চলনবিলে বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ হচ্ছে পান ॥ রপ্তানী হচ্ছে দেশ বিদেশে

ঐতিহ্যবাহী চলনবিলে দীর্ঘদিন ধরে বানিজ্যিক ভিত্তিতে পানের চাষাবাদ হচ্ছে। উৎপাদিত পান রপ্তানী হচ্ছে দেশ বিদেশে। পান চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষ করে চলনবিলে অধ্যুষিত চাটমোহর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুরসহ আশে-পাশের উপজেলার উঁচু এলাকা গুলোতে দীর্ঘদিন যাবত পান চাষাবাদ হয়ে আসছে। দেশব্যাপী রয়েছে এ অঞ্চলের স্বুসাদু পানের চাহিদা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলায় ৩’শ ৫০ হেক্টর জমিতে পানের চাষাবাদ হয়েছে। বড়াইগ্রাম উপজেলায় পানের আবাদ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়া গুরুদাসপুরসহ আশে-পাশের উপজেলাগুলোতে পানের আবাদ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরজমিনে বড়াইগ্রাম জোনাইল হাটে গিয়ে দেখা যায়, পান বাজারে থরে থরে সাজানো পানের ঝুড়ি। কেনা কাটায় ব্যস্ত ব্যাপারীরা। সেখানে ১০টি আড়ৎ এর মাধ্যমে ব্যাপারীরা কৃষকদের কাছ থেকে পান কিনছেন। এভাবে বাগডোব বাজার ও লক্ষিকোল বাজার (রাজ্জাক মোড়), চাটমোহর উপজেলার হরিপুর বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা পান কেনা-বেনা হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকার পান চাষীরা বাজারে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ভ্যান ও লছিমন-করিমন যোগে পান বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। এ পান গুলো পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। পানের আকার ভেদে দাম ও কম বেশি হয়। ক্রেতা বিক্রেতা আড়তদারের হাক ডাকে সরগরম হয়ে থাকে পান বাজার।

সপ্তাহের বিশেষ দিন অর্থাৎ হাটের দিনে বেচা-কেনা বেশি হয়ে থাকে। কথা হয় পান ব্যাপারী বড়াইগ্রামের আনিসুর রহমানের সাথে তিনি জানান, এ এলাকার পান যানবাহন যোগে রাজধানী ঢাকা, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঘ ফাল্গুন মাসে প্রতিদিন বড়াইগ্রামের জোনাইল, বাগডোম, লক্ষিকোল বাজার (রাজ্জাক মোড়) প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার পান কেনা-বেচা হয়ে থাকে। তবে চৈত্র মাসে ভরা মৌসুমে সরবরাহ ও বিক্রির পরিমান আরো বেড়ে যায়। মাঝারী পান প্রতি ২০ বিড়া পান বিক্রি হচ্ছে ৯’শ থেকে সাড়ে ৯’শ টাকা, চাতিল পান প্রতি ২০ বিড়া ৫’শ টাকা থেকে ৬’শ টাকা, হাইবলি পান প্রতি ২০ বিড়া ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়, লেবেল বলি পান প্রতি ২০ বিড়া ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গড়ে মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকার পান বিক্রি হয় এ সকল বাজারে।

বড়াইগ্রামের কৃষক বন্ধু আড়তের মালিক মোঃ আবুল কাশেম জানান, প্রতিদিন তার আড়তে ৪০/৪৫ হাজার টাকার পান কেনা-বেচা হয়। এ সকল পান কিনে ব্যাপারী দেশের বিভিন্ন স্থানের যানবাহন যোগে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, উৎপাদিত পান বাংলাদেশ ছাড়াও দেশের বাহিরে সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, ম্যালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতি বছর চলনবিল অঞ্চল থেকে প্রায় ১শ কোটি টাকার পান রপ্তানী হচ্ছে। স্থানীয় পানের আড়তদাররা জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে পানের বাজারে বাহিরে ব্যাপারীরা কম আসছে। পান সরবরাহের ক্ষেত্রে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

এব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজামান বলেন, কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা পান চাষ করছে। যা অর্থনৈতিক ভাবে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছেন।



মন্তব্য চালু নেই