জবির প্রক্টর কার্যালয়ে নারী ব্যবসায়ীর কাছে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি
নানা অভিযোগে বিতর্কিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়েই এক নারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি করলেন। প্রক্টরের ‘নতজানু’ আচরণের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই কার্যালয়ে ছাত্রলীগের অঘোষিত অফিসে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পাসে বিশৃংখল পরিবেশ তৈরি, নিজেদের মধ্যে মারামারি, মদ্যপান, ছাত্রলীগের সালিশ বৈঠকসহ নানা অপকর্মের জন্য সংগঠনটি এ রুমকে ব্যবহার করে আসছে।
চট্টগ্রামের হালিশহরের আল নূর লেডিস টেইলার্স ও রাজধানীর বাসাবোর একটি বোরকা কারখানার মালিক ওই নারী ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর হাজী শাফিউদ্দীন মার্কেটের আল সামিরা বোরকা হাউজের মালিক রাশেদ তার ব্যবসা তদারকি করতেন। পরে তার ১২ লক্ষ টাকা আতœসাৎ করে পালিয়ে এসে রাশেদ সামিরা বোরকা হাউজের মালিক হয়। টাকা ফেরত পেতে রাশেদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হালিশহর থানায় সাধারণ ডায়েরী ও পাহাড়তলী থানায় মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, পাটুয়াটুলীতে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বোরকা বিক্রি করতে এসে রাশেদের সন্ধান পাই। পরে টাকা উদ্ধারের জন্য সোমবার জগন্নাথের ভিপি (ছাত্রসংসদ অকার্যকর থাকায় কোন ভিপি নেই) এর সহায়তা পাওয়ার আসায় ক্যাম্পাসে আসলে কামরুল (জগন্নাথ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী আমাকে সিরাজের (শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) কাছে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, প্রক্টর কাযালয়ে সিরাজের সাথে দেখা করলে সে ও কামরুলসহ অন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাকে জানায় ‘তারা বিশ্বজিৎকে কুপিয়েছে, রাশেদকে প্রয়োজনে কুপিয়ে টাকা উদ্ধার করবে। এসময় তারা থানায় রাশেদের বিরুদ্ধে জিডি করার জন্য আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়। এদিন রাশেদের দোকানে তালা লাগানোর জন্য কামরুল আমার কাছ থেকে আরও ২ হাজার টাকা নেয়। পুরো ঘটনার সময় প্রক্টর কার্যালয়ে একই কার্যালয়ের সেকশন অফিসার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল কাদের (কাজী মনির) সহ অন্তত ১৫ জন উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই নারী ব্যবসায়ী।
তিনি আরও বলেন, টাকা নেওয়ার পর তারা রাশেদের দোকানে তালা লাগায়। এসময় পাটুয়াটুলীর পাকিস্তানি বোরকা হাউজের মালিক শামসুদ্দীন আহমেদ, ফেরদৌস কর্পোরেশনের মালিক মিজান, বধুয়া বোরকা হাউজের মালিক শামীম মোল্লাসহ অন্যরা বৈঠকে বসে ঘটনার সুরাহা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে। কিন্তু সিরাজ তাতে বাধা দিয়ে আমাকে জানায়, সে নিজে টাকা আদায় করে দিবে, বৈঠকে বসতে হবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, কিন্তু মঙ্গলবার রাশেদ আবার দোকান খুলে। এসময় আমি সিরাজকে বিষয়টি জানালে সে বলে, নজিবুল্লাহ হিরু (জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও জর্জ কোর্টের আইনজীবি) বিষয়টি দেখবেন, আপনি এখন যান। আর ক্যাম্পাসে ঘুরঘুর করবেন না, সাংবাদিকরা জানলে আমার সমস্যা হবে।
বধুয়া বোরকা হাউজের মালিক শামীম মোল্লা বলেন, রাশেদ ও ওই নারী ব্যবসায়ীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক বিষয়ে সমস্যা চলছে। ১/২ দিন আগে কয়েকজন ছেলে এসে রাশেদের দোকানে তালা দিয়েছে। আমরা দুই পক্ষকেই বলেছিলাম আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু এখন কি হয়েছে তা আমরা জানি না।
এ বিষয়ে আল সামিরা বোরকা হাউজের মালিক রাশেদ বলেন, মঙ্গলবার ঘটনার মিটমাট হয়ে গেছে।
নারী ব্যবসায়ীর সাথে মিটমাট হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, জগন্নাথে রাজনীতি করে কয়েকজন ছেলে সোমবার আমার বাসা ও দোকানে তালা লাগিয়েছিল। পরে মঙ্গলবার বড় ভাইরা তাদের সাথে মিটমাট করেছে, এখন আর তারা আমাকে ডিস্ট্রার্ব করবে না।
প্রক্টর অফিসে চাঁদাবজির ঘটনার সঙ্গে আব্দুল কাদের (কাজী মনির) এর সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন বোরকা পরা মহিলা আসছিল, তবে তার সাথে আমার কথা হয়নি। ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে তার কি বিষয়ে কথা হয়েছে তাও আমি শুনিনি।
এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। সিরাজুল ইসলাম এক শিক্ষককে অস্ত্র ঠেকিয়ে টেন্ডার ছিনতাই করে সিরাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত। এছাড়া বাংলাবাজারের আল বারাকা পাবলিকেশন্সে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সিসি ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছিলেন তিনি।
প্রক্টর কার্যালয়ে এ ধরণের ঘটনা কিভাবে ঘটে জানতে বিশ্ববিদ্যালযের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি জানেন না বলে জানান।
এর সাথে প্রক্টর কার্যালয়ে দায়িত্বরতরাও জড়িত জানালে তিনি বলেন, আমার অফিসে অনেকেই আসে, বসে থাকে। কিন্তু কখন এটা ঘটেছে, আদৌ ঘটেছে কিনা তা আমাকে জানতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত কিনা এবং এ ধরণের ঘটনা পূর্বেও ঘটেছে জানালে তিনি বলেন, আসলে ব্যাপারটা তেমন না। ছাত্রলীগের কর্মীদের বিচার-টিচার করলে ওরা এখানে এসে বসে। আমি তাদের বলেছি তোমরা তোমাদের কার্যালয় ব্যবহার করো। এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটা দেখবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, এটা আমি তোমার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। আর তুমিও ভাল করে খোঁজ নেও, যদি এ ধরণের ঘটনা ঘটে অবশ্যই লিখবা।
প্রক্টর কার্যালয় ছাত্রলীগের অলিখিত কার্যালয়ে রুপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রক্টরের কার্যালয়ে ছাত্ররা আসতে পারে। কিন্তু এসে বসে থাকবে কেন, এটা প্রক্টরকে জিজ্ঞেস করো।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রক্টর কার্যালয়েই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম তার কর্মীদের নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করেছিলেন। এছাড়া প্রক্টর কার্যালয়ে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শিশিরকে মারধর করেছিলেন একই সংগঠনের কর্মীরা।
মন্তব্য চালু নেই