চীন সম্পর্কে আজব ও মজার জানা-অজানা ১১ তথ্য

চীন সম্পর্কে জানার আগ্রহ কার নেই? প্রযুক্তিজগতে আধিপত্য বিস্তারকারী চীন অনেক উন্নত হলেও সেখানে এখনও এমনকিছু ঘটনা আছে যা বিশ্বের আর কোথাও নেই। এখন চীন সম্পর্কে জানবো এমনই কিছু মজার ঘটনা ও তথ্য।
বেইজিংয়ের দূষিত পরিবেশ
চীনের পরিবেশ কতটা দূষিত তা জানলে আপনি চমকে উঠতেই পারেন। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের আবহাওয়ায় সারাদিন ছিলেন? তাহলে জেনে নিন আপনি সারাদিন ২১টি সিগারেট যে পরিমাণ বায়ু দূষণ করে ঠিক সেই পরিমাণ দূষিত বাতাসে ডুবে ছিলেন।
গ্রেট চায়না’র তথ্য থেকে জানা যায়, চীনের দূষণ মহাকাশ থেকেও দেখা যায়! জানেন কী চীনের ৯০% পানি বিষাক্ত! টিভি বা ছবিতে লক্ষ করলে দেখা যায় চীনের অধিবাসীরা অনেকেই মুখে মাস্ক পড়েছেন। এর কারণ হচ্ছে ঐ স্থানের আবহাওয়ার দূষণমাত্রা অত্যাধিক।
প্রস্রাবের মধ্যে সিদ্ধ করা ডিম খাওয়া
চীন সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে। তা হচ্ছে- “ চীনারা টেবিল-চেয়ার ছেড়ে চার পদের খাবার খায়”।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, চীনের অধিবাসীরা অবিবাহিত ছেলেদের প্রস্রাবে সিদ্ধ করা ডিম খায়! এই প্রথা হাজার বছর ধরে প্রচলিত আছে। স্থানীয় স্কুল থেকে তারা প্রস্রাব সংগ্রহ করে।
বিশ্বাস করা হয়, এই ডিম খেলে কোমর, পা এবং জয়েন্ট বা অস্থি-সন্ধির ব্যথা সেড়ে যায়। সেইসাথে শরীরে পুরোদিন শক্তি সঞ্চিত থাকে। এছাড়াও এজন্য তারা তেলাপোকা, ইঁদুর, কুকুর, কুমিরও খেয়ে থাকে।
মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পূর্বে ভ্রাম্যমান গাড়ি ব্যবহার
চীনের জেলখানায় এমন একটি আশ্চর্যজনক নিয়ম চালু আছে যেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ভ্রাম্যমান গাড়িতে করে প্রদর্শন করা হয়! বলা হয় এতে কতজন আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল তা জনগন জানতে পারবে।
তবে অনেকের ধারণা, সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের সঠিক সংখ্যা জানানোর জন্য এটি একটি আইওয়াস মাত্র। কারণ তারা যতজন আসামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তার থেকে কম সংখ্যক প্রদর্শন করে।
হিউম্যান রাইটস’র তথ্য অনুসারে, চীনে প্রতি বছর হাজারের অধিক লোককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। মাদক চোরাচালান, কোনকিছুতে ভেজাল দেয়া বা দূর্নিতী করলেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে।
আগে চীনে ফায়ারিং স্কোয়াড কর্তৃক গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেও বর্তমানে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয়।
সৈনিকদের ঘাড়ে পিন লাগানো
চীনের আর্মি হচ্ছে বিশ্বের সবথেকে বড় বাহিনী। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাজেটের পরই চীনের সেনাদের বাজেটের স্থান। জানা যায়, এই পরিমাণ হচ্ছে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!
চীনের আর্মিদের অনেক কঠিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের সময় নতুন সৈনিকদের কলারে পিন লাগিয়ে দেয়া হয়! এতে তাদের ঘাড় বাঁকা করার সুযোগ থাকে না।
কুকুর ছাড়াও চীনা আর্মিরা বানর, হাঁস এবং কবুতরকেও প্রশিক্ষিত করে তোলে। তারা ১০ হাজারের অধিক কবুতরকে সংবাদ আদান-প্রদানের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যাতে আধুনিক প্রযুক্তি কোন কারণে ব্যর্থ হলে এগুলি ব্যবহার করা যায়।
১০ দিনব্যাপী যানজট
জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে চীনে যানবাহনের সংখ্যাও অনেক বেশি। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে বেইজিং-তিব্বত হাইওয়েতে সবচেয়ে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়। ৯৯ কিলোমিটারের একটি জট ১০দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। জট খোলার পরও চলাচল স্বাভাবিক হতে আরো ৫দিন পর্যন্ত সময় লেগেছিল।
চীন বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদা রাস্তা তৈরি করেছে। যাতে পায়ে চলার পথে ফোন ব্যবহার করার সময় দূর্ঘটনার কবলে না পড়ে।
৪ কোটি লোক গুহায়
চীনের সানজি প্রদেশের ইউনানে এখনও প্রায় ৪ কোটি লোক গুহায় বাস করে! যে সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা থেকেও বেশি। এগুলোকে কৃষকের গুহা বা চীনা ভাষায় ইয়াওডঙ্গ বলে। গুহায় গরমে ঠাণ্ডা এবং ঠাণ্ডার সময় গরম লাগে।
প্রায় ১৮ হাজার বছর পূর্বে ইয়োলো নদী থেকে পাহাড় এবং প্রাকৃতিক গুহা তৈরি হয়েছিল। ৪ হাজার বছর পূর্বে থাকার জন্য মানুষজন নিজেরাই গুহা তৈরি করতে থাকে।
গুহাগুলোতে বিদ্যুত ও প্লাম্বিং সুবিধা রয়েছে। তবে তারা অনেকগুলো প্রাকৃতিক গুহা নষ্টও করে ফেলেছে।
কুকুরের মাংস উৎসব
চীনের গুয়াংজী প্রদেশের ইউলিন শহরে প্রতি বছর জুন মাসে কুকুরের মাংস উৎসব পালিত হয়! এতে আনুমানিক ১০-২০ মিলিয়ন কুকুর হত্যা করা হয়।
ভিডিও গেমস আসক্তি নিরাময় কেন্দ্র
চীন সরকার অতিরিক্ত আসক্তি ধরায় এমন সব গেমস বন্ধ করে দিয়ে থাকে। গেমস এর প্রতি আসক্তি দূর করতে চীনে রয়েছে গেমস দূরীকরণ নিরাময় কেন্দ্র! এতে বাচ্চাদেরকে শরীরচর্চার শিক্ষা প্রদান করা হয় যাতে তারা গেমস আসক্তি থেকে সরে আসতে পারে।
কুকুরকে বাঘ বানানো
পোষা কুকুরকে রং করে বাঘ, পাণ্ডা এবং জেব্রা বানানো চীনের একটি ট্রেন্ড। ২০১৩ সালে একটি রং করা কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে গেলে অনেকেই তাকে বাঘ ভেবে ভুল করেছিল।
বছরে ৭০টি উঁচু ভবন তৈরি
অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য চীনে কয়েক বছর আগে দ্রুত নির্মাণ কাজ বেড়ে যায়। চীনে ২০১১-২০১৩ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ সিমেন্টের ব্যবহার হয় তা নাকি আমেরিকায় পুরো বিশ শতকেও হয়নি! সে সময় গড়ে প্রতি পাঁচদিনে একটি আকাশচুম্বী দালান তোলা হত। বছরে এ সংখ্যা হত কমপক্ষে ৭০টি! চীনে ১৫টি মেগাসিটি রয়েছে এবং প্রতিটি মেগাসিটিতে ১০মিলিয়ন লোক বাস করে।
এত জনসংখ্যার মাঝেও আরেকটি অদ্ভুদ কথা হচ্ছে সেখানে এখনও ৬৪ মিলিয়ন ঘর ফাঁকা পড়ে আছে!
ব্রা’র উপর ডিগ্রী
চীন সম্পর্কে অনেক আজব তথ্য জানতে জানতে ক্লান্ত হয়েছেন তাইতো? সুতরাং এই তথ্যটি দিয়েই আজকের লেখার সমাপ্তি টানছি।
চীনের হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে ব্রা’র উপর ডিগ্রী দেয়া হয়। চীনের সবথেকে বড় অন্তর্বাস প্রস্তুতকারক কোম্পানী “টপ ফর্ম” এর ব্রা ল্যাবরেটরিও রয়েছে। এই কোম্পানী ভিক্টোরিয়া সিক্রেট, প্লেটেক্স এবং মেডেনফর্ম এর মত বিখ্যাত ব্রান্ডের ৬০ মিলিয়নেরও অধিক অন্তর্বাস তৈরি করে।
মন্তব্য চালু নেই