ঘাড় ভেঙে বরফে পড়ে রয়েছেন মালিক, প্রাণ বাঁচালো কুকুর
নিউ ইয়ার্স ইভের সময়টাতে যখন মিশিগানের সবাই আনন্দ-উদযাপনে বাইরে বেরিয়ে গেছেন, তখন একজন মানুষ বরফের ওপর পড়ে রয়েছেন। মিশিগানের উত্তরের ঘটনা।
প্যরালাইজড হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছেন ভদ্রলোক। তাকে বাঁচানোর কেউ নেই। হয়তো মরেই যেতেন। কিন্তু মালিককে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করলো তারই পোষা কুকুর।
লোকটির নাম বব। নামের আগে-পিছেনর কোনো অংশ আর প্রকাশ পায়নি। নিউ ইয়ার্স ইভের সময় বাড়িতেই ছিলেন তিনি। একটা সময় ঘরের ভেতরের ফায়ার প্লেসের লাকড়ি ফুরিয়ে গেলো। কিছু কাঠ আনতে ঘর থেকে বেরোলেন। তার পরনে ছিল কেবল একটা লং জন্স, স্লিপার আর একটা শার্ট। ঘর থেকে মাত্র ১৫ ফুট পেরোলেই ফায়ার প্লেসের কাঠ মজুদ করা রয়েছে। যাবেন আর আসবেন। কিন্তু যাওয়ার পথেই পা পিছলে পড়ে গেলেন বরফের ওপর। মারাত্মক আঘাত পেলেন, ঘাড় ভেঙে গেলো তার। আশপাশে তার কোনো নিকট আত্মীয় নেই। প্রতিবেশীরাও নতুন বছর উদযাপনে কে কোথায় আছেন তা ঈশ্বরই জানেন। চিৎকার করে ডাকার মতো অবস্থাও নেই তার। এ সময় পাশে পেলের তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকে, নাম যার কেলসে।
পরে সুস্থ হলে ম্যাকলারেন হসপিটালকে বব জানালেন, আমার বাড়ির সবচেয়ে কাছে যিনি থাকেন তার বাড়িও সিকি মাইল দূরে। তখন রাত সাড়ে ১০টা। সকাল পর্যন্ত পড়ে থাকলাম সেখানে। রাত ফুরোতে শক্তিও ফুরিয়ে আসলো। আমার মুখ দিয়ে টু শব্দ বেরোনোর শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু কেলসে কোনো অবস্থাতেই ডাকা বন্ধ করলো না। সাহায্যের জন্য ডেকেই চললো সে।
ওই রাতে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ২৪ ডিগ্রি। সেই অবস্থায় বরফে পড়ে রয়েছেন বব। তার পাশে নিরন্তর ডেকেই চলেছে কেলসে। মাঝে মাঝে মালিকের চোখ-মুখ চেটে দিচ্ছিল যেন তিনি জ্ঞান না হারান। কিছুটা আরামও দিতে চাইছিল সে, জানালেন বব।
১৯ ঘণ্টার মাথায় জ্ঞান হারান বব। কেলসে ক্রমেই তার গলা চড়াতে থাকলো। যেন প্রতিবেশী তাকে শুনতে পারে। অবশেষে শুনরেন প্রতিবেশী। নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে ভোর সাড়ে ৬টায় ববকে মরণাপন্ন অবস্থায় খুঁজে পেলেন প্রতিবেশী।
হাসাপাতাল থেকে জানানো হয়, হাইপোথার্মিক অবস্থায় ছিলেন বব। তার দেহের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা ছিল ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও নিচে। এ ছাড়া আটরিয়াল ফিব্রিলেশন এবং সি৪ ও সি৫ ডিস্ক হার্নিয়েশন অবস্থা দেখা গেছে তার মাঝে।
ডিস্ক হার্নিয়েশন দেখা দেয় ঘাড়ে। এটা স্পাইনাল কর্ডে চাপ সৃষ্টি করছিল। তার পা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্যারালাইজড হয়ে যায়। ওই সময়টাতে ভয়ানক ফ্রস্ট বাইট হয়ে যাওয়ার কথা তার। কিন্তু কেলসে তার দেহটাকে উষ্ণ এবং নিরাপদ রাখতে যা করার তাই করে গেছে বলেই জানান বব।
চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন বব। ফিরে এসেছেন বাড়িতে। আগের স্বাস্থ্য ফিরে পেতে তার বিশেষ থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি।
এখন তিনি তার হিরোদের প্রতি কৃতজ্ঞ। নিজেই বললেন, কেলসে আমার দেহটা ওই তীব্র ঠাণ্ডায় জমে যেতে দেয়নি। সে কখনোই সাহায্য চেয়ে ডাকাডাকি বন্ধ করেনি। আর ড. কোলেন আমাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। এরা আমার জীবনের সত্যিকারের হিরো। তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। সূত্র: ফক্স নিউজ
মন্তব্য চালু নেই