ছাত্রের টুকরো লাশসহ ‘প্রেমিকা’ আটক

কলেজছাত্রের টুকরো করা লাশ গুম করার সময় জনতা এক তরুণীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছে। পুলিশের দাবি, তরুণীর সঙ্গে কলেজছাত্রের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হাওয়ায় ওই তরুণী ‘ভাড়া করা লোকদের’ দিয়ে কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করে সাত টুকরো লাশ গুমের চেষ্টা করেন।

লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলী এলাকায়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জনতা নরসিংদী সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আনিসা সুলতানা এ্যামিকে (২০) পুলিশে সোপর্দ করে। বুধবার ভোরে পুলিশ নরসিংদী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান শেষ বর্ষের ছাত্র খোরশেদ আলমের লাশের আরো কয়েকটি টুকরো উদ্ধার করে। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করা হয় বলে জানায় পুলিশ।

সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত ) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, ‘নিহত খোরশেদের সঙ্গে কলেজছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

নিহতের বড় ভাই বেদন মিয়া বাদী হয়ে এ্যামিকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ্যামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।

খোরশেদ রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত অহেদ আলীর ছেলে। অপরদিকে এ্যামি নরসিংদী পৌর শহরের গাবতলী এলাকার গোলাম কিবরিয়ার মেয়ে।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পৌর এলাকা গাবতলীর ফকরুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকেন এ্যামি। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

পাঁচ বছর আগে শহরের সঙ্গীতা এলাকার শাকিল মিয়ার সঙ্গে এ্যামির বিয়ে হয়। সোহাগ (২) নামে তাদের একটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু বছর দুয়েক আগে দুজনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

এর পরই খোরশেদ আলমের সঙ্গে এ্যামির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি বিয়ে করা নিয়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল বলে জানান ঘনিষ্ঠরা।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার বিকেলে কলেজছাত্র খোরশেদকে গাবতলীর ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে আসেন এ্যামি। এ সময় তিনি বিয়ের জন্য খোরশেদকে চাপ দেন। তাতে কাজ না হওয়ায় এ্যামি ভাড়া করা চার-পাঁচজন সন্ত্রাসীকে ডেকে নিয়ে আসেন।

একপর্যায়ে খোরশেদকে হত্যা করে লাশ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। পরে গুম করার জন্য বহনের সুবিধার্থে লাশটি সাত টুকরো করে দুই ভাগে বস্তায় ভরে ফেলেন।

পরের দিন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ্যামি ও তার সহযোগিরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে সদর ও শিবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সোনাতলা (পুটিয়া বাজার সংলগ্ন) হাড়িদোয়া নদীতে ফেলতে যান। এ সময় তিন যুবকসহ এক তরুণীর নদীতে বস্তা ফেলার দৃশ্যটি দেখতে পায় মোস্তফা নামের এক পথচারী।

সন্দেহ হলে মোস্তফা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গেলে লাশ ভর্তি বস্তা ফেলে তরুণেরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় এলাকাবাসী এ্যামিকে মস্তকবিহীন লাশের বস্তাসহ হাতেনাতে ধরে ফেলেন। বস্তার মুখ খুলে তাতে মাথা-হাত-পা বিচ্ছিন্ন একটি লাশ দেখতে পায় তারা।

এ সময় এ্যামি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা তাঁকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এ সময় অটোরিকশাটিও আটক করা হয়।

পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ ভোরে শহরের পুরানপড়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে নিহত কলেজছাত্রের মাথা, দুটি হাত, দুটি পা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এনটিভি



মন্তব্য চালু নেই