষ করতে হবে।

৫. তাকবিরে তাহরিমা না পড়ে রুকুতে যাওয়ঃ

জামাতে প্রচলিত অন্যতম ভুল হলো তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) না পড়ে রুকুতে যাওয়া। এটা মসজিদে অহরহ দেখা যায়। ইমাম যখন জামাতের মধ্যে রুকুতে যান, তখন অনেককে দেখা যায় ওই রাকাতটি ধরার জন্য তাড়াতাড়ি একটি তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে বলতে রুকুতে চলে যান। এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারণ, যে তাকবিরটি বলে মুসলি্ল রুকুতে চলে যাচ্ছেন সেটাকে রুকুর তাকবির বলা যায়। তাহলে তার তাকবিরে তাহরিমা তো আদায় হয়নি। অথচ তাকবিরে তাহরিমা ফরজ। কাজেই ইমামকে রুকুতে পেতে হলে প্রথমে দাঁড়িয়ে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে একবার আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করবে। তারপর হাত না বেঁধে সোজা ছেড়ে দেবে। অতঃপর আরেকটি তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে বলতে রুকুতে যাবে।



মন্তব্য চালু নেই