চীনের গোল্ড মেডেলের কারখানা (দেখুন ছবিতে)

৭৭৬ খৃষ্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে ৩৯৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১২০০ বছর প্রাচীন গ্রীসের এলিসে অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে দেবতা জিউসের উদ্দেশ্যে ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হত অলিম্পিক গেমস। তার প্রায় ১৫০০ বছর পর ফরাসী শিক্ষাবিদ ব্যারন পিয়েরে ডি কুব্যার্তা প্রাচীন গ্রীসের সে ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরিত করে আধুনিক অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সচেষ্ট হন। আধুনিক কালের বৃহত্তম খেলাধুলার আসর অলিম্পিক গেমস প্রতি ৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সেই ১৮৯৬ সাল থেকে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই অংশ নিচ্ছে অলিম্পিক গেমসে।
১৯৮০ সালের দিকে চীন অলিম্পিকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালে বেইজিং এ অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে চীন। দীর্ঘদিন ধরে অলিম্পিক গেমসের একক পদক তালিকার শীর্ষে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে ৫১টি স্বর্নপদক জয় করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শীর্ষস্থান ছিনিয়ে নেয় চীন। তবে চীনের এই খ্যাতি অর্জনের পিছনের দৃশ্যটা কিন্তু মোটেও সুখকর ছিল না।
দৃশ্যটি হৃদয়বিদারক। ছোট ছোট শিশুদের সকাল হলেই পাঠানো হয় চীনের ক্রীড়া প্রশিক্ষণ স্কুলগুলোতে। সেখানে তাদের অলিম্পিক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের জন্য পারদর্শী করে তোলা হয়। চীনের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন নিয়ম করে সেই স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষণ নিতে যায়। প্রতিদিনের প্রশিক্ষনে তাদের কি পরিমাণ কষ্ট হয় তা তাদের অশ্রুসিক্ত চোখ দেখলেই বোঝা যায়। অনেক বাবা-মা আবার সন্তানদের স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। তাদের আশা একটাই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে অলিম্পিকের আসর থেকে গোল্ড মেডেল নিয়ে আসা।
আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চীনে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৯০ সালের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ স্কুলের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ছয়’শ এর মতো। সাংহাইয়ের নামকরা ক্রীড়া প্রশিক্ষণ স্কুলগুলোর মধ্যে পুদং ক্রীড়া স্কুল অন্যতম। অনেক বড় বড় অ্যাথলেটিক তৈরি করেছে এই স্কুলটি। এখান থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। এত কিছুর পরেও নামকরা এই ক্রীড়া স্কুলের কমিটির সম্পাদকের মুখে দেখা গেল হতাশার ছাপ।
তিনি বলেন, ‘ ১৯৮০ ও ১৯৯০ সালের দিকে এই স্কুলগুলো ছিল সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই এখানে সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিতে নিয়ে আসতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের এখানে পাঠাতে কম আগ্রহ দেখায়।’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে ফুলটাইম প্রশিক্ষণ নিলে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। এছাড়া এখানে অনেক কষ্ট এবং কঠিন পরিশ্রম করতে হয় শিশুদের।’ ছয় বছর বয়স থেকে এই স্কুলটিতে শিশুদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। অনেক বাবা-মা করেন যদি সন্তান দিনভর প্রশিক্ষণ নেয় তাহলে গোল্ড মেডেল পেলেও বাকিটা জীবন তাদের অজ্ঞ হয়ে থাকতে হবে।
এদিকে ক্রীড়া স্কুলগুলোর পরিচালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণ দুটি ভিন্ন জিনিস। ছেলেমেয়রা দিনেরবেলা প্রশিক্ষণ নিলেও রাতের বেলা পাচ্ছে অফুরন্ত সময়। সেই সময় তারা তাদের পড়াশোনা সারতে পারে। আর এই জন্য অনেক প্রশিক্ষণ স্কুলগুলোতে সান্ধ্যকালিন শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই ২০০৮ সালের বিজয়ীর স্থান ধরে রাখা। এভাবে অ্যাথলেটিক থেকে চীনের আধিবাসীদের অনিচ্ছা বাড়তে থাকলে সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যখন অলিম্পিক থেকে ছিটকে পড়বে চীন। আর এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহন করবে এমনটিই বললেন চীনের ক্রীড়াবীদরা।
মন্তব্য চালু নেই