চলনবিলে সরিষার বাম্পার ফলন ॥ চলছে কাটা মাড়াই

খাদ্য শস্যভান্ডার পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলে অধ্যুষিত উপজেলাগুলোতে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশ এ এলাকার কৃষকেরা। চলনবিলাঞ্চলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ, উল্লাপাড়া এলাকায় এখন পুরোদমে চলছে সরিষা উঠানো ও মাড়াইয়ের কাজ।

মাঘী সরিষা উঠানো প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে স্বেতী সরিষা উঠানোর কাজ ও শেষ হয়ে যাবে। যে সমস্ত জমির সরিষা উঠানো হয়েছে সেসব জমিতে এখন বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকেরা।

চাটমোহর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মোকছেদ সরকারের ছেলে কৃষক শফিকুল ইসলাম (৪০) জানান, ৫ বিঘা জমিতে স্বেতী সরিষা আবাদ করেছিলেন। বিঘায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ মন হারে ফলন হয়েছে। বাজারে প্রতিমন সরিষার মূল্যে এখন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা।

তিনি জানান, ১ বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদনে চাষ বাবদ ৪শ টাকা, বীজ বাবদ ১শ টাকা, ডিএপি পটাশ ইউরিয়া সার মিলে ১ হাজার ৮শ থেকে ১ হাজার ৯শ টাকা, উঠানো খরচ বিঘাপ্রতি ১ হাজার টাকা হিসেবে মোট ৩ হাজার ৩’শ থেকে ৩ হাজার ৪’শ টাকা খরচ হয়। ৪ মন সরিষা বিক্রি করলে পাওয়া যায় ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা।

বিঘা প্রতি লাভ থাকছে ১ হাজার ৮’শ থেকে ২ হাজার টাকা। মাড়াই বাবদ হপার মেশিন চালককে দিতে হয় মন প্রতি ৩ কেজি করে সরিষা। চরসেন গ্রামের কৃষক আবু তালেব, ছাইকোলার সিদ্দিক প্রাং, নিমাইচড়ার আব্দুল কুদ্দুস, হান্ডিয়ালের ইয়ার মাহমুদ এবং আব্দুল খালেক জানান সরিষার ভাল দাম না পাওয়ায় কৃষক বেশ হতাশ। কথা হয় মির্জাপুর কলেজ পাড়ার হপার মালিক হাসানের সাথে।

তিনি জানান, ৮০ হাজার টাকায় তিনি একটি হপার বানিয়েছেন। এতে ধান, গম, খেশারী, মশুর ভাঙ্গানো যায়। কৃষকের সরিষা মাড়াই করার পর প্রতি মনে তিনি পান ৩ কেজি করে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ মন সরিষা মাড়াই করতে পারেন তিনি। এতে তার প্রতিদিন গড়ে ৭৫ কেজি সরিষা থাকছে। যার দাম প্রায় ২ হাজার ২শ ৫০ টাকা। এর পেছনে মেশিনের ডিজেল বাবদ তার খরচ পরে ৭শ টাকা। প্রতিদিন তার লাভ থাকছে ১ হাজার ৫’শ টাকার মতো।

অনেকে জানান, কৃষকের চেয়ে হপার মালিকেরই লাভ হচ্ছে বেশি। চলনবিলাঞ্চলের কেবল মাত্র চাটমোহরে এ বছর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪’শ ৫০ হেক্টর জমিতে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্জিত হয়েছিল ৬ হাজার ১শ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এবছর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

চাটমোহর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (তথ্য) মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন ভাল হয়েছে। তবে দাম আর একটু বেশি হলে কৃষক লাভবান হবে।



মন্তব্য চালু নেই