ঘুমানোর সময় আপনার শোয়ার পদ্ধতি কি পুরোটাই ভুল?
আরামের বিছানায় একটা গভীর ঘুম দিতে কে না চায়। কিন্তু আয়েশ নিয়ে শোয়ার পর নিশ্চয় মাথায় আসে না, আপনার শোয়ার তরিকাটা ঠিক আছে কি না? বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষ সাধারণত কয়েকটি ঢঙয়ে ঘুমিয়ে থাকে। প্রতিটি ভঙ্গী ভালো-খারাপ দিক রয়েছে। এ সম্পর্কে ধারণা নিন।
১. এক পাশ ঘুরে শোয়া
উপকারিতা : এই ভঙ্গিতে ঘুমানোর অভ্যাস ব্যাপক হারে দেখা যায়। বিশেষ কারণে এর কিছু উপকারী দিক রয়েছে। যদি নাক ডাকার অভ্যাস বা নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা থাকে, তবে শ্বাস গ্রহণের পথ উন্মুক্ত রাখতে এর চেয়ে ভালো ভঙ্গী হয় না। আমেরিকার ভার্জিনিয়ার মার্থা জেফারসন হসপিটালের মেডিক্যার ডিরেক্টর ডাব্লিউ ক্রিস্টোফার উইনটার এ তথ্য দেন। এ পদ্ধতিতে শোয়া মেরুদণ্ডের জন্যে ভালো। পিঠের নিচের দিকের ব্যথা দূর করতেও কার্যকর এটি। এই ঢংয়ে শোয়া মানুষের সহজাত প্রবণতা। মায়ের গর্ভে শিশু এভাবেই ঘুমায়।
নাক ডাকলে মেরুদণ্ডে চাপ কম পড়ে সাইড হয়ে শুলে। দুই পাশ এদিক ওদিক করে শুলে তা মস্তিষ্কের জন্যে ভালো কাজ করে। পশুর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়, পাশ ফিরে শোয়া হলে আলঝেইমারস, পারকিনসন এবং অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল রোগের ঝুঁকি কমে। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের সাইড করে শোয়ানো হলে গ্লাইমফ্যাটিক সিস্টেম দারুণ কাজ করছে। এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে যায়। ফলে ডেমেনশিয়া বা নিউরোলজিক্যাল ডিজিসের ঝুঁকি অনেক কমে আসে। একই উপকারিতা মানুষের মধ্যে পাওয়া যাবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।
বাম পাশ ঘুরে শুতে পারলে হৃদযন্ত্র আরো সুষ্ঠুভাবে গোটা দেহে রক্ত পাম্প করতে পারে। আবার যদি ডান পাশ ফিরে শোয়া হয় তবে রক্তবাহী শিরায় চাপ পড়ে এবং এ কারণে রক্ত আবারো হৃদযন্ত্রে ফিরে আসে।
আবার গর্ভবতী নারীদের বাম দিক ঘুরে শোয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ গর্ভের শিশু তাদের অঙ্গ ওপরের দিকে ঠেলা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় হৃদযন্ত্র শিশুকে সামলে নিতে চেষ্টা করে অন্যান্য প্রত্যঙ্গের সহায়তায়।
অপকারিতা : একপাশ হয়ে শুলে ওইপাশের হাত দেহের চাপে অবশ হয়ে যায়। এই বাজে অনুভূতি নিয়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে। যে পাশ বিছানায় থাকো সেই পামের রক্তবাহী শিরা-উপশিরা চাপের মুখে থাকে। ফলে রক্ত চলাচল বন্দ হয়ে যেতে পারে। এভাবে শোয়ার কারণে এসিড রিফ্লাক্স এবং হার্টবার্নের সমস্যাও হতে পারে। এ ছাড়া হজমে সমস্যার প্রমাণও মিলেছে।
২. পিঠ ঠেকিয়ে শোয়া
উপকারিতা : পিঠ ঠেকিয়ে সোজা হয়ে ঘুমালে জাগার পর অনেক বেশি সজীব লাগে। এটাকে ঘুমানোর সেরা পদ্ধতি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গোটা দেহে কোথাও কোনভাবে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। দেহের ওজন সমানভাবে ভারসাম্যপূর্ণভাবে ছড়িয়ে থাকে। বালিশে মাথা দিয়ে চিত হয়ে শুলে পিঠের নিচের দিকের ব্যথা চলে যায়। বিছানায় দুই পা ছড়িয়ে সোজা পিঠ ঠেকিয়ে শোয়া হলে দেহের যেকোনো স্থানের ব্যথায় উপকার মিলবে।
অপকারিতা : তবে কারো কারো জন্যে এ পদ্ধতিতে শোয়া ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এ ভঙ্গী আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের পথ ন্যূনতম মাত্রায় কাজ করে। কাজেই এতে নাক ডাকানোর মতো ঘটনা ঘটে। ধীরে ধীরে স্লিপ অ্যানিয়াতে আক্রান্ত হতে পারেন।
৩. পেট ঠেকিয়ে শোয়া
উপাকারিতা : যদি পিঠ ঠেকিয়ে শোয়া হলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে উপুর হয়ে উপকার মিলতে পারে। এই ঢংয়ে পাকস্থলী ও ফুসফুস বেশ আরামে থাকে। তবে এভাবে শোয়ার পদ্ধতিতে খুব বেশি উপকার মেলে না।
অপকারিতা : দেহের সামনের দিকটা বিছানায় ঠেকিয়ে শোয়া হলে ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের জন্যে এটা সবচেয়ে বাজে পদ্ধতি। কারণ এ অবস্থায় মাথা ও ঘাড় দেহ থেকে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে থাকে। তা ছাড়া বালিশের কারণে বেশ উঁচু হয়ে থাকে ঘাড় ও মাথা। এ ভঙ্গী মেরুদণ্ডের জন্যে মোটেও ভালো নয়। কারণ দেহের পেছনটা কিছুটা ভেতর দিকে বেঁকে যায়। মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়ার কারণে কশেরুকায় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। একইভাবে দীর্ঘ দিন ঘুমালে কোমরের ব্যথা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য চালু নেই