গোলরক্ষক সেজারের বীরত্বে শেষ আটে ব্রাজিল
শ্বাসরুদ্ধকর একটি ম্যাচ জিতে ব্রাজিল টিকিয়ে রাখলো ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। গোলরক্ষক জুলিও সেজারের অসামান্য বীরত্বে চিলিকে টাইব্রেকার ৩-২ গোলে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে স্বাগতিকরা।
টাইব্রেকারে প্রথম শটটি নেন ব্রাজিলের দাভিদ লুইস, গোল করেন তিনি। চিলির মুরিসিও পিনিইয়ার শট ঠেকিয়ে দেন জুলিও সেজার।
পরের শটটি বাইরে মারেন উইলিয়ান। সঙ্গে সঙ্গে পিন পতন নীরবতা নেমে আসে। আলেক্সিস সানচেসের পরের শটটিও ঠেকিয়ে দেন সেজার।
ব্রাজিলের মার্সেলোর গোলের পর চিলির চার্লস আরানগেস লক্ষ্যভেদ করলে চিলির আশা জেগে উঠে। হাল্কের পরের শটটি ঠেকিয়ে দেন ক্লদিও ব্রাভো। মার্সেলো দিয়াজের শট সেজার ফেরাতে না পারায় ২-২ সমতা হয়ে যায়।
পরের শটে লক্ষ্যভেদ করেন নেইমার। গনসালো হারার শট বারে লেগে ফিরলে কান্নাভেজা বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় চিলির।
এর আগে প্রথমার্ধের ১৮তম মিনিটে দাভিদ লুইসের গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ৩২তম মিনিটে আলেক্সিস সানচেসের গোলে সমতা ফেরায় চিলি। এরপর অতিরিক্ত সময়সহ আরো নব্বই মিনিট খেলেও আর গোলের দেখা পায়নি কোনো দল।
ব্রাজিলের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দেয় চিলি। তবে সুযোগ বেশি তৈরি করে ব্রাজিলই। অবশ্য রক্ষণভাগে গিয়ে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল নেইমার, হাল্কদের। ৬৪তম মিনিটে অনুজ্জ্বল ফ্রেদকে তুলে নেন লুইস ফেলিপে স্কলারি। তার বদলি নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি জো।
সানচেসদের সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে চিয়াগো সিলভা, দাভিদ লুইসদের। নির্ধারিত নব্বই মিনিটের শেষ দিকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল হোর্হে সামপাওলির শিষ্যরা। কিন্তু চিয়াগো সিলভা, দাভিদ লুইসদের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি তারা।
শনিবার বেলো হরিজন্তের স্তাদিও মিনেইরাও প্রথম পনের মিনিট পরিস্কার কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দলই।
১৮তম মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। বাঁদিক থেকে বার্সেলোনা তারকার কর্নার থেকে চিয়াগো সিলভার হেড সিলভার হেড খুঁজে পেয়েছিল দাভিদ লুইসকে। তার হাঁটুতে লেগে জালে জড়ালে উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো মিনেইরাওয়ের গ্যালারি।
৩২তম মিনিটে আলেক্সিস সানচেসের গোলে সমতা ফেরায় চিলি। নিজেদের রক্ষণ সীমায় মার্সেলো থ্রো দিয়েছিলেন হাল্ককে। তিনি বল ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডারকে। শটে জোর না থাকায় দৌড়ে এসে বল পেয়ে যান এদুয়ার্দো বার্গাস। অরক্ষিত সানচেসকে খুঁজে পান তিনি। ডি বক্সের ভেতর থেকে জুলিও সেজারকে পরাস্ত করতে কোনো সমস্যা হয়নি বার্সেলোনা স্ট্রাইকারের।
৩৬তম মিনিটেই আবার এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিল। অস্কারের ক্রসে নেইমারের হেড চিলির ফ্রান্সিসকো সিলভার মাথায় লেগে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৩৯তম মিনিটে আবার সুযোগ আসে ব্রাজিলের সামনে। ডি বক্সের ভেতরে একটি ক্রস বুক দিয়ে নামিয়েছিলেন নেইমার। তবে সঙ্গে থাকা ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি। বিপদ দেখে এগিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক ব্রাভোও। এক ডিফেন্ডার বল বিপদমুক্ত করতে গেলে বল পেয়ে যান ফ্রেদ। কিন্তু ফাঁকা জালেও বল পাঠাতে পারেননি তিনি।
৪২তম মিনিটে আলভেসের দূরপাল্লার শট এক হাতে ফিস্ট করে চিলির ত্রাতা ক্লদিও ব্রাভো।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল চিলি। সানচেস ডি বক্সে বল দিয়েছিলেন চার্লস আরানগেসকে। কিন্তু তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন লুইস।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ তম মিনিটে হ্যান্ড বলের জন্য বাতিল হয়ে যায় হাল্কের গোল। ডি বক্সে মার্সেলোর ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে বা পায়ের শটে জালে জড়ান হাল্ক। গোল উদযাপন করতে থাকা হাল্ক দেখেন হলুদ কার্ড। রিপ্লেতে দেখা গেছে হ্যান্ড বল ছিল না, বুক দিয়ে বল নামিয়েছিলেন তিনি।
দশ মিনিট পর গোলরক্ষকের দক্ষতায় বেঁচে যায় ব্রাজিল। মাওরেসিও ইসলার পাস থেকে খুব কাছ থেকে আরানগেসের শট ফিরিয়ে দেন সেজার।
৭৪তম মিনিটে সুযোগ এসেছিল জোর সামনে। হাল্কের ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারলেই গোল পেতে পারতেন এই স্ট্রাইকার। কিন্তু পারেননি, বেঁচে যায় চিলি।
সাত মিনিট পর নেইমারকে হতাশ করেন ব্রাভো। দানি আলভেসের ক্রস থেকে নেইমারের হেড ফিরিয়ে দেন তিনি।
দুই মিনিট পর আবার সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। এবারো ত্রাতা সদ্য বার্সেলোনায় যোগ দেয়া ব্রাভো। একজনকে কাটিয়ে ডি বক্স থেকে ডান পায়ের জোরালো শট নিয়েছিলেন হাল্ক। কিন্তু পরাস্ত করতে পারেননি চিলির গোলরকক্ষককে। তাই দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচটিই গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের ১০৩তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ এসেছিল হাল্কের সামনে। জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ স্ট্রাইকারের শট কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো।
শেষ দিকে আক্রমণের চেষ্টা না করে নিজেদের রক্ষণ সামলাতেই মনযোগ দেয় চিলি। তাদের সব খেলোয়াড়ই নিজেদের অর্ধে ছিল। একের পর এক আক্রমণ গড়লেও প্রতিপক্ষের রক্ষণ সীমায় গিয়ে আর পেরে উঠেনি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
তবে শেষ মিনিটে ব্রাজিলকে চমকে দিয়েছিল চিলি। সানচেসের পাস থেকে মুরিসিও পিনিইয়ার শট ক্রসবারে লেগে ফিরলে বেঁচে যায় ব্রাজিল।
অতিরিক্ত সময়েও কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
মন্তব্য চালু নেই