ছাত্রদল ও শিবিরের নেতৃত্বে হচ্ছে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য
২০ দলীয় জোটের আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে আবারো গঠিত হচ্ছে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য। এ ফোরামে ২০ দলীয় জোটভুক্ত ছাত্র সংগঠনের বাইরে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে অংশ নিতে চিঠি দেয়া হবে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তারা জানায়, সরকার পতনের অন্দোলনে ছাত্রঐক্যের বিকল্প কিছু নেই। এ লক্ষে জোটভুক্ত সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এবং সবাই এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। খুব শিগগিরই সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের বিষয়ে একটি ঘোষণা আসবে।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের মূল চালকের ভূমিকায় থাকবে ছাত্রদল ও শিবির। উভয়ের সমন্বয়ে সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে। এছাড়াও ঢাকা মহানগরের প্রত্যেক ওয়ার্ড ও থানায় সমন্বিত কমিটি থাকবে। যারা রাজধানীতে কার্যকর আন্দোলনের ভূমিকা রাখবে।
ছাত্রশিবিরের সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, আমরা সবগুলো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশেষ করে ছাত্রদলও এখন মনে করছে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য জরুরি। এই ঐক্য প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এখন বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে। শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।
তিনি আরো বলেন, অচিরেই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে ছাত্র সমাজ। জোটের সব ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বিভিন্ন উপায়ে কথা চলছে। যা এখন ইতিবাচক পর্যায়ের রয়েছে।সমন্বয় করে পরিকল্পনা মতো আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পারলেই আমরা সফল হব।
জোট সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যর দাবি উঠেছিল। কিন্তু ছাত্রদল ঐক্য গঠনে অনীহা প্রকাশ করে। যার কারণে ছাত্রঐক্য গঠন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
২০০১ সালে আওয়ামী সরকারের পতনের জন্য সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য বিশেষ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে তার কোনো কার্যক্রম নেই। এর পেছনে ছাত্রদলকেই বেশি দায়ী করা হচ্ছে। সাবেক ছাত্রদল সভাপতি নাসিরুদ্দিন পিন্টু ও হাবিবুন নবী খান সোহেল সভাপতি থাকাকালীন ছাত্রদল-শিবিরের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো ছিল। তখন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল। এরপরে ছাত্রদলের সভাপতি যারা হয়েছেন তারা শিবিরের সঙ্গে ঐক্য করতে ঘোর আপত্তি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক সহ-সভাপতি জানান, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ মোবাকেলায় ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। স্বৈরাচার বিরোধী সব আন্দোলনেরই ছাত্র সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০১ এর মতো বিভেদ ভুলে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয় করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দেশের স্বার্থে জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গড়া এখন সময়ের দাবি।
ইসলামী ছাত্র খেলাফত বাংলাদেশের সভাপতি আনছারুল হক ইমরান নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “জানুয়ারির মাসের প্রথম দিকে ছাত্র শিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাতের নেতৃত্বে কয়েকজন শিবির নেতা সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। তখন আমাদের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছিলো। আমরাও এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।”
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির ছাত্র সংগঠন জাগপা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এতদিন সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ব্যানারে আন্দোলন না হওয়ার পেছনে মূলত ছাত্রদল ও শিবির দায়ী। তারা বৃহৎ সংগঠন, কিন্তু তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নব্বইয়ে এরশাদ পতন ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে মূল ভূমিকা রেখেছিল ছাত্র আন্দোলন। বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ছাত্রঐক্যর বিকল্প নেই।
ছাত্রশিবিরের সম্পাদক পর্যায়ের নেতা বলেন, অচিরেই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে ছাত্র সমাজ। জোটের সব ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বিভিন্ন উপায়ে কথা চলছে। যা এখন ইতিবাচক পর্যায়ের রয়েছে।সমন্বয় করে পরিকল্পনা মতো আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পারলেই আমরা সফল হব।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “বিগত সব আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভুমিকার কারণে কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছতে পেরেছি। আমরা সবসমই সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের পক্ষে ছিলাম, এখনো আছি। সকল ছাত্র সমাজ এ প্রক্রিয়ায় একমত। সে প্রক্রিয়া চলছে।”
২০ দলের জোট হলেও বেশিরভাগ দলেরই ছাত্রসংঠন নেই। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠন হলে তা হবে মূলত ছাত্রদল ও শিবিরের ঐক্য।
মন্তব্য চালু নেই