গ্রীষ্মেও তুষারঝড় !
ভয়াবহ তুষারঝড়ে অচল হয়ে পড়ছে আমেরিকা। দেশটির বড় বড় শহরগুলো, বিশেষ করে নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। চলতি মাস পর্যন্ত টানা তুষারপাতের ফলে চলছে না গাড়ি, উড়ছে না বিমান। ঘরের সামনে-ছাদে-রাস্তায় জমে থাকা পুরু তুষার সরিয়ে একটু পা ফেলার জায়গা করতে ব্যস্ত সময় পার করছে স্থানীয়রা।
বার্তা সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, জরুরি ছাড়া সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধের পাশাপাশি যানবাহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে নিউইয়র্কে। ঝুঁকি বিবেচনায় রেল যোগাযোগও বন্ধ করা হয়েছে। শুধু জরুরি মেরামতকাজের জন্য নিয়োজিত গাড়ি নিউইয়র্কের রাস্তায় চলাচল করতে পারবে। এর বাইরে কেউ গাড়ি নিয়ে বের হলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। রয়টার্স, ডেইলি মেইল, ওয়াশিংটন পোস্ট এর মতো গণমাধ্যমগুলো এমন তথ্যই দিচ্ছে।
চলমান ভয়াবহ তুষারঝড়কে নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়ের তালিকার ৩ নম্বরে রেখেছে আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর।
পঞ্জিকার হিসেবে আমেরিকায় গ্রীষ্ম শুরু হতে বাকী আর মাত্র একমাস। গ্রীষ্মের আগমনী এ বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে উঁকি দিতে শুরু করার কথা সূর্যের। দরজা-জানালা এবং আঙ্গিনায় জমে থাকা ধূলোবালি পরিষ্কারের ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল বাড়ি মালিকদের মাথায়। কিন্তু হায়, দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত সূর্যের। বরং আমেরিকায় এখন বইছে উল্টো হাওয়া। গ্রীষ্মের প্রাক্কালেও পুরো আমেরিকাজুড়ে পড়ছে রেকর্ড পরিমাণ বরফ।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, সোমবার (১৬ মে) সাড়ে ৭ ইঞ্চি বরফে ঢেকে গেছে পারহ্যাম মেইনের সড়ক। উত্তর মেইনের ক্যারিবো শহর ঢাকা পড়েছে সাড়ে ৪ ইঞ্চি বরফে। মে মাসের শেষেও বরফ পড়ছে রেকর্ড পরিমাণে। মেইনের আরো দুই শহর ক্যাসওয়েল এবং নিউ সুইডেনেও ৬ ইঞ্চি বরফ পড়ছে।
আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি আমেরিকার সর্বাপেক্ষা বড় শহর নিউইয়র্ক সবচেয়ে ভয়াবহ যে ৫টি তুষারঝড়ের কবলে পড়েছিল, সেগুলোর প্রথমে আছে ২০০৬ সালের ১১-১২ ফেব্রুয়ারির তুষারঝড়। ওই তুষারঝড়ের সময় নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক ৬৮ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার (২৬ দশমিক ৯ ইঞ্চি) পুরু তুষারের নিচে চাপা পড়েছিল।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ১৯৪৭ সালের ২৬-২৭ ডিসেম্বরের তুষারঝড়, যাতে পার্কটি ৬৫ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার (২৫ দশমিক ৮ ইঞ্চি) পুরু তুষারে ঢেকে গিয়েছিল। এবারকার ঝড়টি তৃতীয় অবস্থানে উঠে এলেও এর আগে তৃতীয় অবস্থানে ছিল ১৮৮৮ সালের ১২-১৪ মার্চের তুষারঝড়। ওই ঝড়ে সেন্ট্রাল পার্ক ৫৩ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার (২১ ইঞ্চি) পুরু তুষারের নিচে চাপা পড়েছিল।
২০১০ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ স্থানে থাকা তুষারঝড়টি হয়েছিল। এতে সেন্ট্রাল পার্কে ৫৩ দশমিক ১ সেন্টিমিটার (২০ দশমিক ৯ ইঞ্চি) উঁচু তুষার জমা হয়েছিল। সর্বশেষ স্থানে থাকা তুষারঝড়টি হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ৭-৮ জানুয়ারি। ওই সময় ৫১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার (২০ দশমিক ২ ইঞ্চি) পুরু তুষারের চাদর পার্কটিকে ঢেকে দিয়েছিল।
তবে গোটা আমেরিকার কথা ধরলে পূর্ব উপকূল স্থবির করে দেয়া চলমান ঝড়ে সবচেয়ে বেশি তুষারপাতের রেকর্ড হয়েছে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্লেনগ্যারিতে। এখানে ১০২ সেন্টিমিটারের (৪০ ইঞ্চি) রেকর্ড তুষারপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর।
এদিকে, টানা তুষারঝড়ের ফলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আটলান্টিক উপকূলে। আমেরিকায় পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তুষারঝড়ের পর বেশ কিছু এলাকায় বরফ গলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানির উচ্চতা এখনো বিপদসীমা পার হয়নি। তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
আটলান্টিক উপকূলের শহরগুলো, বিশেষ করে নিউ জার্সি উপকূলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিউ জার্সির কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে ৩ ফুটের মতো তুষারের আস্তরণ পড়েছে।
মন্তব্য চালু নেই