জমে উঠেছে নওগাঁ ও পত্নীতলায় ঈদের কেনাকাটা
বুলবুল চৌধুরী, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ জমে উঠেছে নওগাঁ ও পত্নীতলায় এবারের ঈদের কেনাকাটা। শহরের শপিংমল গুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মার্কেট গুলোতে কেনাবেচা জমে উঠছে। ঈদে ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে বিক্রেতারাও আগেভাগেই তাঁদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। অন্যান্য বছর রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকে ঈদের কেনাকাটা জমলেও এবার ১০ রমজান পার হতে না হতেই নওগাঁর বিভিন্ন বিপণি বিতানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। শহরের কাপড়পট্টি, আনন্দবাজার-গীতাঞ্জলী শপিং কমপ্লেক্স, ঠাকুর ম্যানসন, দেওয়ান বাজার, জহির প্লাজা, হাসনাহেনা মক্কা মার্কেট, শুভ প্লাজা, ইসলাম মার্কেট, সৌদিয়া সুপার প্লাজা, মাজেদা সুপার মার্কেটসহ বড় বড় মার্কেটগুলোতে যেন তিলধারনের ঠাঁই নেই। ক্রেতাদের ভিড়ে মার্কেটের দোকান গুলো ঠাসাঠাসি। তবে নারী ও শিশু ক্রেতার সংখ্যাই বেশী।
এবারের কেনাকাটায় নারী, শিশু এবং বিশেষ করে ফ্যাশন সচেতন তরুনীরাই সবচেয়ে বেশী এগিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে পিছিয়ে নেই পুরুষ এবং তরুণরাও। তরুনীদের পছন্দের পোষাক এবার ‘কিরনমালা থ্রি-পিস। তরুনদের রঙ্গিন পাঞ্জাবী এবং শিশুদের তানসী ফ্রক সহ রকমারি পোশাক তো পাওয়া যাচ্ছেই। উপরন্তু এবার ঈদে নওগাঁয় নতুন আকর্ষণ মেয়েদের হাল ফ্যাশনের ‘বাজিরাও মাস্তানি’ পোশাক।
সরজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এবার ঈদে নওগাঁয় নতুন আকর্ষণ মেয়েদের হাল ফ্যাশনের ‘বাজিরাও মাস্তানি’ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫শ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবাদে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস ১ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর শাড়ির দাম ৮শ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। আর ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ১২শ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। শেরওয়ানি বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।
শহরের আনন্দবাজার-গীতাঞ্জলী শপিং কমপ্লেক্সে, শিলামণি গার্মেন্টস, টুনটুনি, ঠিকানা, পালকী, আনান ফ্যাশন হাউজ ছাড়াও ঠাকুর ম্যানসনে রাজ গার্মেন্টসে ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোষাক কিনছেন। শিশুদের তানসী ফ্রক প্রকার ভেদে ৬শ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা, কিরনমালা থ্রি-পিস ৬শ টাকা থেকে প্রায়২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাড়ির দোকান গুলোতেও প্রচন্ড ভিড়। জামদানী, বেনারসি, কাতান, কাঞ্জিলরাম, মীরপুর সিল্ক এবং তাঁতের সুতি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা। জামদানীর লেহেঙ্গা প্রকারভেদে ৫শ টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তরুনী ক্রেতাদের পাশাপাশি তরুনরা এবার রঙ্গিন পাঞ্জাবীর প্রতি বেশী ঝুঁকেছে। নানা রঙ্গের পাঞ্জাবী বেচাকেনা শুরু হয়েছে বেশ জোড়ালোভাবে।
এদিকে শহরের জুতোর দোকানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। উন্নতমানের জুতোর শো-রুম এ্যাপেক্স, পায়ে পায়ে এবং বাটার দোকানে বিত্তবানদের ভিড়। নিম্নআয়ের মানুষগুলো অন্যান্য ছোট দোকান বা ফুটপাতে ভিড় জমিয়েছে তাদের সাধ্যের ভিতর পোষাক আর জুতো কেনার জন্য।
শিপলু বুটিকসের মালিক জাহান আলম বলেন, এবার মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ পোশাক। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের টপস, জিপসি, ফ্লোর টাচ পোশাকের চাহিদাও বেশি। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে দোকানে এসব পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরন ও দামের শাড়ি, পাঞ্জাবির সমাহারও রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঈদের কেনাকাটা করতে সপরিবারে নওগাঁ শহরে এসেছেন পোরশার আবদুল মতিন, নিয়ামতপুরের চান মোহাম্মদ ও আলেমারা বেগম। আবদুল মতিন বলেন, ‘প্রতিবছর জিনিসপত্রের দাম তো বাড়ছেই। তবে এবার পোশাকের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেশি মনে হচ্ছে।
নওগাঁয় তৈরি পোশাকের অভিজাত দোকান হিসেবে পরিচিতি ‘শিলা মনি’র মালিক নেপাল চন্দ্র ঘোষ সহ অন্যান্য দোকানীরা বলছেন, ১০ রমজানের পর থেকে বেচাকেনা জমে উঠেছে। এখন শুধু মহিলা. শিশু এবং তরুন-তরুনীদের ভিড় বেশী। ২০ রমজানের পর সকল শ্রেনীর মানুষ পোষাক কেনাকাটায় ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাদের মতে, ব্যবসা এবার ভাল হবে। এবার মানুষের পেটে ভাত আছে, মনে শান্তি আছে। তাদের কেনাকাটার জোড় দেখেই বুঝা যাচ্ছে, ঈদের আনন্দ এবার ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।
কাপড়পট্টি মার্কেটের থান কাপড় ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী শাপলা ক্লথ স্টোরের মালিক জিহাদ আলম বলেন, থান বা ছিট কাপড়ের জন্য আগে থেকেই নওগাঁর একটা সুনাম রয়েছে আর তাই রোজার শুরু থেকেই থানা বা ছিট কাপড়ের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। কারণ, ছিট কাপড় কিনে সেগুলো তৈরি করতে সময় লাগে। এ জন্য ক্রেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে একটু আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে থাকেন।’
নওগাঁ পোশাক মালিক সমিতির সভাপতি সাজাহান আলী বলেন, ‘নওগাঁয় বেশ কিছু ভালো মানের তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের রুচি ও ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা পণ্যের সমাহার রাখছেন। ফলে নওগাঁর লোকজনকে কেনাকাটার জন্য বাইরের শহরে যেতে হয় না। নওগাঁ ছাড়াও বর্তমানে আশপাশের নাটোর, জয়পুরহাট, বগুড়া সহ রাজশাহী জেলার লোকজন নওগাঁয় কেনাকাটা করতে আসছেন।
অপরদিকে পত্নীতলাতেও এবারে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। রেডিমেট পোষাক, শাড়ির দোকান, পাঞ্জাবীর দোকান, ছিট কাপড়ের দোকান, টেইলার্স, হকার্স মার্কেট, প্রসাধনী সহ জুতার দোকান সব জায়গাতেই আগের তুলনায় যেন ক্রেতাদের ভীড় বেড়েছে। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে না হলেও মানিয়ে নিয়ে চলছে এবারের ঈদের কেনাকাটা।
বিপনী বিতান গুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ঠ করার জন্য রকমারী পসরায় সাজানো হয়েছে। রেডিমেট কাপড়ের দোকান গুলোয় ছেলে, মেয়ে ও শিশুদের জন্য এসেছে নানা নামের ও দামের পোষাক। নারী, শিশু এবং তরুনী ক্রেতারা যেন পোষাকের দোকানগুলো দখল করে নিয়েছে। তাদের পছন্দের পোষাক খুঁজে বের করে দিতে দোকানীরা হিমশিম খাচ্ছেন।
এই ঈদে এসেছে বেশ কিছু নতুন নামের শাড়ি। সাজিয়া সাওয়ারী, আজিজা জামদানী, টিসু লোন শাড়ী, ব্লক শাড়ি, নাসা শাড়ী, কুচি জর্জেট, লেহেঙ্গা শাড়ী, জল নুপুর, রাশি, চন্দ্রি, কুমকুম সহ বাহারি নামের শাড়ি। আর ঢাকাই জামদানী, টাঙ্গাইল সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জামদানী তসর সিল্ক, জর্জেট তো আছেই। এসব শাড়ি নাম ও প্রকার ভেদে মূল্য নির্ধারন করে রেখেছেন দোকানীরা। তবে এবারে বাজারে শাড়ির দাম একটু বেশী বলেন দোকানীরা।
মেয়েদের পোষাকের মধ্যে নতুন আকর্ষণ ‘বাজিরাও মাস্তানি’ সহ ভারতীয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্টার জলসার “কিরনমালা” থ্রি-পিস, বোঝেনা সে বোঝেনার নায়িকা পাখির নামে লন জিপসী, উষষি, লাভস্টোরী, ইচ্ছে নদী, কটকটি, ইসা-আখি, পাকিজা, বি.আর.বি, লেহেঙ্গা, স্কার্ট, ফ্রক, মিতালী, চৈতী, জ্যোতি এবং তরুনদের রঙ্গিন পাঞ্জাবী এবং শিশুদের তানসী ফ্রক বিক্রি হচ্ছে বেশি।
আলম ক্লথ ষ্টোরের স্বতাধীকারী শামসুল আলম, সাদেক বস্ত্রালয় এন্ড ঝলক ফ্যাসনের সত্বাধীকারী সাদেক উদ্দীন, রকি ক্লথ ষ্টোরের সত্বাধীকারী মাষ্টার অমির উদ্দীন, ভারতী ক্লথ ষ্টোরের সত্বাধীকারী গৌরাঙ্গ ও প্রদীপ এন্ড ব্রাদার্স, আফতাব ক্লথ ষ্টোরের সত্বাধীকারী আফতাব হোসেন, মহব্বত গার্মেন্টসের সত্বাধীকারী দেওয়ান মুস্ফিকুর রহমান জানান, তাদের দোকানে নতুন আকর্ষণ মেয়েদের হাল ফ্যাশনের ‘বাজিরাও মাস্তানি’ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫শ থেকে ২০ হাজার, কিরনমালা থ্রি-পিস ১ থেকে ৭ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ছোটাদের পাখি ড্রেস বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং বড়দের আরো বেশি। লাভ স্টোরী ১৫শ থেকে ২৫শ টাকা, ইচ্ছে নদী ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, সুতি লন জিপসী ১৫শ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা। লেহাঙ্গা শাড়ি ২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। মহিনী কাতান ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। টিসু কাতান ১২শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা। এবারে মেয়েদের পাখি থ্রি প্রিস বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার দামে। টপস্ লেহেঙ্গা, বড়দের থ্রি পিচ আকসারা, ঝিলিক, ফুলকি, খুশি আর আনার কলি, পাকিস্তানি থ্রি পীচ ও শাড়ী প্রকার ভেদে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছেলেদের শর্ট ও লং পাঞ্জাবী ১৫শ টাকায়, শর্ট ও লং শার্ট ৭শ থেকে ১২শ টাকায়। টি শার্ট ৭শ থেকে ১ হাজার টাকায়, শিশুদের পাঞ্জাবী ২শ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবারে খাকি প্যান্ট, চায়না, কাতুয়া প্যান্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসব প্যান্টের মূল্য ৫ শ’ টাকা থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা, জিন্স প্যান্ট ১৪ থেকে ১৫শ টাকায়। দোকানীরা জানান গতবারের চেয়ে এবারে কাপড়ের দাম তুলনামূলক একটু বেশী। আর তাই এবারে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য পছন্দের পোষাক ক্রয় করা একটু কষ্ট সাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রসাধণী ও জুতার দোকানেও শুরু হয়েছে ক্রেতাদের ভীড়। বিশেষ করে প্রসাধণীর দোকান গুলোতে মেয়েদের মেহেদী ও নানা রকম কসমেটিকস কেনার উপচে পড়া ভীড়। পাশাপাশি টুপি ও আতরের দোকানেও রয়েছে ক্রেতাদের ভীড়। টেইলার্স গুলোতে অর্ডার নেয়া প্রায় শেষের দিকে। তবে ডিপার্মেন্টাল ষ্টোর সহ মুদীর দোকান গুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য সহ সেমাই-চিনি, খেজুর, নুডলস কেনার ভীড় একটু বেশী লক্ষ করা গেছে।
দরিদ্র মানুষের একমাত্র অবলম্বন হকার্স মার্কেট ও ছোট বিপনি বিতান গুলো। তবে এবার অন্যবারের তুলনায় এসব দোকান গুলাতে বিক্রি একটু কম। কারন হিসাবে কয়েকজন দোকানি বলেন এবারে বর্ষা মৌশুমের ধান লাগানোর ব্যস্ততায় কৃষি নির্ভরশীল এই এলাকার মানুষদের ঈদের বাজার কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তবুও ঈদের আনন্দ থেকে মানুষ যেন পিছিয়ে নেই। সকলেই তাদের সাধ্য অনুযায়ী ঈদকে সামনে রেখে পরিবারের জন্য বাজারে নেমে পড়েছে।
এদিকে দোকানীরা বলছেন, ১০ রমজানের পর থেকেই বেচাকেনা জমে উঠেছে। এখন শুধু মহিলা, শিশু এবং তরুন-তরুনীদেরই ভিড় বেশী। তাদের মতে, ব্যবসা এবার ভাল হবে।
মন্তব্য চালু নেই