জানুন ভিটামিন বি ১২ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা
ভিটামিন বি ১২ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য বি ভিটামিনের মতোই ভিটামিন বি ১২ ও এনার্জি মেটাবলিজম এবং অন্যান্য জৈব প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। ভিটামিন বি ১২ শুধুমাত্র প্রাণীজ উৎস থেকেই পাওয়া সম্ভব। গরুর কলিজা, স্যামন মাছ, টুনা মাছ, দুধ, দই, মুরগীর মাংস, পনির, ডিম ইত্যাদি খাদ্যে ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়। ভিটামিন বি ১২ এ কোবাল্ট নামক ধাতব উপাদান থাকে বলে এর নাম কোবালামিন।
ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতির ফলে হাত এবং পায়ে সংবেদনের অভাব দেখা দেয়। এর পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, হাঁটার সময় সমন্বয় করতে না পারা, ইনসমনিয়া, নিদ্রালুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, এবং মাথাব্যথার সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও বিষণ্ণতা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, জিহ্বা ফুলে যাওয়া, অস্বাভাবিক শব্দ শোনা ও স্নায়বিক রোগ হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। চলুন জেনে নিই ভিটামিন বি ১২ এর স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়ে।
১। এনার্জি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
শক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন বি ১২। এটি কোষকে খাদ্য সরবরাহ করতে এবং স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করে। এটি ছাড়া আপনার শরীরের কোষ ক্ষুধার্ত হয়ে দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে যায়। পুষ্টি উপাদান থেকে কোষে শক্তি মুক্ত হয় এবং আপানার ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা আপনার চিন্তা করার জন্য ও চলাফেরা করার জন্য প্রয়োজনীয়।
২। হৃৎপিন্ডকে সুরক্ষা দেয়
আপনার হৃৎপিন্ড এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমের জন্য ভিটামিন বি ১২ প্রয়োজনীয়। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে রক্ত থেকে হোমোসিস্টিন নামক বিপদজনক প্রোটিন সরিয়ে ফেলা। হোমোসিস্টিন ধমনীর ক্ষতি সাধন করে যার ফলে ইনফ্লামেশন ও হার্ট ডিজিজ হয়। তাই হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন বি ১২ পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৩। হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয়
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অষ্টিওপোরোসিসে আক্রান্তদের উচ্চ মাত্রার হোমোসিস্টিন এবং নিম্ন মাত্রার ভিটামিন বি ১২ থাকে সুস্থ ও শক্তিশালী হাড়ের মানুষদের তুলনায়।
৪। স্নায়ুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে
আপনার স্নায়ুকে টক্সিন ও ফ্রি র্যাডিকেলের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। এই আবরণকে মায়েলিন শিথ বলে। স্নায়ুর এই আবরণ নষ্ট হয়ে গেলে স্নায়ু মরে যেতে পারে। এই মৃত স্নায়ু মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে সংকেত পাঠাতে বাঁধার সৃষ্টি করে। ভিটামিন বি ১২ আপনার এই প্রতিরক্ষা আবরণকে পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে।
৫। মেজাজ ও চেহারার উন্নতিতে সাহায্য করে
মেজাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সেরেটোনিন নামক রাসায়নিক ব্যবহার করে। যদি আপনি পর্যাপ্ত ভিটামিন বি ১২ গ্রহণ না করেন তাহলে আপনার দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থা হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা মেট্রোফিন সেবন করেন তাদের ডিপ্রেশনের সমস্যার উন্নতি ঘটে ভিটামিন বি ১২ গ্রহণের ফলে এবং তাদের চেহারায়ও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৬। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষা দেয়
গবেষকেরা দেখেছেন যে, আলঝেইমার্স রোগীদের শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর মাত্রা কম থাকে। কিছু গবেষণায় জানা যায় যে, কোবালামিন ঘাটতির ফলে বয়স্ক মানুষদের এক ধরণের ডিমেনশিয়া হয়। যা পুষ্টির মাধ্যমে ঠিক করা যায়।
৭। তরুণ থাকতে সাহায্য করে
বয়স বৃদ্ধির ফলে শরীরের কোষগুলো ক্ষয় হতে থাকে। যদি ডিএনএ ঠিকমত প্রতিলিপি তৈরি করতে না পারে তাহলে বয়স দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন বি ১২ ডিএনএকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে, কোষের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। শরীরের কোষ যদি তরুণ থাকে তাহলে আপনাকে তরুণ দেখাবে এবং আপনিও তরুণ অনুভব করবেন।
মন্তব্য চালু নেই