ঘাটাইলে ব্যতিক্রমী একশিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শিক্ষাদানের পরিবেশ যদি যথাযথ না হয় তাহলে শিক্ষার উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যাহত হয়। আজকাল যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো যে হারে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গজিয়ে উঠছে তাতে শিশুর মানসিকতার পরিপূর্ণ বিকাশ ও শিক্ষার পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবাধর্মী মনোভাবের চাইতে বাণিজ্যিক মনোভাব বেশি। গ্রামেও আজকাল শহরের মতো এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

তবে এর মধ্যেও ব্যতিক্রমী কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের উদ্দেশ্য যুগপোযোগী প্রকৃত শিক্ষার বিকাশ। ঠিক তেমনিই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ৩ কিলোমিটার পুবদিকে ঝড়কা গ্রামের স্ট্যান্ডার্ড কিন্ডারগার্টেন নামের একটি অবাণিজ্যিক স্কুল।

অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও কিছুসংখ্যক উচ্চ শিক্ষিত, উদ্যমী, সাহসী, সেবাপরায়ণ ব্যক্তি আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগে একটি ভাড়া জায়গায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্ডারগার্টেন হলেও স্কুলটির লক্ষ্য একটু ভিন্ন। এখানকার অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর, ভ্যান রিকশাচালক, শ্রমিকের সন্তান।

মোট কথা দরিদ্রদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। শুরুতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ জন, শিক্ষক ছিলেন ৫ জন। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯০ জন, শিক্ষক-শিক্ষিকা ১৬ জন। প্লে, নার্সারি ও ওয়ান তিনটি শ্রেণী দিয়ে এ স্কুলের যাত্রা শুরু হলেও এখন পঞ্চম শ্রেণীতে উন্নীত। শিক্ষক স্বল্পতা, আর্থিক অসচ্ছলতা সত্ত্বেও শিক্ষকদের মেধা, প্রতিশ্রুতি আর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় অভাবনীয় ফল করছে শিক্ষার্থীরা।

২০০৯ সালে সর্বপ্রথম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জনই প্রথম বিভাগ পায়। স্কুলের অধ্যক্ষ দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, এ বছরও সবাই প্রথম বিভাগে পাস করবে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রেও স্কুলটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অবকাঠামো ও অর্থ সংকট সত্ত্বেও স্কুলটিতে ২০০৪ সালে দুই দিনব্যাপী ও ২০০৫ সালে তিন দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছিল কম্পিউটার মেলা।

কম্পিউটার মেলার ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি অভিভাবক ও কৌতূহলী সাধারণ মানুষ মেলাতে আসেন। মেলার উদ্দেশ্য ছিল ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার পরিচিতি, সহজ কৌশলে কম্পিউটার শেখানো, কম্পিউটারের মাধ্যমে লেখাপড়ার কলাকৌশল জানা, কম্পিউটারভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম প্রদর্শন ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।

কিন্তু পরবর্তীকালে পর্যাপ্ত কম্পিউটার না থাকা, টাকা-পয়সার অভাব এবং জায়গার স্বল্পতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে স্কুলটি কম্পিউটার ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করতে পারছে না। আর্থিক দুরবস্থার কারণে ৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও ভাড়া জায়গাতেই চলছে স্কুলটি।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জানান, অনেক কষ্টে স্কুলের জন্য কয়েক শতক জায়গা কিনেছেন তারা। কিন্তু সেখানে স্কুল অবকাঠামো নির্মাণ করার মতো অর্থ তাদের নেই। ১০ বছর ধরে চাকরি করলেও শিক্ষকরা নামমাত্র ভাতা নেন স্কুল থেকে। তাদের লক্ষ্য একটাই স্কুলটিকে সর্বদিক থেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু এজন্য চাই প্রয়োজনীয় অর্থ। আর্থিক অনুদান পেলে স্কুলটিকে একটি গৌরবজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় তাদের সবার।



মন্তব্য চালু নেই