চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া নায়িকারা
একসময়ের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রীদের এখন আর দেখা যায় না। কালে ভাদ্রে এফডিসিতে দেখা মিললেও রূপালী পর্দায় তাদের দেখা নেই বহুদিন। বরং তাদের জায়গায় নতুনরা জেঁকে বসেছেন। ফেরার চেষ্টা করলেও উপায় মিলছে না যেন। এ তালিকায় সবার আগে আসে শাবনূরের নাম। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীৃ হয়ে বিয়ের ঘোষণা দেয়া, সন্তানসহ দেশে ফেরা, অভিনয়ে ফেরা, ছবি পরিচালনা করাসহ বিভিন্ন সময় নানা খবরে মেতেছিলেন তিনি। দেশে ফিরেছেন অনেকদিন হল। পরিচালনা তো দূরের কথা, অভিনয়েও তাকে দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ তাকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে এফডিসিতে দেখা গিয়েছিল। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এফডিসির অভ্যন্তরে তিনি বোরখা পরেই উপস্থিত হয়েছিলেন। তার এ পোশাকি পরিবর্তনে অনেকেই ধারণা করছেন এবার বোধহয় কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়েছেন শাবনূর। অবশ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। অবশ্য পথ একটা আছে, সেটা পরিচালনা। যদি ছবি পরিচালনায় আসেন তাহলে শাবনূরকে হয়তো আবারও দর্শকরা দেখতে পাবেন। কিন্তু অভিনয়ে এসে আগের মতো সফল হওয়ার দিন তার শেষ।
শাবনূরের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন পূর্ণিমা। পর্দায় তো বটেই, ব্যক্তিগত জীবনেও নাকি দুজন-দুজনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। বিয়ে বিষয়ক ঝামেলায় (!) পড়ে পূর্ণিমাকে চলচ্চিত্র ছাড়তে হল। ঝামেলা শব্দটি এ কারণে বলা হয়েছে, বিয়ের পর স্বামী নাকি পূর্ণিমাকে ছবিতে কাজ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ফলে অকালেই ঝরে গেল আরও একটি তারকা। পুরোদস্তুর গৃহিণী হয়ে স্বামী-সন্তানের মন যোগিয়ে চললেও দর্শক-ভক্তদের মন যোগাতে পারছেন না পূর্ণিমা। কারণ তার সামনেও আর ফেরার পথ খোলা নেই। যদি ফিরতে চানও তবে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে তাকে। আর সেই পরীক্ষায় পাসের চেয়ে ফেল করার আশংকাই বেশি।
চিত্রনায়িকা সাহারার নাম নেয়াটা ততটা যৌক্তিক নয়। একসময় অশ্লীলতার তকমা তার গায়ে ঝুলে ছিল। মাঝে ভালো কিছু ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে কিছুটা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝে প্রেমের ঝামেলায় পড়ে তাকেও বিদায় নিতে হল সিনেমা পাড়া থেকে। অবশ্য তার বিদায়ের জন্য শেষের দিকের ছবিগুলোর ব্যর্থতাই দায়ী। পাশাপাশি নিজের প্রতি অযত্নের কারণে দর্শকরা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
তিনবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া তারকাশিল্পী পপির অবস্থা তথৈবচ। তার হাতেও কোনো ছবি নেই। দিনের পর দিন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে পুরনো তিন চারটি ছবির নামই বারবার বলেন। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘চার অক্ষরের ভালোবাসা’ চরম ব্যর্থতা পপিকে বোধহয় চলচ্চিত্র থেকে গুডবাইয়ের বার্তা শুনিয়ে দিয়েছে। অবশ্য পপির হারিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে তার একগুঁয়েমি। বারবার সমালোচনার মুখে পড়া এ নায়িকা তার মেধার সর্বোচ্চটা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন নিজের কারণেই। তাই চলচ্চিত্র থেকে তার হারিয়ে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।
চলচ্চিত্রের আরেকজন গ্ল্যামারগার্ল কেয়া। বখাটেপনার কারণে তিনিও চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে গেছেন। কালে ভাদ্রে তাকে ক্যামেরার সামনে দেখা গেলেও ঘুরো দাঁড়ানোর সব যোগ্যতাই তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। পুরনোদের মধ্যে নির্ভর করার মতো আর কোনো নায়িকা নেই, যাদের নিয়ে নির্মাতারা নির্ভয়ে ছবি বানাতে পারেন। নায়িকা সংকটে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাতা বলেছেন, ‘পুরনো নায়িকাদের ব্যর্থতার এ সুযোগ নিয়ে পরিমনির মতো অর্বাচীন এবং অবাঞ্ছিত মেয়েরা চলচ্চিত্রের সংজ্ঞাটাকেই কলুষিত করে ফেলেছেন। চলচ্চিত্রকে আবারও গড়ে তুলতে হলে শিক্ষিত মেয়েদের চিত্রমুখী হতে হবে। পাশাপাশি নির্মাতা ও প্রযোজকদের দায়িত্ব থাকবে যেসব মেধাবী এ মাধ্যমে কাজ করতে আসবেন তাদের সম্মানের সঙ্গে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া। তাহলেও হয়তো নতুন শিল্পী তৈরি হবে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের যে অস্থির অবস্থা, তা কিছুটা হলেও কেটে যাবে।’
মন্তব্য চালু নেই