ছাত্রলীগের সেই অস্ত্রধারী খুনের মামলার আসামি

ঢাকা কলেজের ছাত্র আসাদুজ্জামান ফারুককে গুলি করে হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি তিনি। পুলিশের খাতায় পলাতক, ছাত্রলীগ থেকে ‘বহিষ্কৃত’। সেই ‘পলাতক’ ও ‘বহিষ্কৃত’ ছাত্রলীগ নেতা আবদুল আজিজ ফয়েজকেই গত বুধবার দেখা গেল ছাত্রলীগের মিছিল থেকে গুলি ছুড়তে। তাঁর গুলি ছোড়ার ছবি ছাপা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবারের বিভিন্ন পত্রিকায়।

ফয়েজ ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। তবে গতকাল অস্ত্র হাতে ফয়েজের ছবি ছাপা হওয়ার পর তাঁকে আর চিনতে পারছে না ছাত্রলীগ। উল্টো গুলি ছোড়ার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি। আর পুলিশও কিছুই দেখেনি। সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হলেও সেখানে ছাত্রলীগের ভূমিকা বা উপস্থিতির কোনো তথ্যই নেই।

২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ফুয়াদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দুই পক্ষই একে অপরের দিকে গুলি-বোমা ছুড়ে কলেজে আতঙ্ক ছড়ায়। এ সময় কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আসাদুজ্জামান ফারুকসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ফারুক।

পরদিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান বাদী হয়ে ২৩ জনের বিরুদ্ধে ফারুক হত্যার অভিযোগে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, সেই মামলার ২ নম্বর আসামি ফয়েজ। যোগাযোগ করা হলে সাকিব হাসানও গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র হাতে ছাপা হওয়া ছবিটি তাঁর করা মামলার দুই নম্বর আসামি আবদুল আজিজ ফয়েজের।

মামলাটি এখনো তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ বিষয়ে ডিবির (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি গ্রেপ্তারের সংখ্যা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্তে জানা গেছে, কলেজের দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ফারুক নামে ওই ছাত্র মারা যান। এটা পরিকল্পিত হত্যা নয়।

ওই ঘটনার পর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফুয়াদ হাসান, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আজিজ ফয়েজসহ সাতজনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়। তবে সেই বহিষ্কার যে লোক দেখানো, তার প্রমাণ বুধবারের ছাত্রলীগের মিছিলে তাঁর সরব উপস্থিতি।

ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ছবির সেই অস্ত্রধারী ফয়েজ ঢাকা কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তবে তিনি এখনো কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ১১১ নম্বর কক্ষে থাকেন। গতকাল বারবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রকাশিত ছবিতে তাঁর আশপাশে থাকা অন্য কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক উপ-সম্পাদক সাহাবুদ্দিন ওরফে চঞ্চল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি মনির হোসেন, জহুরুল হক হলের সভাপতি রিফাত জামান, একই হলের ছাত্রলীগের কর্মী রাজু আহমেদ, সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ওরফে পিকুল।

তবে এত চেনা মুখ থাকার পরও গুলি ছোড়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি ছাত্রলীগ। গতকাল সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজের গুলি ছোড়ার বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি এ এইচ এম বদিউজ্জামানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অস্ত্র বহনের দায় বিএনপির ওপর চাপান। ছাত্রলীগের কেউ এ রকম করেনি বলে সাফাই দেন। তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগ সত্য নয়। সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতেই লাঠি-অস্ত্র দেখা গেছে। আমি মনে করি বিএনপির নেতা-কর্মীরাই লাঠি ও অস্ত্র হাতে এসেছিল। তারাই আমাদের ওপর প্রথমে আক্রমণ করেছে। আমরা অনেক সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি।’ তিনি বলেন, সকাল থেকে পাড়া-মহল্লার অস্ত্রধারীদের নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও বুয়েটে আক্রমণ করেছিল। এই আক্রমণে বিক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা গিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনেন।



মন্তব্য চালু নেই