এশিয়া কাপ- ২০১৬

চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের লড়াই আজ

মাঠের লড়াইয়ে জাতশত্রু। এক ইঞ্চি জমিন ছাড় দিতে নারাজ পরস্পরকে। অথচ মাঠের বাইরে পরম বন্ধু! ভারত ও পাকিস্তান— প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়েই চিরপ্রতিপক্ষ। সেটা রাজনীতি হোক, কিংবা অর্থনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি খেলাধুলা হলেও। বিভেদের দেয়াল এতটাই শক্ত ও উঁচু যে, একে অন্যের চেহারা দেখতেও যেন নারাজ! ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশের মধ্যে এমন বৈরী আচরণ দেখা যায় না। এমন তীব্র প্রতিশোধমূলক মানসিকতা নেই। পেলেই যেন একে অন্যকে চিঁড়ে চ্যাপ্টা করে দেয়! চরম বৈরী মানসিকতা নিয়ে দুই প্রতিবেশী, দুই ক্রিকেট পরাশক্তি আজ ব্যাট-বলের লড়াইয়ে নামছে। মিরপুরের সবুজ ঘাসের উইকেটে ভারত ও পাকিস্তান আজ খেলতে নামছে এশিয়া কাপের শিরোপা জেতার টার্গেটে। এ লড়াইয়ে ধোনিবাহিনীর বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনকে লড়তে হবে আফ্রিদিবাহিনীর গতির বিরুদ্ধে।

১৯৮৪ সালে এশিয়া কাপ শুরু। প্রথম আসরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই দলই খেলেছিল এবং জিতেছিল ভারত। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই দল সব মিলিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে ১০ বার। লড়াইয়ের পরিসংখ্যান এখন সমানে সমান। পাঁচের বিপরীতে পাঁচ। আজ এগিয়ে যাওয়ার পালা। এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে দুই দল আজ এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো খেলবে টি-২০ ক্রিকেট। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের এ লড়াইয়ে আবার ভারত এগিয়ে। ছয় ম্যাচের চারটিতেই হেসেছে ভারত এবং একটিতে পাকিস্তান। টাই হয়েছিল একটি এবং সেটা ২০০৭ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে। টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-২০ ম্যাচ মিলিয়ে সাফল্যের পরিমাণ পাকিস্তানের বেশি। দুই দল এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছে ৫৯টি। তাতে ভারতের ৯ জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের ১২টি। ওয়ানডেতেও এগিয়ে পাকিস্তান। ১২৭ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৭২ এবং ভারতের ৫১। পরিত্যক্ত ম্যাচের সংখ্যা ৪। লড়াইয়ের পরিসংখ্যান এমন হলেও প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের খেলা দেখতে সূক্ষ্ম বিভাজনের সৃষ্টি হয় গোটা দুনিয়ায়। তেরঙা পতাকার সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দেয় পাকিস্তানের পতাকা। ম্যাচ ঘিরে আজ হয়তো মিরপুরেও দর্শকের বিভাজন আসতে পারে। কেউ বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, যুবরাজ সিংদের সমর্থন জোগাবেন। কেউ বা আবার আফ্রিদি, উমর আকমল, মোহাম্মদ আমিরদের সমর্থন দেবেন।

ভারত এরই মধ্যে এশিয়া কাপে ম্যাচ খেলেছে। স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৫ রানের জয় নিয়ে আজ ময়দানি লড়াইয়ে নামছে ধোনিবাহিনী। পাকিস্তান খেলতে নামছে প্রথম ম্যাচ। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে ভারত কিছু এগিয়ে। কিন্তু পাকিস্তানের বোলিং দুর্ধর্ষ। তিন বাঁ হাতি পেসার মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ ইরফানের সঙ্গে রয়েছেন মোহাম্মদ সামি। এ মুহৃর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস কোয়ার্টেট তারা। বিপরীতে ভারতের ব্যাটিং লাইন সাজানো শেখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, যুবরাজ সিং, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের নিয়ে। এতসব তারকার লড়াই দেখতে আজ মিরপুরে হুমড়ি খেয়ে পড়বে দর্শক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শক্তির পার্থক্য যতই থাকুক, দুই দল মাঠে নামা মানেই রক্তের নাচন শুরু হয়ে যাওয়া। ওয়ানডে ক্রিকেটে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক রোহিত ম্যাচ নিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের বোলিং যথেষ্ট শক্তিশালী। আমাদের ব্যাটিংও শক্তিশালী। আমরা যদি আমাদের শক্তি অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে জেতার সম্ভাবনা আমাদেরই বেশি।’ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক আফ্রিদি। এশিয়া কাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ‘বুমবুম’ আফ্রিদি ভারতকে সমীহ করেই বলেন, ‘ভারতের ব্যাটসম্যানেরা স্পিনের বিপক্ষে খুব ভালো। আমাদের পেসাররাও খুব ভালোমানের। আমরা যদি পরিকল্পিত ক্রিকেট খেলতে পারি, তাহলে চিন্তার কিছু নেই।’

দুই দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। পার্থের ওই লড়াইয়ে হেসেছিল ভারত। এশিয়া কাপের সর্বশেষ লড়াইয়ে হেসেছিল পাকিস্তান। ২০১৪ সালের সর্বশেষ এশিয়া কাপের লড়াইয়ে পাকিস্তান ১ উইকেটে হারিয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের। আজ কি পাকিস্তানের সেই ধারাবাহিকতা থাকবে, না প্রতিশোধ নেবে ভারত? জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই