চলে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের সহধর্মিনী
অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের সহধর্মিনী বিজয়া রায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার একটি নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।
বিজয়া রায় সত্যজিৎ রায়ের আজীবনের অনুপ্রেরণা ছিলেন। পথের পাঁচালী সিমেনা করার সময় অর্থের অভাবে পড়ায় নিজের সব গহনা বেঁচে স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছেন বিজয়া। ১৯৯২ সালে সত্যজিৎ মারা যাওয়ার পর তার স্মৃতি আঁকড়ে এত দিন বেঁচে ছিলেন তিনি।
সত্যজিৎ ও বিজয়ার একমাত্র সন্তান সন্দীপ রায়ও চলচ্চিত্রকার। মায়ের মৃত্যুর সময় তিনি তার পাশে ছিলেন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার কলকাতার একটি নার্সিং হোমে ভর্তি হন বিজয়া। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। নার্সিং হোমের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি অনলাইন।
নার্সিং হোমে ভর্তি হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়।
১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন বিজয়া। সত্যজিতের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত তার নাম ছিল বিজয়া দাস। বিয়ের পর নামের সঙ্গে রায় যোগ করেন তিনি। বিজয়া দাসের বাবা চারু চন্দ্র দাস ছিলেন প্রতিতযশা ব্যারিস্টার। মা মাধুরী দেবি ছিলেন ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতা দেশবন্ধু চিত্যরঞ্জন দাসের স্ত্রী বাসন্তী দেবির ছোট বোন।
রবীন্দ্র সংগীতে তার দখল ছিল। গানের গলা ভালো থাকায় সত্যজিৎ রায় তার একটি ছবিতে তাকে দিয়ে গান করান। এ ছাড়া আরো অনেক গুণ ছিল তার। সত্যজিতের চলচ্চিত্রে তার অনেক অবদান রয়েছে। লোকেশন নির্বাচন, কস্টিউম বাছাই, অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনেও যৌক্তিকভাবেই ভূমিকা রাখতেন তিনি।
সত্যজিৎ ও বিজয়া আপন মাসতুতো ভাইবোন। প্রেম থেকে বিয়ে। তবে প্রথমে আদালতে গিয়ে গোপনে বিয়ে করেন দুজন। পরে তা জানাজানি হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। সম্ভবত ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পরে সত্যজিৎ-বিজয়ার বিয়েই ছিল প্রথম কাজিন সম্পর্কের পাত্র-পাত্রীর বিয়ে।
ফ্রান্সের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জঁ রেনোয়া তার রিভার ছবি উপহার হিসেবে পাঠানোর সময় একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘মানিক রায়কে (ডাক নাম) বিবাহিত দেখলে খুশি হব।’ অবশ্য তার আগেই বিজয়া ও সত্যজিৎ গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সত্যজিতের মা অর্থাৎ বিজয়ার মাসি সুপ্রভা রায়কে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এবার তোমাকে কী বলে ডাকব?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আগে মাসিমা বলে ডাকতে এখন শুধু মা বলে ডেকো।’
১৯৪৪ সালে শেক্ষরক্ষা ছবিতে নায়িকার ভূমিকায়, পরে রজনী ও মশাল ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। শেষরক্ষা ছবিতে তিনি প্লেব্যাকও করেন। শেষ জীবনে ‘মানিক অ্যান্ড আই : মাই লাইফ উইথ সত্যজিৎ রায়’ নামে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন তিনি।
বিজয়ার মৃত্যুর খবর শুনে নার্সিং হোমে ছুটে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার সরকারের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস।
মন্তব্য চালু নেই