চিতায় স্বামীর লাশ, ঘরে আহত সন্তানের আহাজারি

screenshot_2016-06-01-17-31-44-1সুজন দাস, চাঁদপুর থেকে : চিতায় জ্বলছে স্বামীর লাশ, কিছুক্ষণ পরেই ভস্ম হয়ে ছাই ডাকাতিয়ায় মিশে যাবে। একদিকে পৃথিবীর সবচে প্রিয়তম মানুষ স্বামীর লাশ জ্বলছে, অপরদিকে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যন্ত্রণায় বাসায় ছটফট করছে ৬ বছরের আদরের একমাত্র সন্তান ক্লান্তি সাহা। সংসারের একমাত্র গৃহকর্ত্রী এই নারী কোথায় যাবেথশ্মশানে স্বামীর লাশের পাশে না বাসায় একমাত্র সন্তানের পাশে। এমনই এক হতভাগ্য নারীর জীবনের মর্মস্পর্শী করুণ অবস্থা দেখেছে গত মঙ্গলবার হাজীগঞ্জের মানুষ। যারা দেখেছে তারাই ফেলেছে চোখের পানি আর দিয়েছে সান্ত্বনা। কিন্তু এই সান্ত্বনার ভাষা কী আছে ? একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবার তথা একটি সংসার কিংবা একজন নারীর জীবন কাহিনী পাল্টে দিয়েছে। (২য় পৃষ্ঠায় দেখুন)

শুক্লা (২৬)। বাবা নরেশ ছিলেন হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজার এলাকার ক্ষুদে চা দোকানী। বাবার বাড়ি বাকিলা এলাকার সন্না গ্রামে। বাবা গরীব হওয়ার কারণে ২ বোন বাবার সংসারে সুখ বলতে কিছুই ভোগ করতে পারেনি। বাবা-মা হারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শুক্লাকে বাবার চাচাতো ভাইদের সহযোগিতায় বিয়ে দেয়া হয়। স্বামীর অভাবের সংসারে দু’বেলা খেয়ে দেয়ে স্বামীকে নিয়ে প্রায় ৭ বছরের সংসার ভালোই চলছিলো। ৬ বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার করিমের বাগান নামক এলাকার দেবেন্দ্র সাহার বাড়িতে বসবাস করতো শুক্লা দম্পতি। স্বামী মানিক সাহা (৩৭) হাজীগঞ্জ বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেতেন। স্বামীর চাকুরি আর সন্তানকে নিয়ে সুখেই কাটছিলো শুক্লার ভালোবাসার সংসার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বাবার সংসারে যে নারীর সুখ হয়নি, সৃষ্টিকর্তা বুঝি স্বামীর সংসারের সুখও অল্পতে কেড়ে নিলেন।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার দিবাগত রাতে দেবেন্দ্র সাহার বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে শুক্লা রাণী। বিয়ে বাড়ির খাবার শেষে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বাড়ির সামনে আদরের সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় আসেন শুক্লার স্বামী মানিক সাহা। সড়কের উপর আসামাত্র পেছন দিক থেকে ছেলে ক্রান্তি সাহাকে চাপা দেয় একটি অটোরিঙ্া। এতে করে ছেলের হাতের ও পায়ের মাংস খসে যায়। বন্ধু শিমুল সাহাকে নিয়ে ঐ অটোরিঙ্ায় করেই মানিক সাহা ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ডিগ্রি কলেজ রোডস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার ছেলেকে চিকিৎসার জন্যে। হাসপাতালের ৩য় তলায় ছেলেকে ড্রেসিং করার সময় মানিক তার বন্ধু শিমুলকে বাথরুমে যাবার কথা বলে। হাসপাতালের বাথরুমে যাওয়া মাত্র মানিকের রক্ত বমি শুরু হয়। ধরাধরি করে বাথরুম থেকে বের করার পরে অবস্থা বেগতিক দেখে সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্সে করে কুমিল্লা নেয়ার পরেই সেখানকার হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় হাজীগঞ্জ পৌর শ্মশানে মানিক সাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। শ্মশানঘাট এলাকায় হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী স্বামীর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে যখন শুক্লার মাথার সিঁদুর মুছে দেয়া হচ্ছিল ঠিক তখন এই নারীর গগণবিদারী কান্নায় পুরো শ্মশানঘাট এলাকায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আর এর মধ্য দিয়েই একটি সংসার আর একটি নারীর জীবনের করুণ ইতিহাস রচিত হলো।



মন্তব্য চালু নেই