মিল্কি হত্যা
চার্জশিটের বিরুদ্ধে করা নারাজি আবেদনের শুনানি ১৭ জুন
ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলায় চার্জশিটের বিরুদ্ধে দাখিল করা নারাজি আবেদনের শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার সকাল সোয়া ১১টায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মঈনুল ইসলাম ভুইয়া শুনানির জন্য আগামী ১৭ জুন দিন ধার্য করেন। মামলার মূল নথিপত্র হাতে না থাকায় এবং নথিপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিচারক ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে, মামলায় দাখিল করা চার্জশিটের সঙ্গে একমত হতে না পারায় এদিন সকালে মামলার বাদী মিল্কির ভাই মেজর রাশিদুল হক আদালতে নারাজি দাখিল করেন।
সঠিকভাবে তদন্ত না করা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণ না করার অভিযোগ এনে তিনি এ নারাজি দাখিল করেন। একইসঙ্গে যাদের নাম মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে পুনতদন্তের দাবি জানান।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মনসুর রিপন নারাজি দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক নারাজি দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ৯ জুন নারাজি দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন।
গত ১৫ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর সহকারী এএসপি কাজেমুর রশিদ বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলায় মোট ১২ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত আসামিরা হলেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম-সম্পাদক এস এম জাহিদ সিদ্দিকী ওরফে তারেক ফোকাস, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, মিল্কির ড্রাইভার মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপা, জাহাঙ্গির মণ্ডল, শহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, সোহেল মামুন, চুন্নু মিয়া, আরিফ, ইব্রাহিম খলিল, রফিকুল ইসলাম ও শরীফ উদ্দিন চৌধুরী পাপ্পু।
অভিযুক্ত এই আসামিদের মধ্যে লোপা জামিনে আছেন। ইব্রাহিম খলিল, রফিকুল ইসলাম ও শরীফ উদ্দিন চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।
মূল আসামি তারেক ওরফে কিলার তারেক ঘটনার পরদিন র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে চার্জশিটে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া অপর আসামিরা জেলহাজতে আছেন।
তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় গ্রেপ্তার অপর ৯ আসামির অব্যাহতি চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
অব্যাহতির সুপারিশ করা ওই ৯ জন হলেন- তুহিনুর রহমান ফাহিন, সৈয়দ মোস্তফা আলী রুমি, মোহাম্মদ রাশেদ মাহামুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, মোহাম্মদ সুজন হাওলাদার, জাহিদুল ইসলাম টিপু, ওহিদুল আলম আরিফ ভুঁইয়া, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদ উদ দৌলা ও মাহবুবুল হক হিরক। এই আসামিদের ঘটনার পর বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়।
চার্জশিটে মোট ২৬ জনকে সাক্ষি করা হয়েছে।
চার্জশিটের ১২ আসামির মধ্যে তারেক, সোহেল, আরিফ, চুন্নু, চঞ্চল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে মিল্কিকে গুলি করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করা এবং লোপা, শহিদুল, জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিম ঘটনাস্থলে না থেকে হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪/১০৯ ধারায় এবং শরীফ উদ্দিন চৌধুরী পাপ্পুর বিরুদ্ধে আসামিকে পলাতে সহায়তার জন্য দণ্ডবিধির ২১২ ধারায় ওই চার্জশিট দালিখ করা হয়েছে।
মামলার চার্জশিটে ১১ প্রকার অলামত জন্দ করার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত চিত্র এবং ১৫ রাউন্ড গুলির খোসা রয়েছে।
আধিপত্য বিস্তার, সাংগঠনিক পদ দখল, নির্বাচনী মনোনয়ন, বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ বণ্টন নিয়ে মিল্কির সঙ্গে তারেকের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ওই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে চুন্নু মিয়া, মাহবুবুল হক হীরক, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ, জাহাঙ্গির মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন।
এছাড়া মিল্কির গাড়ি চালক মারুফ রেজা সাগর সাক্ষী হিসেবে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমদাদুল হকের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই রাতে মাত্র ১৪ সেকেণ্ডের মধ্যে মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মিল্কি হত্যার এ মর্মান্তিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন মার্কেটের ক্রেতা ও পথচারীরা। মিশন শেষ করে মোটরবাইকে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চার যুবক।
মধ্যরাতের শ্বাসরুদ্ধকর এই ১৪ সেকেন্ডের দৃশ্যটি ধরা পড়ে শপার্স ওয়ার্ল্ডের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়। হত্যাকাণ্ডের পরপরই ভিডিও ফুটেজটি জব্দ করে র্যাব।
শপার্স ওয়ার্ল্ডের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, প্রাইভেটকার থেকে মিল্কি নামার পর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক যুবক বাম কানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মিল্কির সামনে এসে ডান হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রথমে একটি গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ মিল্কি বাম দিকে হেলে মাটিতে পড়ে হামাগুড়ি দিতে থাকেন। ওই সময় ওই যুবক মিল্কিকে লক্ষ্য করে আরো সাত/আটটি গুলি ছোঁড়েন। এরপর পেছন থেকে এক যুবক মোটরসাইকেল চালিয়ে এলে গুলিবর্ষণকারী যুবক ওই মোটরসাইকেলের পেছনে উঠে চলে যান। ওই সময় আরেক যুবককেও গুলি ছুড়তে দেখা যায়।
ভিডিও ফুটেজে সাদা পাঞ্জাবি পরা যে যুবককে গুলি ছুড়তে দেখা যায়, তিনি ছিলেন তারেক। তারেককে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যাওয়া যুবকের নাম সোহেল মাহমুদ বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী একজনের গুলিতে তারেক আহত হন। তার সহযোগীরা গুলিবিদ্ধ তারেককে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় তারেককে চঞ্চলসহ কয়েকজন পাহারা দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে ওই হাসপাতাল থেকে তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারেক হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
পরে ৩১ জুলাই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তারেক।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩০ জুলাই রাত ১২টার দিকে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলায় যুবলীগ নেতা তারেক, জাহিদুল ইসলাম টিপু, চঞ্চল ও আরিফসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলার বাদী হন নিহত মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশিদুল হাসান খান।
মন্তব্য চালু নেই