ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের খোঁজে নেমেছে গোয়েন্দারা
ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের খোঁজে নেমেছে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটির রাজনৈতিক উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি মাসের যেকোনও দিন ঢাকায় শিবিরের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করবে সংগঠনটি। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের কমিটিও ঘোষণা করবে শিবির।’খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার নির্দেশনা পেয়েছি। ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের খবর পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হবে এবং এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সূত্র জানায়, ডিসেম্বরেই রাজধানীর কোনও একটি মিলনায়তনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবে ছাত্র শিবির। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী সদস্য সম্মেলন করার কথা থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিগত প্রায় ছয় বছর ধরে প্রকাশ্যে সম্মেলন করতে পারেনি সংগঠনটি। এ সময় গোপন ব্যালটে ও ই-মেইলে ব্যালট পাঠিয়ে সদস্যদের মতামত নিয়ে সভাপতি-সেক্রেটারি নির্বাচন করে আসছে শিবির।
গোপনে সম্মেলন করলেও এবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে শিবির সম্মেলন করতে চায় বলে সূত্র জানায়। জানা গেছে, রাজধানীর বনশ্রী, মিরপুর, পল্টন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ কয়েকটি স্থান ইতোমধ্যে গোয়েন্দাদের নজরদারিতে এসেছে। ইতোমধ্যে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের নাম, ঠিকানা, সংখ্যা, নেতৃত্বদানকারী শীর্ষ নেতাদের নাম, ঢাকায় আসার কৌশল, সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রভাবশালী ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি।
এ বিষয়ে জানার জন্য ছাত্র শিবিরের দায়িত্বশীলদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সেলফোন, মেইল ও ফেসবুকে যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া দেননি। তবে ছাত্র শিবিরের ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘কোনও নির্দিষ্ট স্থানে সম্মেলন বা নেতৃত্ব নির্বাচনের কোনও সম্ভাবনা নেই। অনেকটা জামায়াতের সিস্টেমে ভোট হবে।’
একটি অসমর্থিত সূত্রের দাবি, বর্তমানে সারা দেশে শিবিরের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার। ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি শাখাকে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ভোট দিতে বলা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন একাধিক দায়িত্বশীল নেতা। এর বাইরে ছাত্র শিবিরের ‘কর্মী’ ও ‘সাথী’ নামে দু’টি সাংগঠনিক স্তর আছে। তবে তাদের ভোটাধিকার নেই।
শিবিরের গঠনতন্ত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের ধারা ১২-এ বলা আছে, কেন্দ্রীয় সংগঠন গঠিত হবে- কেন্দ্রীয় সভাপতি, কার্যকরী পরিষদ এবং একটি সেক্রেটারিয়েটের সমন্বয়ে। ধারা১৩-এ বলা আছে, এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সংগঠনের সদস্যদের প্রত্যেকের ভোটে এক বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
এদিকে, শিবিরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন করতে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। ধারা ৩৩-এ বলা আছে, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন পরিচালনা করবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দু’জন সহকারী নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। সংগঠনের সব স্তরের নির্বাচন পদ্ধতি কার্যকরী পরিষদ নির্ধারণ করবে।
শিবির সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সেশনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন শিবিরের তিনজন সাবেক সভাপতি। তারা হলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। এবারও এই তিনজন নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে থাকতে পারেন। এছাড়া, জামায়াতের সিনিয়র নেতা ইজ্জত উল্লাহও নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের একজন সাবেক নেতা জানান।
মন্তব্য চালু নেই