“চুলে ঝুটি বেঁধে অনুষ্ঠানে যাওয়ার সেই দিনগুলির কথা আজও মনে পড়ে”
তখন ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলাম আমি। আজও মনে পড়ে; ফ্রক পড়ে চুলে দুই ঝুটি বেঁধে প্রোগ্রামে যাওয়ার সেই দিনগুলির কথা। ছোট্টবেলার সেই মধুর দিনগুলো অনেক আগেই ফেলে এসেছি। তারপরও এমন কিছু স্মৃতি থাকে সেগুলো আজও মনে দোলা দিয়ে যায়। কথাগুলো বলছিলেন এ প্রজন্মের একজন সঙ্গীতশিল্পী লায়লা তাজনূর। তিনি মূলত: নজরুল সঙ্গীতশিল্পী। উত্তর বঙ্গের গাইবান্ধা জেলা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছোট্ট থেকেই সঙ্গীতের প্রতি লায়লা তাজনূর ছিল খুব অনুরাগী। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি বিটিভির নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানে পুরষ্কৃত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে সঙ্গীতের স্বীকৃতি সরূপ পেয়েছিলেন বেশ কিছু এ্যাওয়ার্ড।
লায়লা তাজনূর মূলত: নজরুল সঙ্গীতশিল্পী হলেও তিনি আধুনিক ও ফোক সহ বেশ কিছু প্লে-ব্যাক গানও করেছেন। জীবনের এই অল্প সময়ে তিনি অনেক গুণিশিল্পীদের সাথেও গান করার সুয়োগ পেয়েছেন। বিটিভির এক বিশেষ আয়োজনে হাসান মতিউর রহমানের কথা ও সুরে ‘বঙ্গবন্ধু’কে নিয়ে একটি গান পরিবেশন করে সেই সময় তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন।
লায়লা তাজনূরের মা আফরোজা বেগম (লুপু) একজন বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পী। সঙ্গীতাঙ্গনে তার মায়ের পদাচারণ ছিল অনেক বিস্তৃর্ণ। লায়লার সঙ্গীত জগতে পা রাখার শুরুটা এবং পথচলার প্রতিটা ধাপে ছিল মায়ের অসামান্য অনুপ্রেরণা। মা-বাবার পাশাপাশি শুভাকাঙ্ক্ষী ও স্বজনদের অকৃত্রিম ভালবাসাও অনুপ্রাণিত করেছে লায়লাকে। নতুন বছরের শুরুতে নিজের একটি অ্যালবামের কাজ শুরু করবেন বলেও জানিয়েছেন লায়লা তাজনূর। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং ২০০৪ সালে বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।
সম্প্রতি এই উদীয়মান শিল্পীর সাথে কথা হয় আওয়ার নিউজ বিডি’র বার্তা সম্পাদক আবু রায়হান মিকাঈলের। পাঠকদের জন্য সেই কথাপোকথনের চুম্বক অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো :
আওয়ার নিউজ বিডি : আওয়ার নিউজ বিডি’র পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন, কেমন আছেন?
লায়লা তাজনূর : আলহামদুলিল্লাহ্, ভাল আছি।
আওয়ার নিউজ বিডি : কিভাবে আপনার সঙ্গীত জগতে প্রবেশ বলবেন কী?
লায়লা তাজনূর : আমার জন্ম হয়েছে উত্তর বঙ্গের গাইবান্ধা জেলা শহরে। আমার মামুনি (মা), আব্বু, দাদু, আর খালারা প্রায় সবাই গান করতেন। ছোটবেলায় তাদের গান শুনেই আমার সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ এবং শেখা শুরু হয়। মূলত: আমার মামুনির কাছেই আমার সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনি এ পর্যন্ত কতটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন?
লায়লা তাজনূর : আমি মূলত নজরুল সঙ্গীতশিল্পী। পাশাপাশি আধুনিক, দেশাত্ববোধক গান এবং ফোক পরিবেশন করে থাকি। আমার শিক্ষক গাইবান্ধার স্বপন চৌধুরী, শাহ মশিউর রহমান, পরবর্তীতে ঢাকায় দেশবরেণ্য শিল্পী নীলুফার ইয়াসমীনের কাছে নজরুল সংগীত, ক্ল্যাসিক্যাল এবং নজরুল সংগীত শিল্পী/প্রশিক্ষক খায়রুল আনাম শাকিল এর কাছে নজরুল সংগীতের তালিম নেই। এছাড়াও ২০০৭ সালে রাজধানীর ‘ছায়ানট’-এ ৫ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করি (নজরুল)।
আওয়ার নিউজ বিডি : এ পর্যন্ত আপনার কতটি একক ও মিশ্র অ্যালবাম বাজারে এসেছে?
লায়লা তাজনূর : কিছু মিক্সড অ্যালবাম এ কাজ করেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সামনের বছর ইনশাআল্লাহ একক অ্যালবামের কাজ শুরু করব। এছাড়া আমি জিংগেল-এ কাজ করেছি।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনি কি সিনেমার কোনো গানে কন্ঠ দিয়েছেন?
লায়লা তাজনূর : ২০০১ সালে ‘দুর্গম ভাটি’ চলচ্চিত্রে কন্ঠ দেই। এরপরে লেখাপড়ার ব্যস্ততার কারণে প্লে-ব্যাক এ সুযোগ আসলেও করা হয়নি।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনি বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত শিল্পী হয়েছিলেন কত সালে?
লায়লা তাজনূর : ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং ২০০৪ সালে বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত হয়েছিলাম।
আওয়ার নিউজ বিডি : সঙ্গীতের স্বীকৃতি স্বরূপ আপনি কী পেয়েছেন?
লায়লা তাজনূর : আমি ছোটবেলা থেকে সংগীত বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়মিত করতাম। জেলা-বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়েও অংশগ্রহন করেছি। ২০০৩ সালে ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ’ প্রতিযোগিতায় দেশাত্ববোধক গান গেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করি, সেই মূহুর্তটি আমার জন্য ছিল স্মরণীয় এক মূহুর্ত।
আওয়ার নিউজ বিডি : মাত্র ৮ বছর বয়সে বিটিভি’র নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানে তো আপনার অভিষেক হয়েছিল। আপনার সেই সময় অনুভূতিটা কেমন ছিল।
লায়লা তাজনূর : বিটিভির নতুন কুড়িতে ৮ বছর বয়সে ছড়া গানে পুরষ্কৃত হই। তখন ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলাম আমি, তবে আজও মনে আছে ফ্রক পড়ে চুলে দুই ঝুটি বেঁধে আমি প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। আমার গাওয়া সেই ছড়া গানটির কথাগুলো ছিল এমনই- ‘সিংহ মামা সিংহ মামা, মাংস খেতে চাও, রাজহংস দেবো তোমায় হিংসা ভুলে যাও’…।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনি বিটিভি, বেতার ছাড়া আর কোথায় কোথায় প্রোগ্রাম করেছেন?
লায়লা তাজনূর : বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্টেজ প্রোগ্রামগুলো করেছি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত ওস্তাদজি ইয়াসিন খান এবং ওস্তাদ শহীদুজ্জামান স্বপন-এর তত্ত্বাবধায়নে উচ্চতর সংগীত কর্মশালায় অংশ নিয়েছি। গত বছর কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিবস উপলক্ষে রেডিও ধনি’র (৯১.২ এফ এম) বিশেষ আয়োজনে নজরুলের ১৫টি গান পরিবেশন করেছিলাম।
আওয়ার নিউজ বিডি : কখনো কি দেশের বাহিরে স্টেজ শো করতে গিয়েছেন?
লায়লা তাজনূর : দেশের বাইরে এখনো কোনো প্রোগ্রামে যায়নি। তবে সামনে কোনো ভালো সুযোগ পেলে অবশ্যই যাবো।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনার একাডেমিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে কিছু বলুন।
লায়লা তাজনূর : গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এস.এস.সি ও গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। এইচএসসি পাস করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘হোম ইকোনোমিক্স’ কলেজ থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেছি।
আওয়ার নিউজ বিডি : এ প্রজন্মের শিল্পীদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
লায়লা তাজনূর : এ প্রজন্মের অনেক শিল্পীর গান আমাকে মুগ্ধ করে। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন…
লায়লা তাজনূর : একজন ভালো শিল্পী হিসেবে নিজেকে সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
আওয়ার নিউজ বিডি : আমাদের পাঠক ও আপনার লাখো ভক্তের জন্য কিছু বলার আছে কী?
লায়লা তাজনূর : সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো সাধনাটা রাখতে পারি। খুব উঁচুতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিনা। অল্প যে কটা দিন বাঁচব নিজের পরিচয়ে, আর সবার ভালবাসা সাথে নিয়ে দিনগুলো কাটাতে চাই। আর গান তো মনের খোরাক নিজের ভালো লাগা….
আওয়ার নিউজ বিডি : ধন্যবাদ দীর্ঘক্ষণ আওয়ার নিউজ বিডিকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
লায়লা তাজনূর : আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
লায়লা তাজনূরের কিছু ভিডিও গান নিচে দেওয়া হলো
মন্তব্য চালু নেই