জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়সারা ও তামাশার মানববন্ধন
কথায় বলে- ‘না খেতে দিলে এক ভুল আর খেতে দিলে বহু ভুল’। হয়তো কথাটি সঠিক। নয়তো এমন হলো কিভাবে? জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যখন দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে ঠিক তখন কিছু দায়সাড়া ভাব দেখা গেছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তবে কেন (?) এই দায়সারা ভাব সেটা রহস্যময়ই থেকে গেলো। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যেমন জঙ্গিবাদকে অর্থায়ন বা সমর্থন করছে দেশেরই কিছু বিপথগামী ব্যক্তি বা গোষ্ঠি ঠিক তখন জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই মানববন্ধনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়সাড়া ভাবও প্রশ্নবিদ্ধ।
রাজধানী ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মাসপূর্তিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় সোমবার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ঘোষনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী স্থানে সোমবার বেলা ১১টা থেকে ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি চলে। সরকারি, বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীসহ অন্যরাও অংশগ্রনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরার কলারোয়ার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে।
ঘন্টাব্যাপী তো দূরের কথা কোনরকম ফটোসেশন পর্যন্তও অনেকের ধৈর্য্য ছিল না। শিক্ষার্থীদের রাস্তার পাশে দাড় করানো ও ফটোসেশন করতে এবং বড়জোর প্রতিষ্ঠান প্রধানের কিছু বলতে যতটুকু সময় সেই সময়টুকুও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়নি। জঙ্গিবাদকে সরাসরি উস্কে না দিলেও এর প্রতিবাদে নূন্যতম কিংবা দায়সাড়া ভাব কী অর্থ বোঝায় কিংবা এর ব্যাখ্যাও বা কী সেটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছ থেকে জানা যায়নি সংযোগের অভাবে।
নির্মম, জঘন্যতম, ঘৃনাত্মক জঙ্গি হামলায় যে বা যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যখন রাষ্ট্রীয় ও সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে ঠিক তখন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এরূপ তামাশা সত্যিই লজ্জাজনক।
ফেসবুকে ছবি আপলোডের বদৌলতে কিছুটা প্রমানও মিলেছে। কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া সোনারবাংলা ডিগ্রি কলেজ, বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজ ও কাজিরহাট ডিগ্রি কলেজে দায়সারা মানববন্ধন করা হয়েছে।
বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা কলেজের কয়েক মিনিটের মানববন্ধনে ব্যানারের পরিবর্তে পুরাতন, ছেড়া, ময়লা কাপড় দেখা যায়, যেটা অনেকে স্থানীয় ভাষায় ময়লা ন্যাকরা বলে। সেই ন্যাকরার উপর এ৪ কাগজে প্রিন্ট করা কিছু কথা। আর কয়েকদিন আগের পুরাতন একটি অনুষ্ঠানের ব্যানার নিয়ে ক্ষনিকের মানববন্ধন করেছে কাজিরহাট কলেজ। ২৮জুলাইয়ের ব্যানারের ঠিকানা হয়েছে ১আগস্টে। আর দায়সারা হতে হাতে লেখা কাগজ তো এখানেও। এ থেকে ব্যতিক্রম হয়নি সোনাবাড়িয়া কলেজও। সেখানে অত্যন্ত দায়সারা, না করলেই নয়- এরূপ, তাচ্ছিল্যের ক্ষনিকের মানববন্ধন করা হয় যেখানে কাগুজে ব্যানারে লেজেগবুরবস্থা। ওই কলেজের সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ শিবিরের সাবেক ক্যাডার ও উপজেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতা আশফাকুর রহমান বিপু একাধিক নাশকতা মামলায় পলাতক রয়েছেন। ন্যাক্কারজনক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও নৈতিকতাও যেন সেখানে পলাতক।
কাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ এসএম শহিদুল আলমের অত্যন্ত কাছের অনুসারী হিসেবে বিবেচিত বোয়ালিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন। প্রথম জন বিএনপি রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ও দ্বিতীয় জন বিএনপি-জামায়াত জোট ঘরনায় সক্রিয়। আর সোনারবাংলা কলেজের বিপু তো সক্রিয় ও কট্টরপন্থি জামায়াত নেতা। তাদের তাচ্ছিল্যের এ কর্মযজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে জানা গেলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরূপ দায়সারা মানববন্ধন করার খবর পাওয়া গিয়েছে স্থানীয় সূত্র থেকে।
ছবিগুলোর বিষয়ে ফেসবুকে ইতোমধ্যে সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে। ছবিগুলো আপলোড দিয়ে একজন পোস্ট দিয়েছেন ঠিক এই ভাষায়- ‘এই ছবিগুলি জঙ্গীবিরোধী মানব বন্ধনের ছবি, নাকি জঙ্গী উসকে দেওয়ার ছবি তা ভাল করে দেখে মন্তব্য করার দায়িত্ব সচেতন মহলের। একটা কলেজ ব্যানার ব্যবহার করেছে যা দেখে মনে হচ্ছে এরা জঙ্গীবিরোধী মানববন্ধনকে মনে প্রাণে মেনে নেয়নি। আর একটা কলেজ ২৪ জুলাই এ বানানো একটা স্কুলের ব্যনার ধার করে ১ আগষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জঙ্গী বিরোধী মানববন্ধন করছে। এর থেকে সরকারের উচ্চ মহলের চেতনা হওয়া উচিত জঙ্গী দমনে এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কতটা আন্তরিক।’
ফেসবুকে আরেকজন লিখেছেন ‘‘সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সীমান্তবর্তী বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজ–
অনেক সাধ করে কলেজটি প্রতিষ্ঠায় নের্তৃত্ব দিয়েছিলেন ৮ নং সেক্টরে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ওই গ্রামের মমতাজ আহমেদ ও তাঁর ভাতিজা কেঁড়াগাছি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন লাল্টু ।
*** কষ্ট পেলাম– যখন দেখলাম, দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গীবাদ বিরোধী মানব বন্ধন কর্মসূচি দায়সারা ভাবে পালিত হয়েছে এখানে ! ব্যানার ও উপস্থিতির আচরণ সেটাই প্রমাণ করে । অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন এর দায়ভার এড়াতে পারেন না কিছুতেই !!’’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এরূপ আচরণ সত্যি কী মেনে নেয়া যায়? কেননা জঙ্গি হামলায় জড়িতদের বেশিরভাগই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। তামাশা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রধানদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তামাশা করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
মন্তব্য চালু নেই