জঙ্গি মারজানের বিভাগে ‘অনুপস্থিত’ অর্ধশত শিক্ষার্থী

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় সন্দেহভাজন মূল হোতা নুরুল ইসলাম মারজানের আরবি বিভাগের (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ৪৯ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় সন্দেহভাজন মূল হোতা নুরুল ইসলাম মারজানের আরবি বিভাগের (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ৪৯ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মারজানও বছর খানেক আগে হঠাৎ উধাও হয়ে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত হয়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাথী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগত চৌধুরী।

গত ১২ আগস্ট মারজানের ছবি প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। দুদিন পর তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার বাড়ি পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে। এদিনই মারজানের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তির তথ্য জানা যায়।

মারজানের ছাত্রত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এই বিভাগে তার মত আর কোনো অনুপস্থিত শিক্ষার্থী আছে কি না তা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় আরবি বিভাগ। আর অনুসন্ধানে ৪৯ জনের ক্লাস না করার বিষয়টি জানতে পারে তারা।

বিভাগের চেয়ারম্যান ইসমাঈল চৌধুরী ৪৯ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে এদের নাম বা বিস্তারিত জানানে রাজি জননি তিনি। তিনি বলে, ‘অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা আমরা রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিয়েছি ‘

বিভাগের সূত্রে জানা যায়, প্রথম বর্ষে অনুপস্থিত রয়েছেন পাঁচ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া দ্বিতীয় বর্ষে ১৩ জন, তৃতীয় বর্ষে ১০ জন, চতুর্থ বর্ষে ১৬ জন এবং মাস্টার্সে পাঁচ জন ক্লাস করছেন না দীর্ঘদিন ধরে। প্রথম বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছাড়া বাকি বর্ষে পুনঃভর্তি হয়নি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮ জন। অনুপস্থিতির বিষয়ে বিভাগকে কিছু জানানওনি তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কামরুল হুদা বলেন, ‘এই তালিকা এখনও আমার হাতে আসেনি। এটা এখন একাডেমিক শাখায় রয়েছে।’ তবে একাডেমিক শাখায় বারবার কল করলে ও কেউ ফোন ধরেননি।

আরবি বিভাগের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন মারজান। ক্যাম্পাসে তিনি ফাহাদ নামে পরিচিত ছিলেন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বর্ষের ছয়টি কোর্সের পরীক্ষা দিলেও বাকি পরীক্ষায় আর অংশ নেননি মারজান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মারজান আরবি বিভাগে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি কোর্সের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপর থেকেই সে অনুপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী সে এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেই।’

জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় জড়িতদের মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। এই হামলার পর জানা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী নিখোঁজ থেকে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছে।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন পাওয়ার পর ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তালিকা দিতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করতে শুরু করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে ৩০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পুলিশকে দিয়েছে। সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এদের নাম প্রকাশ করেনি। পুলিশও কারও নাম জানায়নি। দুই পক্ষই বলছে, নানা কারণে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকতে পারে। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর অন্য কোনো জায়গায় ভালো বিভাগ পেলে প্রতিষ্ঠান পাল্টে ফেলে। কিন্তু নিয়ম থাকলেও আগের বিভাগকে এ বিষয়ে তথ্য দেয়ার রীতি নেই বললেই চলে। কোনো কোনো শিক্ষার্থী আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আর্থিক টানাপড়েনের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। এসব কারণে সবার বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে নাম প্রকাশ করতে চাইছে না।

এমন তালিকা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও। তবে ওই তালিকায় গুলশান হামলার ‘মূল হোতা’ মারজানের নাম ছিল না। এমনটা কেন হয়েছে তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘মারজানের বিভাগের (আরবি) চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকায় হয়ত এই ঘটনা ঘটেছে। এখন থেকে প্রতি দুই মাস অন্তর অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের নাম হালনাগাদ করা হবে।খবর ঢাকাটাইমসের।



মন্তব্য চালু নেই