ছয় বছর পর ম্যাচ সেরা ‘অলরাউন্ডার’ মাশরাফি
আফগানিস্তানের সঙ্গে তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ (৪+২+২) = মোটে ৮ রান। তা দেখে সমালোচকরা ফোড়ন কেটেছিলেন, ‘নাহ মাশরাফির ব্যাটিংটা একদম গেছে। এরকম অনুজ্জ্বল ব্যাটিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলে না।’
কেউ কেউ আবার এক প্রস্থ এগিয়ে- ‘ব্যাটিংতো গেছে। শুধু বুদ্ধি খাটিয়ে বোলিং আর মাঠ ও মাঠের বাইরে নেতৃত্ব দিয়ে আর কতকাল?’ দু ‘পক্ষই আজ লজ্জায় মুখ ঢেকেছেন।
তাদের মুখে ছাই দিয়ে ব্যাট ও বল হাতে দূর্বার মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথমে ২৯ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। তারপর ইংলিশ ফ্রন্টলাইন ব্যাটিংয়ে আঘাত হানা। ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট দখল করে অলরাউন্ডিং নৈপূন্যের অনুপম প্রদর্শনীতে হয়ে গেলেন ম্যাচ সেরা।
‘আচ্ছা ভাই মাশরাফি শেষ কবে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন?’ ফেসবুক ও প্রেসবক্সে এমন একের পর এক প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে বেরিয়ে গেল এক অতি কাকতালীয় ঘটনা! টাইগার অধিনায়ক ব্যাট ও বল হাতে নজর কাড়া পারফরমেন্স উপহার দিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন এখন থেকে ছয় বছর আগে। ২০১০ সালের ১০ জুলাই ব্রিস্টলে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে, এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই।
প্রথমে ব্যাট হাতে আট নম্বরে নেমে ২৫ বলে ২২ রান। আর তারপর ৪২ রানে দুই ইংলিশ ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনকে আউট করে ৫ রানের নাটকীয় জয়ের স্বার্থক রূপকার ও ম্যাচ সেরা দুই’ই হন মাশরাফি।
শুনে অবাক হবেন, আজকের খেলার চালচিত্রের সাথে ঐ ম্যাচের দৃশ্যপটের প্রচুর মিল। আজ নাসিরকে সাথে নিয়ে মাশরাফি অস্টম উইকেটে ৬৯ রান তুলে দলকে ২৩৮ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। তার আগে ১৬৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল টাইগাররা। সেখান থেকে নাসির (২৭*) আর মাশরাফি দায়িত্ব নিয়ে খেলে দলকে নিয়ে গেলেন ২৩৮ রানে।
ঠিক একইভাবে ছয় বছর আগে ব্রিস্টলে ইংলিশদের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের ম্যাচেও মাশরাফি প্রথমে ব্যাট হাতে এবং পরে বলে হাতে জ্বলে উঠে দল জিতিয়েছেন।
আজ যেমন মিডল অর্ডার কাম অফস্পিনার নাসির ছিনে সঙ্গী, ছয় বছর আগে ব্রিস্টলে মাশরাফি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। শেষ দিকে ওই দু’জনার দৃঢ়তায় বাংলাদেশ খুঁজে পায় জয়ের পথ।
১৯৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ আর মাশরাফি মিলে সপ্তম উইকেটে মুল্যবান ৩৭ রান জুড়ে দিয়েছিলেন। যার ২২ ছিল মাশরাফির। তাদের দৃঢ়তায় ৫০ ওভার শেষে ২৩৬ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে ওঠে বাংলাদেশের। ২৩১ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ পায় ৫ রানের নাটকীয় জয়।
ওই খেলায় মাশরাফি একা নন, শফিউল, রুবেল, রাজ্জাক ও সাকিব প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট পান। শুধু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই নয়, ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের সফল রুপকার ও ম্যাচ সেরাও মাশরাফি।
সেটা এক যুগ আগের ঘটনা। তখনো শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম হয়নি। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও ব্যাট এবং বল হাতে দূর্বার হয়ে ওঠেন মাশরাফি।
প্রথমে ৩৯ বলে ৩১ নট আউট। তারপর (৯-২-৩৬-২) দুই উইকেট শিকার। প্রথম স্পেলে ভারতের বিপজ্জনক ওপেনার বিরেন্দর শেবাগ শূন্য রানে বোল্ড। আর মাশরাফির পরের স্পেলে হাবিবুল বাশারের হাতে কট মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারতের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে ১৫ রানের প্রথম জয়ে অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সে ম্যান অফ দ্যাচ মাশরাফি।
১৮৭ রানে আট উইকেটের পতন ঘটার পর মাশরাফি আর তাপস বৈশ্য নবম উইকেটে মুল্যবান ৩৯ রান জুড়ে দিলে বাংলাদেশ পৌছে যায় ২২৯-এর ঘরে। জবাবে ভারত অলআউট ২১৪ রানে।
এতো গেল অলরাউন্ডার মাশরাফির ম্যাচ সেরা হবার কাহিনী। বোলার মাশরাফি শেষ ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন কবে? সেটাও নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে।
তাহলে শুনুন, পেসার মাশরাফি বল হাতে দূর্বার হয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ঠিক ২৫ মাস আগে চট্ট্রগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। দিনটি ছিল ২০১৪ সালের ২৩ নভেস্বর। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৩৪ রানে তিন উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা নড়াইল এক্সপ্রেস।
মাসাকাদজা, সিকান্দার রাজা ও সিবান্দা প্রথম স্পেলে তিন জিম্বাবুয়ান ফ্রন্টলাইন ব্যাটসম্যানকে আউট তার বলে। আর তাতেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হাতে ওঠে তার।
দুর্মুখোরা যাই বলুন, মাশরাফি বিন মর্তুজা বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ ভোমরা। শুধু সাহসী, তেজোদ্দীপ্ত অধিনায়কত্ব আর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং দিয়ে নয়, পারফরমার মাশরাফিও যে ব্যাট ও বলে সমান ভাবে জ্বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন- সে সত্য আরও একবার প্রতিষ্ঠিত হলো।
মন্তব্য চালু নেই