চট্টগ্রামে যানজট নিরসনে ‘মাইক থেরাপি’
হস্তনির্দেশ, বাতিনির্দেশ, রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধক, ইশারা, বাঁশি বাজানো, গাড়ির বডিতে বাড়ি- কতভাবেই না চেষ্টা চলছে ট্রাফিক সিগনালে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগরের যানজট নিরসনে এবার ‘মাইক থেরাপি’ বেছে নিয়েছে সংস্থাটি। এতে সুফল মিলছে বলেও দাবি ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাদের।
নগর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আনিসুর রহমান জানান, নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি ‘জিইসির মোড়’। চারটি ব্যস্ততম সড়কের মিলনস্থল এটি। ফলে যানজট এ এলাকার নিত্যসঙ্গী। ট্রাফিক পুলিশের প্রায় ১০০ জনবল প্রতিদিন এখানে যানজট নিরসনে হিমশিম খান।
ব্যস্ততম এ মোড়ে যানজটের মূল কারণ যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানো। এসব গাড়িকে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ানোর জন্য এত দিন ইশারা দিয়ে আসছিল পুলিশ। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার সংকেত না দেখার ভান করে চালকরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতেন। এ ধরনের অবাধ্য চালকদের বাধ্য করার জন্য মাইক নিয়ে মাঠে নেমেছে ট্রাফিক পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ওই মোড়ের পশ্চিম পাশের সড়কে একটি বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। এতে সেখানে তৈরি হতে থাকে যানজট। বিষয়টি দেখে ট্রাফিক কনস্টেবল মামুন মাইকে বলে ওঠেন, ‘০৯ সিরিয়ালের ১২৯১ (গাড়ির নম্বর), দাঁড়াবেন না। দ্রুত চলে যান। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’ অতঃপর চলা শুরু করে গাড়িটি।
ট্রাফিক সদস্য মামুন এ সময় বলেন, ‘ব্যস্ততম মোড়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তোলে গণপরিবহনগুলো। মোড় ছেড়ে যাওয়ার জন্য আগে বাঁশি বাজিয়ে, গাড়ির বডিতে লাঠির বাড়ি দিয়ে সংকেত দিতাম। কিন্তু চালকরা এতে পাত্তা দিত না। কিছুই শোনেনি এমন ভাব ধরে বসে থাকত। এখন মাইক দিয়ে গাড়ির নম্বর ধরে বলছি। এতে তারা ভয় পেয়ে দ্রুত রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছে।’
এ সময় জিইসি মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুকতাদির হোসেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা বেশি। রাস্তার ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা ও পার্কিংয়ের কারণে যানজট হয়। এখন মাইক ব্যবহার করায় এ বিষয়ে সুফল মিলছে।’
কথা বলার একপর্যায়ে মাইক হাতে আবার নির্দেশনা দিতে শুরু করলেন কনস্টেবল মামুন। কিন্তু এবারের নির্দেশনাকে পাত্তা না দিয়ে দুই মিনিটের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন এক বাসচালক। বিষয়টা নজরে আসার পর ওই গাড়ির দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন অদূরে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট মলয় মুৎসদ্দী। টের পেয়ে তখনই গাড়ি নিয়ে কেটে পড়েন চালক।
যানজট নিরসনে মাইক ব্যবহারে কেমন সুবিধা পাচ্ছেন- জানতে চাইলে সার্জেন্ট মলয় মুৎসদ্দী বলেন, ‘কোরবানির ঈদের আগে পরীক্ষামূলকভাবে মাইক ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ঈদের ছুটিতে সড়কে গাড়ি কম থাকায় বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে মাইক ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়ায় কয়েক দিন আগে আবার আনা হয়েছে। তাতে এখানে যানজট ৮০ ভাগ কমে গেছে। মাইক দিয়ে সতর্ক করার পরও ট্রাফিক আইন না মানলে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে।’
নিউ মার্কেট মোড়েও দেখা যায় মাইকের ব্যবহার। ট্রাফিক কনস্টেবল তপু মাইকে যাত্রীদের উদ্দেশে বলছেন, ‘মোড় থেকে কোনো যাত্রী ওঠা-নামা করবেন না। ১০০ গজ দূরে নির্ধারিত স্থান থেকে গাড়িতে উঠুন। অযথা গাড়ি দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি করবেন না। ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করুন।’ এভাবেই চলছিল মানুষকে সচেতন করার কাজ।
টাইগারপাস মোড়ে মাইকে নির্দেশনা পেয়ে গাড়ি নিয়ে চালকরা কিছুটা দূরে যাত্রীছাউনির কাছে গিয়ে থামছেন। সেখানে যাত্রী ওঠা-নামার কাজ সুন্দরভাবে স¤পন্ন হওয়ায় যানজট হচ্ছে না। এ সময় দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পরিদর্শক অনিল বিকাশ চাকমা বলেন, মাইক ব্যবহার করে জনগণকে সচেতন করা ও চালককে আইন মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এতে সুফল মিলছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন-উত্তর) কানু চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কোরবানির ঈদের সময় থেকে নগরীর জিইসি মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, ষোলশহর, নতুন ব্রিজ, ইপিজেড মোড়, অলংকার মোড় ও আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। এ জন্য দৈনিক ২০০ টাকায় প্রতিটি মাইক ভাড়া নেয়া হয়েছে। ভাড়ার টাকা সংশ্লিষ্ট সার্জেন্টকে পরিশোধ করা হচ্ছে। এ থেরাপির সুফল পাওয়ায় ট্রাফিক বিভাগ মাইক কেনার চিন্তা করছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ উল হাসান বলেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে মাইক ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই নগরীর ১৪টি স্থানে ব্যবহারের জন্য ১৪টি মাইক কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মাইক কেনার সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
মাসুদ উল হাসান আরো বলেন, সব সময় মাইকে কথা বলতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। তাই সচেতনতামূলক নানা কথা রেকর্ড করে তা মাইকে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই