পুলিশের সামনেই অস্ত্র হাতে
ছাত্রলীগই আওয়ামী লীগের বিষফোঁড়া
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশই বেপরোয়া আচরণে দিন দিন লাগামহীন হয়ে পড়ছে। তাদের কর্মকাণ্ডে দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থির। এই মুহূর্তে অন্তত ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বেসামাল। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। আর দুটি ধর্মঘট ডেকে বন্ধ করে রেখেছে ছাত্রলীগ। সর্বশেষ বন্ধ করে দেয়া হল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রায় ছয় বছর ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল-বাণিজ্যের ঘটনায় আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগের নাম। এক হিসাবে দেখা গেছে, বিগত মহাজোট সরকারের মেয়াদকাল ও নতুন সরকারের গত সাড়ে ১০ মাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েক হাজার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গত সাড়ে ১০ মাসেই অন্তত শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর বেশির ভাগই ঘটেছে নিজেদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের জন্য ছাত্রলীগ যন্ত্রণাদায়ী ও বিব্রতকারী সংগঠন হয়ে উঠেছে অনেক নেতা মনে করছেন।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেক জায়গায় এ সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করতে হয়েছে। গত চারদিনেই এ রকম ৩টি কমিটি স্থগিত করার ঘটনা রয়েছে।
১৩ নভেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ওই সভায় জয়ের দেয়া দিকনির্দেশনা সম্পর্কে ছাত্রলীগের সহসভাপতি আশরাফ আলী বলেন, তিনি (জয়) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মেধার আলোয় বিকশিত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ক্লিন ক্যাম্পাস সেভ ক্যাম্পাস নীতিতে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দেন।
কিন্তু ওই সভার পরও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল মহানগরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংঘর্ষসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। রাজধানীর শিক্ষা ভবনেও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে একই সময়ে।
ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা বিরক্ত। আওয়ামী লীগের পক্ষে ছাত্রলীগ দেখভাল করে থাকেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রলীগের সবাই নয়, গুটিকয়েক নেতাকর্মী এ ধরনের ঘটনায় জড়িত। এই অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। একদিনে এটা দূর করাও সম্ভব নয়। এর জন্য প্যাকেজ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে।
তার মতে, চার কারণে ছাত্রলীগে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সেগুলো হচ্ছে- দল ক্ষমতায় আসার পর একশ্রেণীর আগাছা দলে ভেড়ে, যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া, স্থানীয় রাজনীতি এবং শিক্ষক রাজনীতি রয়েছে। সাধারণ ছাত্রদের কাছে ভোট চাইতে যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে ছাত্রলীগের কার্যক্রম অনেকটাই স্বচ্ছ হতো। আর স্থানীয় ও শিক্ষক রাজনীতির কারণে ছাত্রলীগ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটা বন্ধ করা সম্ভব হলেও ছাত্রলীগ অনেকটাই কলুষমুক্ত হবে।
সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে অনেকটা একমত পোষণ করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। তিনি বলেন, একশ্রেণীর শিক্ষক নিজেদের স্বার্থে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করার অপচেষ্টা করেন। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সময় নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হয়। তবে সংগঠন কখনোই দোষীদের প্রশ্রয় দেয় না। সাংগঠনিক শাস্তির বাইরে আইনি অ্যাকশন নেয়ার জন্য আমরা পুলিশকে বলি।
তবে এসব ঘটনার পেছনে আরও দুটি কারণকে অনেকেই বড় দেখেন। এগুলো হচ্ছে- মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি এবং অর্থের বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একশ্রেণীর সন্ত্রাসীকে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতে পদায়নের ঘটনা। সিলেটে বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনার অন্যতম হোতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল শহরের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত বাপ্পাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতির পদ দেয়া হয়েছে। দুমাস আগে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়, সেই কমিটি মাত্র দুমাসের মধ্যে স্থগিত করতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, সারা দেশের সংগঠনের ওপর কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণ নেই। ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যেও এক ধরনের ঢিলেমি চলে এসেছে। সিলেটে বৃহস্পতিবারের ঘটনাকালে সভাপতি লক্ষ্মীপুরে অবস্থান করছিলেন। সাধারণ সম্পাদক কাউকে না জানিয়ে চলে গেছেন সিঙ্গাপুরে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। কেউ চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। আবার কেউ আখের গোছানোর লক্ষ্যে ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসার মতো অপকর্মে ভিড়ে গেছে। বুধবার শিক্ষাভবনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা তারই একটি দৃষ্টান্ত।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, অর্থ নিয়ে কোথাও কমিটি গঠনের ঘটনা নেই। এসবই অপপ্রচার। আর গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই স্থানীয় পর্যায়ের সম্মেলন শেষে সিনিয়র নেতা বাদ পড়লে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সংগঠনে চেইন অব কমান্ডের কোনো সমস্যা নেই। বিচ্ছিন্ন ঘটনা দৃষ্টান্ত হতে পারে না।
৬ বছরে ক্যাম্পাসে খুন : সিলেটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের অন্তর্™^ন্দ্ব, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত জুলাই মাসে ১৮ দিনের ব্যবধানে ৩ জন খুন হয়। ১৪ জুলাই রাতে ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ কচিকে খুন করে নিজ দলের ক্যাডাররা। অভিযোগ রয়েছে, গোলজার গ্রুপের কর্মীরা ছাত্রলীগ নেতা কচি ও সানির ওপর হামলা করে। হামলায় কচি নিহত হলেও সানি মারাত্মক আহত হয়ে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। ২৭ জুলাই নগরীর পাঠানটোলায় গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক প্রতিপক্ষ গ্র“পের হামলায় খুন হন। ৪ জুন ওসমানী মেডিকেল কলেজের আবুসিনা ছাত্রাবাসে কলেজ ছাত্রদলের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২ লাখ টাকা চাঁদার জন্য এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি সৌমেন দে। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় সিলেট রেলস্টেশন থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
১৩ জুলাই ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুন হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ। যবিপ্রবিতে এটিই প্রথম হত্যাকাণ্ড।
এর আগে ১ এপ্রিল ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) নিজ দলের কর্মীদের হামলায় খুন হন ছাত্রলীগ নেতা সায়াদ ইবনে মোমতাজ। ওই হত্যা মামলায় পুলিশ ১৪ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা আছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষের কারণে ক্রসফায়ারে এক শিশু নিহত হয়। একইভাবে টেন্ডার দখল নিয়ে দুগ্র“পের বন্দুকযুদ্ধে চট্টগ্রামেও এক শিশুর জীবন বলি হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ বছরে ৫টি খুনের ঘটনা ঘটে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শেরেবাংলা হলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় রাবি শিবিরের সেক্রেটারি শরীফুজ্জামান নোমানি ওই হলে আটক নেতাকর্মীদের উদ্ধার করতে গেলে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন। ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি রাতে রাবি ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগ এবং পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত হন গণিত বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন। একই বছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ইফতারির টোকেন ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে রাবি ছাত্রলীগের দুগ্র“পের মাঝে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিরুল্লাহ নাসিমকে শাহ মখদুম হলের দোতলার ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় দলীয় কর্মীরা। এর এক সপ্তাহ পর ২৩ আগস্ট ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নাসিমের।
২০১১ সালের ১৬ জুলাই পদ্মা সেতুর টাকা ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক গ্র“পের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় মাদার বখ্?শ হলের সামনে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় ছাত্রলীগ কর্মী ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল সোহেল। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা রুস্তম আলী আকন্দ। এ হত্যার সঙ্গেও ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে শাহ আমানত হলে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছাত্রশিবিরের দুই কর্মী নিহত হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমানত হল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবায়ের আহমেদ নামে এক কর্মীকে কুপিয়ে খুন করে নিজ সংগঠনের প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে সাভারের আশুলিয়া থানায় ১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে।
ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক আলোচিত খুন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১০ সালের ৩ ফেব্র“য়ারি স্যার এএফ রহমান হলের সিট দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের সময়ে খুন হন আবু বকর সিদ্দিক।
তবে ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বরের আরেকটি ঘটনা। হরতালবিরোধী মিছিল থেকে রড-লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বিশ্বজিৎ দাশ নামে একজন পথচারীকে মাত্র ১০ মিনিটে খুন করেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পুরান ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
যখন-তখন হামলা, সংঘর্ষ : ১৪ নভেম্বর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়। ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ আগামী ৩ মাসের জন্য কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় নকলে সহযোগিতা করার অভিযোগে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং একটি আবাসিক হল শাখার সভাপতিকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে ছাত্রলীগ।
১৪ মে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলের জের ধরে প্রায় দুই সপ্তাহ লাগাতার পরস্পরবিরোধী অবরোধ কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রাখে ছাত্রলীগের একাংশ। টানা ৪৩ দিন বন্ধ থেকে ৯ নভেম্বর ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিনেই ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। আবার অবরোধের ডাক দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। ১০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন ও শিক্ষক বাস বন্ধ করে রাখে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ।
এর আগে ১৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের রাতভর ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়।
১৬ অক্টোবর একদিনেই গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৩ জন গুলিবিদ্ধ এবং শিক্ষক, পুলিশসহ আরও ২৭ জন আহত হন।
২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকে কেন্দ্র করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ছুরিকাঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ২০১২ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুগ্র“পের মধ্যে দফায় দফায় তুমুল সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ওই ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ কলেজটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-বাণিজ্যে বাধা দেয়ায় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের উপশিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক ইমদাদুল হক প্রকাশ্যে পেটায় ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক ড. অনুপম হীরা মণ্ডলকে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দোকানে ফাও খাওয়াকে কেন্দ্র করে ২ মার্চ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৩২ শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়।
গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ৪০ নেতাকর্মী আহত হয়। এর আগে ১২ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ফের হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ হামলায় ৩০ শিক্ষক আহত হন। এর আগে ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর আরেক দফা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
একই বছর ১৫ জানুয়ারি বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (মুসলিম) ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে দুদফা সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়।
ওই বছর ১২ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে অর্ধশত ছাত্র ও ওসি আহত হন।
২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর এসিড নিক্ষেপ ও মারধরের ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায়ও ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হরতাল সমর্থক সন্দেহে চার ফটোসাংবাদিককে মারধর করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরিচয়পত্র দেখিয়েও সাংবাদিকরা রেহাই পাননি।
২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্সবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছোড়ে। এতে ৪০ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসে ছাত্রী উত্ত্যক্ত, যৌন নিপীড়ন, সংঘর্ষসহ অনেক ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার নেপথ্য নায়ক থাকে ছাত্রলীগ। সূত্র : যুগান্তর ও মানব জমিন
মন্তব্য চালু নেই